
মাহাবুবুর রহমান:: কক্সবাজারে ইউনিয়ন পর্যায়ে রোহিঙ্গাদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। ইতি মধ্যে বেশিরভাগ ইউনিয়ন থেকে জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে তালিকা তৈরি করে জমা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। এই তালিকায় পুরাতন এবং নতুন রোহিঙ্গাদের নাম দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তারা। এদিকে দীর্ঘদিন পরে হলেও গ্রাম পর্যায় থেকে রোহিঙ্গাদের তালিকা করার খবরে সন্তোষ প্রকাশ করেছে স্থানীয় সচেতন মহল। স্থানীয়দের দাবী দ্রæত গ্রাম পর্যায়ে ছড়িয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের তালিকা করে তাদের জাতীয় পরিচয় পত্র এবং পাসপোর্ট বাতিল করার হোক।
খুরুশকুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন বলেন, প্রায় ২ মাস আগে সরকারের একটি বিশেষ সংস্থার পক্ষ থেকে আমাদের ডেকে ইউনিয়ন পর্যায়ে রোহিঙ্গাদের তালিকা তৈরি করতে বলা হয়। সে অনুযায়ী আমরা প্রতিটি ওয়ার্ডের মেম্বারদের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের তালিকা তৈরি করেছি। আমাদের ইউনিয়ন থেকে প্রায় শতাধিক রোহিঙ্গার তালিকা ইতিমধ্যে জমা দেয়া হয়েছে। তিনি জানান, তালিকায় পুরাতন বা নতুন যে কোন রোহিঙ্গাদের নাম লেখা হয়েছে। এর মধ্যে বেশির ভাগই জাতীয় পরিচয় পত্র পেয়েছে। তবে খুবই গোপনীয়ভাবে কাজ করেছি আমরা।
খুরুশকুল ইউপির ৫ নং ওয়ার্ডের মেম্বার মোহাম্মদ সোহেল বলেন, অনেক দিন পর সরকার রোহিঙ্গাদের তালিকা চেয়েছে, আমরা সেই দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালন করেছি। আমি একজন জনপ্রতিনিধি হিসাবে চাইবো, গ্রাম পর্যায় থেকে সমস্ত রোহিঙ্গাদের তালিকা করে তারা যদি এনআইডি পেয়ে থাকে তা বাতিলের ব্যবস্থা করা হোক। ঝিলংজা ইউপি চেয়ারম্যান টিপু সুলতান বলেন, আমরা ইতি মধ্যে তালিকা জমা দিয়েছি। তবে তালিকায় কতজনের নাম আছে সেটা এখন প্রকাশ করা যাবে না। বা না দেখে বলা যাবে না। যেহেতু এগুলো খুবই স্পর্শকাতর বিষয় তাই সব কথা বলাও ঠিক না। তবে আমি ব্যাক্তিগত ভাবে খুবই খুশি সরকার অনেক দিন পর একটি কাজের মত কাজ করছে। এলাকা ভিত্তিক রোহিঙ্গাদের তালিকা করছে সেটা খুবই ভাল কাজ। তিনি জানান,শুধু আমাদের এলাকায় প্রতিটি ইউনিয়নে একই অবস্থা, ২০-২৫ বছর আগে আসা রোহিঙ্গারা এখন স্থানীয়দের চেয়ে বেশি প্রভাবশালী। তারা এখান থেকে বিয়ে করে ছেলে মেয়ে উচ্চ শিক্ষিত করে প্রতিটি জায়গায় বিচরণ করছে। একজন রোহিঙ্গা থেকে কয়েক শত রোহিঙ্গা বংশবিস্তার করেছে। এখনো তারা ক্যাম্পে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রক্ষা করে, তাদের বাড়িতে ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গারা আসা যাওয়া করে। একই