একই শ্রষ্টার সৃষ্টি ,কোন না কোন মায়ের সন্তান,কোন এক বাবা তাকে জন্ম দিয়েছিলেন চোখে মুখে আনন্দ নিয়ে, আর তেমনি কোন এক মা তাকে দশ মাস দশ দিন গর্ভে ধারন করেছিলেন মাতৃত্বের আশায়, সুন্দর একটি স্বপ্ন নিয়ে নিজের রক্ত মাংস খাইয়ে । তখন হয়ত বুঝতেই পারেননি ,যে আসছে সে তাদের স্বপ্ন ভংগ করে দিয়ে এক পৃথিবীর সমান কষ্ট নিয়ে তাকে বয়ে বেড়াতে হবে ,সারাটা জীবন।
হে আমি যার কথা বলছি সে হাঁটতেও পারেনা ,কথাও বলতে পারে না,তার এক স্থান হতে অন্য স্থানে যেতে যে কি পরিমান সময় লাগে আর কি নিদারুন কষ্ট হয় তা দেখলে যেই কোন মানুষের চোখে জল চলে আসবে। বলতে পারেন পুরো শরীলটা কে সে রাস্তায় টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যায়।
গতকাল অর্থাত ৯.১১.১৬ ইং তারিখে আমার ডিউটি ছিলো চট্টগ্রামের জিইসি মোড়ে । দেখি কনষ্টেবল সিগন্যালে ছারার পরও একপাশে গাড়ি চলছে না আর চালক একের পর এক হর্ন দিয়েই যাচ্ছিল, আমি সামনে গিয়ে দেখি একটা আস্ত মাংসপিন্ডের মত কেউ একজন হাত পা নাড়ছে কারন সে রাস্তা পার হবার চেষ্টা করছে এবং বেশ কিছু পথ একা পাড়িও দিয়েছে ,কিন্তু সামনে যে আরো অনেক পথ বাকী। দেখেই বুঝতে পারছিলাম তার যেতে খুব কষ্ট হচ্ছে । আমার ডান হাতে তেমন কাজ করার শক্তি নাই ,ভারী তেমন কিছু নিতেও পারিনা,তবুও নিজেকে আর সামলে রাখতে পারলাম না ,সে তো উঠবেই না তবুও এক রকম জোর করেই আলগা করে এইপারে নিয়ে এলাম।
আমি বোবাদের ঈশারার কথা বুঝতে পারি তাই তাকে জিজ্ঞাসা করলাম তার হুইল চেয়ার কই ?সে বল্লো গত কয়েকদিন আগে সে ভিক্ষা করতে আসার সময় একটি সিএনজি তাকে ধাক্কা দিলে তার হুইল চেয়ারটি ভেংগে যায়,চেষ্টা করেও তা আর মেরামত করতে পারেনি । কয়দিন ভিক্ষা করে কিছু টাকা জোগার করেছে আর সামান্য কিছু হলেই হয়।
তাকে চিনে এমন একজন বল্লো স্যার সে আমাদের বস্তিতে থাকে তার বৌ ও আছে সন্তান সম্ভবা। তার বৌ এখন তার শ্বশুর বাড়িতে ,তার সাথে কথা বল্লেই ভালো হবে ,তাকে ঈশারায় মোবাইল টা দিয়ে বল্লাম বৌ কে ফোন করতে ,সে তারাতারি ফোনট নিয়ে নাম্বার টিপে কথা বলা শুরু করলো ,তার কথায় তার বৌ কি বুঝলো জানিনা ,কারন বোবাদের ভাষা তো না বুঝলেও ঈশারায় অনুমান করা যায় কিন্তু তার বৌ তো তার ঈশারও দেখেনি ,তবুও মনে হলো সব বুঝে গেছে ,বল্লো স্যার কয়েকদিন আগে যে এক্সিডেন্ট করেছে সেই কথা ,আর বল্লো সামান্য কিছু টাকা হলে সে আর একটা চেয়ার কিনতে পারবে , সে আমাদের মতো কথা বলতে পারে। আমি তার কাছ থেকে একটা বিকাশ নাম্বার নিয়ে আমার সাধ্য মতে চেষ্টা করলাম যেন একটা নতুন হুইল চেয়ার কিনে সে আগের মতো চলাফেরা করতে পারে। তারপর সামান্য কিছু খাওয়ানোর পরে বল্লাম আল্লাহ হাফেজ এবংচেয়ার কিনে যেন আমাকে দেখায়।
রাস্তায় চলাচের পথে এমন বিপদগ্রস্ত লোক যদি আপনার সামনে পড়ে তাহলে সাধ্য অনুপাতে তাকে সাহায্য করবেন, কারন আজ তার যেই অবস্থা তা আপনার আমার ও হতে পারতো।
জন্মের আগে আমরা তো সবাই নিস্পাপ থাকি ,তবুও শ্রষ্টা তাঁর সৃষ্টিতে কত রহস্য রেখেছেন তা তিনিই ভালো বলতে পারবেন,তাই আসুন আমরা সকলে তার সৃষ্টিতে সন্তুষ্টিসাধন করি এবং অসহায়দের সাধ্য মতে সহায়তা প্রদান করি।
স্রষ্টা তাঁর সৃষ্টিতেই স্তর বিন্যাস করেছেন,কেউ ধনী কেউ গরীব ,কেউ সুস্থ্য কেউ অসুস্থ্য । আচ্ছা ধরুন তো সবাই যদি মালিক হতাম শ্রমিক হতো কে? তবে একটা জায়গাতে সবাই এক তা হলো “মানুষ”।
তাই সবার আগে আমি আপনি মানুষ তার পর অন্য সব পরিচয়,তাই যে যাহায় করিনা কেন কোন অবস্থাতেই মানবতা মানবিকতা মানুষের প্রতি দয়া ভালোবাসাটার যেন কমতি না হয়।এক বার চোখ বন্ধ করে দেখুন তো আপনার টাকা পয়সা দালান কোঠা ক্ষমতা কিছু দেখা যায় নাকি? তাই আসুন সবাই মিলে বাঁচি।
ফেইসবুক থেকে সংগৃহীত
পাঠকের মতামত