প্রকাশিত: ২৪/০৮/২০১৭ ৭:৩৬ এএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ২:৩৯ পিএম

উখিয়া নিউজ ডেস্ক::
প্রায় প্রতিদিনই বাংলাদেশে ঢুকছে রোহিঙ্গারা। অনেকটা বানের স্রোতের মতো আসছে তারা। যদিও সরকারের তরফে সীমান্তে সর্বোচ্চ সতর্কতা রয়েছে। নজরদারি ও টহল বাড়ানো হয়েছে। তারপরও রোহিঙ্গা স্রোত থামছে না। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অবৈধ বা আনডকুমেন্টেড মিয়ানমার নাগরিকদের বিষয়ে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণে আজ বৈঠকে বসছে এ সংক্রান্ত জাতীয় টাস্কফোর্স। বৈঠকটি হবে কক্সবাজারে। এরই মধ্যে কক্সবাজার পৌঁছেছেন পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের ৩ সচিবসহ টাস্কফোর্সের সদস্যরা। তারা গতকাল রোহিঙ্গা ক্যাম্পসহ আশপাশের এলাকা পরিদর্শন করেছেন। সরজমিন তাদের অবস্থা দেখেছেন। সমপ্রতি আইওএম’র এক জরিপে গত অক্টোবর থেকে প্রায় ৮৭ হাজার নতুন রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে বলে তথ্য ওঠে এসেছে। জরিপ বিষয়ে ‘বাংলাদেশ: নীডস্‌ অ্যান্ড পপুলেশন মনিটরিং: আন ডকুমেন্টেড মিয়ানমার ন্যাশনালস ইন টেকনাফ অ্যান্ড উখিয়া, কক্সবাজার’ শীর্ষক একটি রিপোর্টও প্রকাশ করেছে আইওএম। বিষয়টি সরকারের দায়িত্বশীল পর্যায়েও অবহিত করেছে তারা। গতকাল মানবজমিনের সঙ্গে আলাপে এক কর্মকর্তা বলেন, ফ্রেশ বা নতুন রোহিঙ্গাদের সংখ্যা এতদিন ছিল ৭৬ হাজার। জাতিসংঘ এবং আইওএম’র তরফে সেটাই বলা হতো। গত কয়েক মাসে নতুন করে ১১ হাজার রোহিঙ্গা ঢুকেছে জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, এখন সেই সংখ্যা ৮৭ হাজারে পৌঁছেছে। আইওএম এর এ তথ্য ‘অমূলক’ হবে না বলে মনে করেন সরকারের দায়িত্বশীল ওই কর্মকর্তা। টাস্কফোর্সের বৈঠক উপলক্ষে কক্সবাজারে থাকা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তাও এমন তথ্য পাওয়ার কথা স্বীকার করেন। বলেন, রাখাইনে অস্থিরতা লেগেই আছে। আর এর প্রভাব পড়ছে সীমান্ত লাঘোয়া বাংলাদেশে। নানা কায়দায় রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে ঢুকছে স্বীকার করে ওই কর্মকর্তা বলেন, টাস্কফোর্সের সদস্যরা গতকাল বিভিন্ন এলাকা ঘুরেছেন। আনডকুমেন্টেড মিয়ানমার নাগরিক (নতুন এবং পুরনোদের) অবস্থা তারা সরজমিনে দেখেছেন। কাল (আজ) এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ কি হবে তা-ই মূলত আজকের বৈঠকে আলোচনা হবে বলে নিশ্চিত করেন ওই কর্মকর্তা। কর্মকর্তাদ্বয়ের সরবরাহ করা তথ্য মতে, কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলায় মিয়ানমারের ১ লাখ ৬৪ হাজার অনিবন্ধিত নাগরিক অবস্থান করছে। এদের উল্লেখযোগ্য অংশ দীর্ঘ সময় ধরে ওই এলাকায় থাকলেও গত অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর হাজার হাজার নতুন রোহিঙ্গা এসেছে। জানুয়ারিতে রোহিঙ্গা আগমনের সংখ্যা কিছুটা কমলেও ফেব্রুয়ারি শেষ দিকে এটি বেড়েছে। মার্চ, এপ্রিল, মে জুনেও রোহিঙ্গা প্রবেশ করেছে বিক্ষিপ্তভাবে। কিন্তু ফের জুলাইতে এক সঙ্গে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে বলে তারা দাবি করেন। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) ঢাকা অফিসের তত্ত্বাবধানে ওই জরিপ হয় জানিয়ে এক কর্মকর্তা বলেন, ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত মাঠপর্যায়ের ওই জরিপ হয়। জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা ও আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থার সহযোগিতা আইওএম জরিপটি করে। জরিপের আওতায় ছিল উখিয়া ও টেকনাফের ৫৭টি স্থানের ৩২ হাজার পরিবার। এর মধ্যে ২২ হাজার পরিবারের বাস বালুখালি, কুতুপালং ও বাহারছড়ার অস্থায়ী শিবিরে। জরিপের যে তথ্য প্রকাশ পেয়েছে তাতে দেখা গেছে অক্টোবরের পর বাংলাদেশে আসা ৮৭ হাজার রোহিঙ্গার মধ্যে ৫২ শতাংশ নারী ও শিশু। জুলাই মাসে যে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকেছে এর মধ্যে বালুখালিতে ৪৪০টি পরিবার এবং কুতুপালংয়ে ৬৫০টি পরিবার। জরিপে এ-ও ওঠে এসেছে, অন্যান্য সময় লেদা’র অস্থায়ী শিবিরে মিয়ানমারের অনিবন্ধিত নাগরিকদের উপস্থিতি বেশি হলেও সামপ্রতিক সময়ে বিশেষ করে গত কয়েক মাসে এটি রহস্যজনক কারণে কমেছে। স্থানীয়দের বরাতে বলা হয়েছে, এতদিন লেদা ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে ব্যবহৃত হলেও স্থান সংকুলানের কারণে লোকজন বাধ্য হয়ে সেখান থেকে আশপাশের গ্রামে ছড়িয়ে পড়ছে। নবাগত রোহিঙ্গাদের উল্লেখযোগ্য অংশ রাখাইনের মংডু শহরের বুথিডং থেকে এসেছে। সেখানে ভূমিমাইন বিস্ফোরণ, সেনাবাহিনীর অভিযান, সহিংসতা, খাদ্যাভাব ও জীবিকার তাড়নায় তারা বাংলাদেশে আসছে বলে জরিপে ওঠে এসেছে।