সাথে অনেকে মাদক থেকে শুরু করে সব ধরনের অপরাধে জড়িত। তাই আমি দাবি করবো কিছু না হোক অন্তত সরকারি ভাবে একটি তালিকা করে সমস্ত রোহিঙ্গাদের সরকারি সুযোগ সুবিধা বন্ধ করে,তাদের ছেলেমেয়েরা যেন আর বাংলাদেশী নাগরিক হিসাবে দাবী করতে না পারে সেই ব্যবস্থা করা হোক। একই ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ড মৌলবী পাড়ার সমাজসেবক আলী আহামদ বলেন, কয়েক বছর আগে আমাদের এলাকায় বিশাল জমি কিনে বাড়ি করেছে নাশকতাসহ সাজাপ্রাপ্ত আসামী রোহিঙ্গা শফিক প্রকাশ মৌলবী শফিক। সে বর্তমানে পুরো এলাকাকে রোহিঙ্গাদের বিচরণভূমি বানিয়ে ফেলেছে। তার নেতৃত্বে বর্তমানে এখানে অসংখ্য রোহিঙ্গা আসছে,জমি কিনছে বাড়ি করছে। শুনেছি তার এক ছেলে জোবায়ের নাকি মেডিকেল কলেজেও পড়ে।
পিএমখালী ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নং ওয়ার্ডের মেম্বার নুরুল হুদা বলেন, আমি তালিকা জমা দিয়েছি প্রায় মাস কাছাকাছি হতে চলেছে তবে পুরু ইউনিয়নে এই তালিকায় কত হবে তা আমি সঠিক বলতে পারছিনা,ধারনা করছি ৪০০ থেকে ৫০০ হতে পারে। যেহেতু আমার ওয়ার্ড থেকেই ৫০ জনের বেশি রোহিঙ্গার তালিকা তৈরি করে জমা দিয়েছি। তিনি জানান,আমার ওয়ার্ডের দক্ষিণ ডিককুল এলাকায় কিছুদিন আগে জমি কিনে বাড়ি করেছে রোহিঙ্গা নারী মর্জিনা বেগম। সেই রোহিঙ্গা এক বাড়ির বিরুদ্ধে প্রতিদিন ২/৩ টা অভিযোগ আসে,তারাএখন প্রকাশ্য ইয়াবা ব্যবসা করছে এলাকার পুরু পরিবেশ খারাপ করে ফেলছে। একই সাথে নয়াপাড়া এলাকায় আবদুল গাফফার,আবু তাহের সহ অসংখ্য পুরাতন রোহিঙ্গা বড় বড় বাড়ি করেছে। তাদের অনেকের বাড়ি থেকে ইয়াবার চালান আটক হয়েছে। এদিকে কক্সবাজার রোহিঙ্গা প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর জানান, রোহিঙ্গাদের কারনে এখন আমরা নিজদেশে পরবাসী হওয়ার অবস্থা। এখন যদি তাদের কঠোর ভাবে প্রতিরোধ করা না যায় তাহলে এই দেশ এক সময় ফিলিস্তিন হতে পারে। তাই সরকারের কাছে আমাদের জোর দাবি,কক্সবাজার পৌর এলাকা সহ প্রতিটি ইউনিয়নে কঠোর গোপনীয়তায় পুরাতন বা নতুন আসা রোহিঙ্গাদের তালিকা করে তাদের জাতীয় পরিচয় পত্র বাতিল সহ কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। একই সাথে স্কুল কলেজের সার্টিফিকেটে রোহিঙ্গা ছেলেমেয়েদের নামের পাশে রোহিঙ্গা শব্ধটি লেখার দাবী জানাচ্ছি। যাতে তারা ভবিষ্যতে সরকারি বেসরকারী চাকরীতে ঢুকে যেতে না পারে। রোহিঙ্গা প্রতিরোধ কমিটির উপদেস্টা জেলা আওয়ামীলীগ নেতা এম এ মনজুর বলেন,রোহিঙ্গা প্রশ্নে আর ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই, তারা এখন আমাদের জন্য গলার কাটা হয়ে দাড়িয়েছে। তবে রোহিঙ্গাদের এত বেপরোয়া হওয়ার পেছনে স্থানীয়রা বেশি দায়ি বলে মন্তব্য করেন তিনি। সুত্র: দৈনিক কক্সবাজার

পাঠকের মতামত