প্রকাশিত: ২০/০৮/২০১৯ ৯:২৬ এএম

১৮/০৮/২০১৯ ইংরেজি থেকে উখিয়া- টেকনাফ উপজেলায় ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ শুরু হয়েছে।ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য অত্র এলাকার জনসাধারণের মাঝে বেশ উৎসাহ,উদ্দিপনা আশংকা রয়েছে। ক’দিন ধরে তারা বেশ ব্যস্থ বিভিন্ন অফিস ও ফটোকপির দোকানে।প্রতিবারের ভোটার তালিকা হালনাগাদের তথ্য সংগ্রহরের কাজ এবারও অর্পিত হয়েছে স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকগণের উপর।রীতি অনুযায়ী ঐসব তথ্যসংগ্রহকারীগণ বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহের কথা।কিন্তু এবার দেখা যাচ্ছে ভিন্ন চিত্র।সম্ভাব্য ভোটাররাই তথ্য সংগ্রহ কারীদের বাড়ি/অফিসে ভিড় করছেন অতিমাত্রায়।ভোটার হওয়ার জন্য কেন মানুষের মধ্যে হঠাৎ এত আগ্রহ তৈরি হল?প্রথমতঃ রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এই এলাকায় নিজকে বাংলাদেশী পরিচয় দেওয়ার ক্ষেত্রে ভোটার আইডি কার্ড বেশ গ্রহনযোগ্য ডকুমেন্ট।দ্বিতীয়তঃ উখিয়া/ টেকনাফ থেকে কক্সবাজার যাবার যাবার পথে একাধিক চেকপোস্টে আর্মি,পুলিশ কিংবা বিজিবি কর্তৃক এই ভোটার আইডি কার্ড নিয়মিত চেক করা হয়।এমনকি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত বর্তমান চেয়ারম্যানকেও এই কার্ড সঙ্গে নিয়ে চেকপোস্ট অতিক্রম করতে হয়।তৃতীয়তঃ ভোটার আইডি কার্ড থাকলে সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা পাওয়া যায়।বাংলাদেশের সংবিধানের ১২২(২) অনুচ্ছেদে ভোটার তালিকায় নাম অন্তভুক্তির বিধান করা হয়েছে।সংবিধান অনুযায়ী একজন লোককে নিন্মোক্ত যোগ্যতার ভিত্তিতে ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত করা যাবে যদি (১) সে বাংলাদেশের নাগরিক হয়।(২)তার বয়স আঠার বছরের কম না হয়।(৩)সে যদি কোন যোগ্যতাসম্পন্ন আদালত কর্তৃক অপকৃতিস্থ ঘোষিত না হয়।(৪)সে যদি নির্দিস্ট কোন ভোটার এলাকার বাসিন্দা হয়।(৫)সে ১৯৭২ সালের বাংলাদেশ যোগসাজশকারর (বিশেষ ট্রাইব্যুনাল) আদেশের অধীন কোন অপরাধের জন্য দন্ডিত না হয়ে থাকে।সীমান্ত এলাকায় হিসেবে এবারও উপজেলা নির্বাচন অফিস বেশ সতর্কতার সহিত ভোটার তালিকা হালনাগাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।যাতে কোন ভিনদেশী লোকজন ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত না হতে পারেন।তারজন্য নতুন ভোটার হবার জন্য ২৩ টি শর্ত সম্বলিত একটি লিফলেটও প্রকাশ করা হয়েছে।তেইশ শর্তের কয়েকটি হলঃ১৭ সংখ্যা বিশিষ্ট অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদের সত্যায়িত ফটোকপি ও অনলাইন যাচাইয়ের মূলকপি,মা বাবার ভোটার আইডি কার্ডের সত্যায়িত ফটোকপি,ভাই/বোন/চাচা/ফুফুর ভোটার আইডির সত্যায়িত ফটোকপি,বিবাহনামা/কাবিনামা,জমির খতিয়ান/ভূমিহীন সনদ,বিদ্যুৎ বিলের সত্যায়িত ফটোকপি,শিক্ষাগত যোগ্যতার সকল সনদের সত্যায়িত ফটোকপি,জাতীয়তা সনদের সত্যায়িত ফটোকপি,বাবা মা মৃত হলে মৃত্যুসনদের সত্যায়িত ফটোকপি,ইউনিয়ন পরিষদের বাসিন্দাদের ক্ষেত্রে চকিদারের রসিদের ফটোকপি, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন চাহিত অন্যান্য কাগজপত্র ইত্যাদি।উল্লখ্য ভোটারভেদে কাগজপত্র কম বেশি হতে পারে।সঙ্গত কারণে ২০১৭ সালে রোহিঙ্গাদের এদেশে আগমনের পর থেকে উখিয়া-টেকনাফ তথা কক্সবাজা র জেলায় জন্ম নিবন্ধনের অনলাইন প্রক্রিয়া বন্ধ রয়েছে।