নিউজ ডেস্ক::
বরিশালের আগৈলঝাড়ায় দায়িত্ব পালনের সময় বরগুনা সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা তারিক সালমনের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃতের মামলা হলেও তার কোনো দোষ ছিল না বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম। ইউএনওর বিরুদ্ধে ‘হয়রানিমূলক’ মামলার তদন্তে পাঁচ সদস্যের কমিটি করার কথাও জানান তিনি। গত ২২ জুলাই এই কমিটি গঠন করা হয়েছে।
সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বৈঠক শেষে নিয়মিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে এই তথ্য জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। এই বৈঠকে অন্যান্য অনেক বিষয়ের পাশাপাশি ইউএনও সালমনের বিরুদ্ধে করার মামলা এবং তাকে জামিন নাকচ করে প্রথমে কারাগারে পাঠানো ও পরে জামিন মঞ্জুর করার বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হয়।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, ‘মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটিতে অন্যদের মধ্যে রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একজন জয়েন্ট সেক্রেটারি, আইন মন্ত্রণালয়ের একজন জয়েন্ট সেক্রেটারি আর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দুইবিভাগ থেকে দুইজন জয়েন্টে সেক্রেটারি।’
এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘এই তদন্ত কমিটি ১৫ দিনের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন দেবে। এই কমিটি সবকিছু নিয়েই তদন্ত করবে। ইউএনওকে কেন গ্রেপ্তার করা হল। বা এখানে কোনো আইনি ব্যত্যয় ঘটেছে কি না- সবকিছুই এই তদন্ত কমিটি দেখবে।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে শফিউল আলম বলেন, ‘এই ঘটনায় সংশ্লিষ্ট জেলার ডিসি এবং বিভাগীয় কমিশনারের গাফিলতি ছিল কিনা সেটিও এই তদন্তে উঠে আসবে। তদন্ত রিপোর্টে যদি কারো বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ প্রমাণিত হয় তাহলে তার বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
ডিসি এবং বিভাগীয় কমিশনার তারেক সালমানকে দোষী সাব্যস্ত করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে চিঠি দিয়েছিল- ওই চিঠির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘আমরা ওই চিঠি পেয়েছিলাম। আমরা মনে করেছি। এই ঘটনায় ইউএনওর কোনো দোষ ছিল না। একারণেই আমরা ওই চিঠি আমলে নথিভুক্ত করে নিয়েছি।’
ইউএনও তারিক সালমন বরিশালের আগৈলঝাড়ায় দায়িত্ব পালনের সময় স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে ছাপানো আমন্ত্রণপত্রে বঙ্গবন্ধুর বিকৃত ছবি ব্যবহার করেছেন-এমন অভিযোগে মামলা করেন বরিশাল আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও বরিশাল আওয়ামী লীগের সে সময়ের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ ওবায়েদ উল্লাহ সাজু। এই মামলায় গত ১৯ জুলাই তারিক সালমানকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বরিশাল মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতের বিচারক আলী হোসাইন। পরে অবশ্য আদেশ পাল্টে তাকে জামিন দেয়া হয়।
যে ছবি নিয়ে এত হুলস্থুল সেটি গত ১৭ মার্চ আগৈলঝাড়ায় বঙ্গবন্ধুর জন্মদিকে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় এঁকে পুরস্কার পেয়েছিল শিশু অদ্রিজা কর। অথচ এই ছবি ব্যবহারের কারণে ইউএনওকে কারণ দর্শানো নোটিশ দিয়েছিলেন জেলা প্রশাসক গাজী মো. সাইফুজ্জামান।
তারিক সালমন জামিন পাওয়ার পর পুরো বিষয়টা সামনে চলে আসে এবং এই মামলায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর বাদী সাজুকে আওয়ামী লীগ থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। আর রবিবার মামলা তুলে নেয়া হয়।
তারিক সালমনকে নিরাপত্তা নিতে ব্যর্থ হওয়ায় কপাল পুড়েছে তার সাবেক কর্মস্থল বরিশালের জেলা প্রশাসক গাজী মো, সাইফুজ্জামান এবং বর্তমান কর্মস্থল বরগুনার জেলা প্রশাসক মহা. বশিরুল আলমের। তাদেরকে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে প্রত্যাহার করে দুই জেলায় নতুন প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছে সরকার।
পাঠকের মতামত