নিউজ ডেস্ক;:
বগুড়ায় ধর্ষণের পর মা-মেয়েকে নির্যাতনের ঘটনায় ফুঁসছে সারাদেশ৷ এদিকে ধর্ষিতা ও তার মাকে নির্যাতনের ঘটনায় ধর্ষক তুফান সরকারের সঙ্গে সমানভাবে উচ্চারিত হচ্ছে তার স্ত্রীর বড় বোন মার্জিয়া হাসান রুমকির নামও।
ধর্ষিতার বক্তব্য থেকে জানা যায়, ধর্ষণের পর স্থানীয় এই নারী ওয়ার্ড কাউন্সিলরই বিচারের কথা বলে মা ও মেয়েকে তুলে নিয়ে নির্যাতন করে।
ধর্ষিতা তরুণী বলেন, এ বছর এসএসসি পাস করলেও কোনো কলেজে ভর্তি হতে পারিনি। এ নিয়ে দুশ্চিন্তার মধ্যে এক প্রতিবেশী তুফান সরকারের মাধ্যমে সরকারি কলেজে ভর্তি হওয়ার প্রস্তাব দেয়। এতে আমি আগ্রহ প্রকাশ করি। এরপর ভর্তির কথা বলে গত ১৭ জুলাই তুফান আমাকে তার বাসায় ডেকে নেয়। এরপর বাসার একটি রুমে আমাকে আটকে রেখে কয়েকবার ধর্ষণ করে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে আমি অসুস্থ হয়ে পড়লে আমাকে ডাক্তার দেখিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়।
এরপর ওই ছাত্রী ও তার মাকে সালিসের কথা বলে তুলে নিয়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করা হয়। রুমকির অফিসে তাদের প্রথম দফা নির্যাতনের পর দ্বিতীয় দফায় নির্যাতন করা হয় রুমকির বাসায়। সেখানে তুফান সরকারের স্ত্রী আশা গুণ্ডা নিয়ে তাদের লেলিয়ে দেন মা ও মেয়ের ওপর। এরপর তুফানের ক্যাডাররা দুজনকে স্টিলের পাইপ দিয়ে পেটাতে থাকে।
ধর্ষিতা বলেন, তাদের পা ধরে বাঁচার আকুতি জানিয়েছি। কিন্তু ওরা কোনো কথাই শুনছিল না। এরপর রুমকি, আশা ও বেশ ক’জন মানুষ মিলে আমাদের মাথার চুল কেটে ছোট করে দেয়। পরে নাপিত ডেকে এনে মাথা ন্যাড়া করে দেয়। সবশেষে ওরা আমাদের একটি রিকশায় তুলে বগুড়া শহর ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। অন্যথায় এসিড দিয়ে ঝলসে দেয়ারও হুমকি দেয়।
তরুণী বলেন, ‘ওরা আমার ইজ্জতও কেড়ে নিল, আবার সালিসের নামে আমার ও আমার মার মাথা ন্যাড়া করে দিল। আবার রুমকি আপা (তুফানের স্ত্রীর বোন) বলেছে, তোদের মারলে আমার কিছু হবে না। আমি তিনটি ওয়ার্ডের কমিশনার। পুলিশকে টাকা খাওয়াইলেই মামলা ডিসমিস হয়ে যাবে।’
হাসপাতালে বেডে শুয়ে চিৎকার করে কাঁদছিলেন আর এভাবেই নিজের ও মায়ের ওপর তুফান পরিবারের বর্বরতার কথা বর্ণনা করছিলেন ধর্ষণের শিকার ওই ছাত্রী।
প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার বিকেলে কলেজে ভর্তি ইচ্ছুক ছাত্রীকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করেন বগুড়ার শহর শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক তুফান সরকার। বিষয়টি ধামাচাপা দিতে তিনি ও তার সহযোগীরা দলীয় ক্যাডার ও এক নারী কাউন্সিলরকে ধর্ষণের শিকার মেয়েটির পেছনে লেলিয়ে দেন। চার ঘণ্টা ধরে তারা ছাত্রী ও তার মায়ের ওপর নির্যাতন চালান। এরপর দুজনেরই মাথা ন্যাড়া করে দেন।
এ ঘটনায় কিশোরীর মা বাদী হয়ে শুক্রবার রাতে শ্রমিক লীগ নেতা তুফান সরকার, তার স্ত্রী আশা সরকার, আশা সরকারের বড় বোন বগুড়া পৌরসভার সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিলর মার্জিয়া আক্তারসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও নির্যাতনের অভিযোগে দুটি মামলা করেন।
পাঠকের মতামত