এমনি কি যারা ইতিপূর্বে ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে জন্ম নিবন্ধন করিয়ে ছিলেন তাদের অনেকেই এখনো অনলাইন নিবন্ধন হয়নি।এমতাবস্থায় ঐসব অসহায় কিশোর কিশোরীগণ কখনো ছুটছেন কম্পিউটার দোকানে কখনো বিভিন্ন অফিস প্রাঙ্গণে কিন্তু কোন সমাধান তারা পাচ্ছেনা।তাদের অনেকেই মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণও হয়েছে যাদের পরীক্ষা পাশের সনদে তাদের জন্ম তারিখ অংকে ও কথায় উভয় ভার্সনে মুদ্রিত রয়েছে।উল্লেখ ভোটার হবার দৌড়ঝাপের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ কিন্তু এই কিশোর কিশোরীরাই যারা “১৮” অতিক্রম করে মাত্র উনিশ কিংবা কুড়িতে পা দিয়েছেন।যাদের অপার সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য্য “আঠার বছর বয়স” কবিতা রচনা করেগেছেন।সেই কিশোররাই আজ ভোটার হবার জন্য তথ্য সংগ্রহকাজে নিয়োজিত স্যারদের পিছন পিছন ঘুরছেন।তারাই আমাদের ভবিষ্যৎ আশা আকাঙ্খা।যদি তারা সত্যিকার অর্থে এদেশের নাগরিক হয়ে থাকে তাহলে কেবল অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদের অজুহাতে তাদের বিকশিত স্বপ্ন ভেঙ্গে দেওয়া কোনমতেই উচিত হবেনা। এবার আসি হবু ভোটাররা কেন শংকিত সে প্রসঙ্গে।ইতিমধ্যে তথ্য সংগ্রহকার্যে নিয়োজিত স্যার ও বিভিন্ন সূত্রে হবু ভোটাররা জেনেছেন ভোটার নিবন্ধন ফরমে অপর্যাপ্ততার কথা।কোন ওয়ার্ডে বর্তমানে কত ভোটার রয়েছে তার একটা নিদিষ্ট অনুপাত(শতাংশ) ধরেই নাকি নিবন্ধন ফরম বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে যা বাস্তব প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।বর্তমান জনসংখ্যার বড় একটা অংশ কিশোর কিশোরী সেক্ষেত্রে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ম্যালথাস তথ্য পুরোপুরি না মিলানোই স্বাভাবিক। যোগ্য হবু ভোটারের তুলনায় যদি ফরম সংখ্যা কম হয় তাহলে অনেকেই নিবন্ধন প্রক্রিয়া বাইরে থেকে যাবে এই আশংকা মোটেও অমূলক নয়।পাশাপাশি বিষয়টি সাধারণ জনগনের মনে নানাবিধ সন্দেহও তৈরি করতে পারে।প্রতিবছর আমাদের শিশুরা কি পরিমাণে বড় হচ্ছে তা উচ্চমাধ্যমিক কিংবা উচ্চতর পরীক্ষার্থীর বর্ধিত সংখ্যা দেখেও সহজে অনুমান করা যায়।কেবল ফরম সংকটের দোহায় কিংবা ফর্মূলা নির্ভর জরিপের উপর নির্ভর নাকরে সংশ্লিষ্ট এলাকার বাস্তব চাহিদা অনুযায়ী ফরম সরবরাহ করা প্রয়োজন।প্রয়োজনে তথ্য হালনাগাদের সময় আরো বাড়ানো যেতে পারে।যেহেতু স্থানীয় স্কুলের শ্রদ্বেয় শিক্ষকগণ এই কার্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশে রয়েছেন আমাদের উচিত তাদের প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রাখা।তারাই ভালো বলতে পারবেন কে বাংলাদেশী আর কে ভিনদেশী।এলাকার সকল সচেতন মহলের উচিত সংশ্লিষ্টদের সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করা।

লেখকঃ
জিয়াউর রহমান মুকুল,
মানবিক ও উন্নয়ন কর্মী,
শেড,কক্সবাজার।
ইমেলঃ [email protected]

পাঠকের মতামত

নতুন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকানোই যখন বড় চ্যালেঞ্জ!

মিয়ানমারের তিনটি প্রধান এথনিক রেজিস্ট্যান্ট গ্রুপ—তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ), মিয়ানমার ন্যাশনাল এলায়েন্স (এমএমডিএ) এবং ...

একটি ফুল—

একটি ফুল, একটি ফুলের জন্যে কতো নিষ্পাপ গাছ প্রাণ হারালো, এই বর্বর শুকোনের দল বারংবার ...