আনান কমিশনের রিপোর্টে নজর রাখছে ঢাকা: এদিকে রাখাইন পরিস্থিতি বিশেষ করে সংঘাতময় ওই এলাকায় শান্তি ও স্বস্তি ফেরানো বিষয়ে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক কমিশনের রিপোর্টে নজর রাখছে ঢাকা। আজ পরামর্শমূলক ওই কমিশনের চূড়ান্ত প্রতিবেদন মিয়ানমার সরকারের কাছে জমা দেয়ার কথা রয়েছে। বাংলাদেশসহ সারা বিশ্ব আগ্রহের সঙ্গে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছে জানিয়ে ঢাকার এক কর্মকর্তা বলেন, কফি আনানের নেতৃত্বে গঠিত কমিশন রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে দীর্ঘ দিন ধরে কাজ করছে। আশা করি তাদের রিপোর্টে এ নিয়ে বিস্তারিত থাকবে। ঢাকা এ সমস্যার একটি স্থায়ী সমাধান চায় জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, রিপোর্টে সমাধানমূলক সুপারিশ থাকবে বলে আমরা আশা করি। উল্লেখ্য, গত মার্চে আনান কমিশন অন্তর্বর্তীকালীন একটি রিপোর্টে প্রকাশ করে। তাতে বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় সমস্যাটির সমাধানের সুপারিশ ছিল। সমস্যাটির সমাধানে সহায়তায় বাংলাদেশ বরাবরই ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়ে আসছে জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, রাখাইন কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ঘাসান সালামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল এ নিয়ে আলোচনায় ঢাকা সফর করেন। তারাও দেখেছেন বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে কিভাবে রোহিঙ্গা সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে। বর্তমানে তিন লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা এদেশে অবস্থান করছে। রাখাইন প্রদেশের বাসিন্দা রোহিঙ্গাদের কোনো নাগরিকত্ব নেই এবং তারা সামাজিক কোনো সুবিধাও পায় না। ১৯৮০’র দশকে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে দলে দলে আসা শুরু করে। এরপর থেকে রাখাইনে নিয়মিতভাবেই সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। রোহিঙ্গাদের জাতিগতভাবে নির্মূলে রাষ্ট্রীয় মদদে তাদের ওপর নির্যাতন চলছে।
সরকারি শুমারি প্রায় শেষ; রিপোর্ট প্রকাশের অপেক্ষা: এদিকে বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য মতে, আনডকুমেন্টেড মিয়ানমার নাগরিকদের বিষয়ে প্রকৃত তথ্য পেতে একটি জরিপ করছে সরকার। রোহিঙ্গাশুমারি বলে খ্যাত ওই জরিপে বিভিন্ন সংস্থা সহায়তা করছে। এটি প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এ নিয়ে আজকের টাস্কফোর্সের বৈঠকে আলোচনা হবে বলেও জানা গেছে।
বৈশ্বিক সংস্থাগুলোর সমন্বয় চায় সরকার: ওদিকে বাংলাদেশে অস্থায়ী আশ্রয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করা জাতিসংঘসহ বৈশ্বিক সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় চায় সরকার। এ নিয়ে যৌথভাবে প্রকল্প বাস্তবায়নের কথাও ভাবছে সরকার। বিশেষ করে অবহেলিত ওই জনগোষ্ঠীর শিক্ষা, স্বার্থ, প্রশিক্ষণ, জীবিকা নির্বাহের মতো বিষয়ে বৈশ্বিক সংস্থাগুলোর সমন্বিত উদ্যোগে উৎসাহিত করছে সরকার। আজকের বৈঠকে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা এবং পরবর্তী দিকনির্দেশনা আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। সুত্র:মানবজমিন

পাঠকের মতামত

শেখ মুজিবকে স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করে পোস্ট, এসিল্যান্ড প্রত্যাহার

শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সিরাজুম মুনিরা ...

আলোচিত স্কুলছাত্রী টেকনাফের তাসফিয়া হত্যা: এবার তদন্ত করবে পুলিশ

চট্টগ্রামের আলোচিত স্কুলছাত্রী তাসফিয়া আমিন হত্যা মামলায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদনের ...