অস্ত্র চোরাচালানের ট্রানজিট পয়েন্টে পরিণত হয়েছে কক্সবাজার। মিয়ানমার থেকে আসা এসব অস্ত্র কক্সবাজার-চট্টগ্রাম হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে দেশের বিভিন্ন জায়গায়। অবৈধ এ অস্ত্র ব্যবসায় জড়িত বাংলাদেশি ও মিয়ানমারের কমপক্ষে ১৬ নাগরিক। যারা মিয়ানমারভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও)-এর বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মী।
র্যাব-৭-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মিফতাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘শহীদ হামজা ব্রিগেডের অন্যতম অস্ত্র সরবরাহকারী মোজাহেরকে গ্রেফতারের পর অস্ত্র চোরাচালানের বিষয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, একে সিরিজের অস্ত্রগুলো চীন-ভারত-মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী বিভিন্ন অবৈধ অস্ত্র কারখানায় তৈরি হয়; যা মিয়ানমার হয়ে বাংলাদেশে আসে।’ বিগত সময়ে চট্টগ্রামে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নেতৃত্ব দেন মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তা বর্তমানে চট্টগ্রাম জেলা পিবিআইর পরিদর্শক সন্তোষ চাকমা। তিনি বলেন, হাটহাজারীর আমানবাজার, নগরের খোয়াজনগর জঙ্গি আস্তানা ও সদরঘাটে জঙ্গিদের ছিনতাইকালে রেখে যাওয়া ‘একে’ সিরিজের কিছু অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। এসব ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া জঙ্গিরা জানায় অস্ত্রগুলো অবৈধ পথে মিয়ানমার থেকে কক্সবাজার ও বান্দরবানে আসে।’
অনুসন্ধানে জানা যায়, কক্সবাজার-চট্টগ্রাম রুটে অস্ত্র চোরাচালানে জড়িত বাংলাদেশি ও মিয়ানমারের কমপক্ষে ১৬ নাগরিক। তাদের মধ্যে অস্ত্র চোরাচালানের মূল সমন্বয়ক হিসেবে আছেন মিয়ানমারের মংডুর বুজিগাঁও এলাকার আরএসও নেতা মাস্টার আইয়ুব। তিনিই বাংলাদেশে অস্ত্র পাঠানোসহ সবকিছু তদারকি করেন। তিনি টেকনাফের হ্নীলার মুছনী শরণার্থী ক্যাম্পে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। তাকে এ কাজে সহযোগিতা করেন রোহিঙ্গা নাগরিক মো. ইসমাইল, মো. হামিদুল্লাহ, মো. জুবায়ের, নুর খান এবং বাংলাদেশি নাগরিক উখিয়ার হাজী ফজল আহমেদ, রফিক আহমেদ, লালু ডাক্তার, নুর মোহাম্মদ। মিয়ানমার থেকে অস্ত্রের চালান দেশে আনার পর হেফাজত ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করেন রুহুল আমিন, মো. আবদুল্লাহ, জমির উল্লাহ ওরফে জামির। মিয়ানমার সীমান্ত থেকে টেকনাফে অস্ত্রের চালান আনার দায়িত্ব পালন করেন হাফেজ জালাল, হাফেজ নয়ন ও ওসমান। তারা অস্ত্রের চালানের জন্য নাফ নদে জেলে ছদ্মবেশে যান। মাছ ধরার নৌকায় করে মাছের মধ্যে রাতের আঁধারে অস্ত্রগুলো আনা হয় টেকনাফের শাপলাপুরসহ কমপক্ষে তিনটি স্পটে। অস্ত্রগুলো রাখা হয় কুতুব আলী ক্যাম্পের আশপাশ এলাকায়। শরণার্থী শিবিরে ও তার আশপাশ এলাকায় অস্ত্রের চালান আনার পর তা তদারকির দায়িত্ব পালন করেন আবদুর রশিদ আবু কাদের। র্যাব অধিনায়ক মিফতাহ উদ্দিন আহমেদ জানান, চীন-ভারত-মিয়ানমার সীমান্ত থেকে একেকটি অস্ত্র ২ লাখ থেকে ২ লাখ ১০ হাজার টাকায় কেনা হয়। পরে তা দেশে ৩ লাখ থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকায় বিক্রি করেন অস্ত্র ব্যবসায়ীরা। মূলত নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করে বিভিন্ন পণ্যের আড়ালে ও ব্যাগে অস্ত্রগুলো এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়। জানা যায়, গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে বাঁশখালীর লটমণি পাহাড়ি এলাকায় শহীদ হামজা ব্রিগেডের প্রশিক্ষণ আস্তানা থেকে তিনটি একে-২২ রাইফেলসহ বিপুল অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। একই বছরের এপ্রিলে নগরীর পাঁচলাইশ থানার কসমোপলিটন এলাকার একটি বাসা থেকে উদ্ধার করা হয় আরও ৫টি একে-২২ রাইফেল। একই বছর সাতকানিয়া ও সন্দ্বীপ থেকে একে-২২ রাইফেল উদ্ধার করা হয়। ২৯ জানুয়ারি চন্দনাইশের গাছবাড়িয়া এলাকায় কক্সবাজার থেকে আসা একটি বাসে তল্লাশি চালিয়ে ৩টি অস্ত্রসহ তিন যুবককে গ্রেফতার করে পুলিশ।
সূত্র-বিডি প্রতিদিন।
পাঠকের মতামত