প্রকাশিত: ১৯/০৮/২০১৭ ৮:১৫ এএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ২:৫৪ পিএম

উখিয়া নিউজ ডেস্ক::
বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। তাদের কারণে কক্সবাজারের আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটছে। তার ওপর ফের রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের আশঙ্কায় বাংলাদেশ সীমান্তে বিজিবি টহল জোরদার ও নজরদারি বাড়িয়েছে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষীরা। গত এক সপ্তাহ ধরে মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে নতুন করে সেদেশের সেনা মোতায়েন করায় এ আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তবে বাংলাদেশ রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের বিষয়টি উড়িয়ে দিয়ে সীমান্তে স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করার কথা জানিয়েছে বিজিবি।

জানা গেছে, ১৯৭৮ সালে পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার থেকে শরণার্থী হিসেবে রোহিঙ্গারা এদেশে আসে। এর পর ১৯৯১ সালে আসে ব্যাপক হারে। ৯১ সালের পর নানা সময়ে দফায় দফায় আসতে থাকে রোহিঙ্গারা। সব শেষে গত বছরের অক্টোবরের পর থেকে আবারও রোহিঙ্গাদের আগমনের হার বেড়ে যায়। কক্সবাজারে টেকনাফের নয়াপাড়া ও উখিয়ার কুতুপালংয়ে অবস্থিত ২টি শরণার্থী শিবিরে সরকারি হিসেবে ৩২ হাজার শরণার্থী থাকলেও কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন স্থানে অবৈধভাবে প্রায় ৬ লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করার কথা জানান রোহিঙ্গা প্রতিরোধ কমিটি। প্রথম দিকে রোহিঙ্গাদের তাদের দেশে প্রত্যাবাসন করা হলেও নানা কারণে ২০০৫ সালের পর থেকে প্রত্যাবাসন বন্ধ রয়েছে। গত বছরের অক্টোবরের পর থেকে প্রায় ৭৫ হাজার রোহিঙ্গা এ দেশে প্রবেশ করে বলে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা জানায়।

একদিকে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে এ বিশাল রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর চাপ পড়ার কারণে দেশের সামাজিক অর্থনৈতিকসহ নানা ক্ষতি হচ্ছে বলে অভিমত রোহিঙ্গা প্রতিরোধ কমিটির।

প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা প্রতিদিন নানা অপরাধ সংঘটিত করছে। আমাদের দেশের পরিবেশ ধ্বংস করে দিচ্ছে।

এদিকে বিভিন্ন সূত্র ও বাংলাদেশে অবস্থানকারী রোহিঙ্গারা জানায়, মিয়ানমার সেনাবাহিনী সীমান্তের রাখাইন প্রদেশের (আরাকান প্রদেশ) আকিয়াব জেলার মংডু, বুচিডং ও রাচিডংসহ কয়েকটি এলাকায় গত কিছুদিন ধরে সেনা অভিযান বাড়িয়েছে। ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সেনা মোতায়েন করায় স্থানীয় লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে বলে উখিয়ার কুতুপালং এলাকায় অবস্থানকারী রোহিঙ্গা সৈয়দ আলম ও আতিক উল্লাহ জানান। তারা তাদের ওপারে থাকা আত্মীয়দের বরাদ দিয়ে জানান, প্রতিদিন রোহিঙ্গাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে জঙ্গিবিরোধী অভিযানের নামে তল্লাশি করা হচ্ছে। এতে করে আরাকান রাজ্যে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের মাঝে ভয়-ভীতি দেখা দিয়েছে। জঙ্গিবিরোধী অভিযানে গত এক সপ্তাহে অন্তত দুশতাধিক রোহিঙ্গাকে আটক করে নিয়ে গেছে বলেও জানান তারা।

কক্সবাজারের টেকনাফের নয়াপাড়া অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বসবাসরত রোহিঙ্গা মোহাম্মদ আমান উল্লাহ বলেন, আমি মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে থাকা আমার আত্মীয়স্বজনদের কাছ থেকে জেনেছি সীমান্তে ৭ শতাধিক সেনাসদস্য মোতায়েন করেছে মিয়ানমার সরকার। তাদের প্রত্যেকের হাতে ভারী অস্ত্র রয়েছে। রাখাইন রাজ্যের উগ্রপন্থী সংগঠন ‘আল-ইয়াকিন’ ও ‘আরসা’র বিরুদ্ধে অভিযানের নামে সাধারণ মানুষের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে। এতে করে আরও রোহিঙ্গা আসতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

তবে উখিয়ার কুতুপালং এলাকার ইউপি সদস্য বখতিয়ার আহমদ ও টেকনাফ পৌরসভার প্যানেল মেয়র মৌলানা মুজিব জানান, গত এক সপ্তাহে উখিয়া টেকনাফ দিয়ে কোনো রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটেনি।

বিজিবির টেকনাফ ২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এস এম আরিফুল ইসলাম ও কক্সবাজার ৩৪ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মঞ্জুরুল হাসান খান জানান, প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার সীমান্তে অতিরিক্ত সেনা সমাবেশের কারণে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের আশঙ্কার বিষয়টি ধরে নিয়ে বাংলাদেশ সীমান্তে বিজিবি সতর্কতামূলক নজরদারি ও টহল জোরদার করেছে।

মিয়ানমারের সেনাবাহিনী সেদেশের সীমান্ত অঞ্চলে সন্ত্রাসীদের ধরার জন্য অভিযান চালাচ্ছে বলে জানিয়ে লে. কর্নেল এস এম আরিফুল ইসলাম বলেন, সীমান্তের ওপারে খবর নিয়ে যতটুকু জেনেছি, সেনা সমাবেশ ঘটিয়েছে মূলত সন্ত্রাসীদের ধরার জন্য। তাদের টার্গেট সাধারণ রোহিঙ্গারা নয়, অপরাধ সংঘটনকারী সন্ত্রাসীরা।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার ড. একে এম ইকবাল হোসেন জানান, কক্সবাজারে চুরি, ডাকাতি সাগরে দস্যুতাসহ নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িত রোহিঙ্গারা। তার ওপর যদি আরও রোহিঙ্গা আসে তা হলে আইনশৃঙ্খলার আরও অবনতি ঘটবে।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বলেন, বাংলাদেশ সব সময় প্রতিবেশীদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখতে চায়। তাই আমরা মনে করি মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের ভালো সম্পর্কই থাকবে। তার পরও দেশের নিরাপত্তার বিষয়ে অবশ্যয় আমরা সর্তক থাকব। সুত্র : দৈনিক আমাদরে সময়

পাঠকের মতামত