প্রকাশিত: ২৫/১০/২০২১ ৯:২২ এএম
রোহিঙ্গা

রোহিঙ্গা
কক্সবাজারের উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের দারুল উলুম নাদওয়াতুল উলামা আল ইসলামিয়া মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতাসহ শিক্ষকদের গত ১৬ সেপ্টেম্বর মাদরাসা ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিল ‘আল ইয়াকিন’ অনুসারী ‘উলামা কাউন্সিলের’ সদস্যরা। তারা মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতাকে বলে, ‘আপনারা প্রত্যাবাসনের পক্ষে কথা বলেন, আপনারা সরে যান। এখানে আমরা সংসদ করব।’

গত ২৯ সেপ্টেম্বর আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচ) নেতা মহিব উল্লাহ খুনের পরও একইভাবে হুমকি দেওয়া হয়। বিষয়টি আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সদস্যদের জানান মাদরাসার শিক্ষকরা। এরপর পুলিশ সেখানে টহল বাড়ায়। এসব কারণে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) অনুসারী ‘আল ইয়াকিন’ ও ‘উলামা কাউন্সিলের’ সদস্যরা গত শুক্রবার ভোররাতে মাদরাসায় হামলা ও হত্যাকাণ্ড ঘটায় বলে দাবি করেন মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা দীন মোহাম্মদ। গতকাল রবিবার তিনি কালের কণ্ঠকে বলেছেন, এখনো সন্ত্রাসীদের ভয়ে আছেন। সাধারণ রোহিঙ্গারা প্রত্যাবাসনবিরোধী সন্ত্রাসীদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে।
এদিকে গতকাল হামলায় জড়িত ২৫ জনের নাম উল্লেখ করে উখিয়া থানায় ২৫০ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেছেন নিহত তরুণ আজিজুল হকের বাবা নূরুল ইসলাম। গত শুক্রবার ভোরে সন্ত্রাসীদের হামলার সময় মাদরাসাপড়ুয়া ছোট ভাই নূর কদরকে (১০) বাঁচাতে গিয়ে খুন হন আজিজুল। মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা সাধারণ রোহিঙ্গাদের ভয়ভীতি দেখায়। এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার ভোরে মাদরাসায় হামলা চালিয়ে ছয়জনকে হত্যা করা হয়। তবে বাদী নূরুল ইসলাম গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, আসামিরা আরসার মতাদর্শী আল ইয়াকিনের সদস্য। তারা আল ইয়াকিন ও উলামা কাউন্সিলের নামে তৎপরতা চালাচ্ছে। হামলার আগে তারা হুমকি দিয়েছে। তিনি পুলিশকে তাদের বিস্তারিত পরিচয় সম্পর্কেও বলেছেন।

নূরুল ইসলাম ও দীন মোহাম্মদের ভাষ্য মতে, ৫২ নম্বর ক্যাম্পের মৌলভি আকিজ, হাশিম, খালেক, হাসিবসহ কয়েকজন তাঁদের হুমকি দেওয়ার পর হামলা চালিয়েছে। তারা সবাই আরসার অনুসারী আল ইয়াকিন ও উলামা কাউন্সিলের সদস্য। আবু আম্বার নামের একজনকে তারা নেতা মানে।

তবে পুলিশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, ক্যাম্পসহ কোথাও আরসার অস্তিত্ব নেই। হামলাকারীরা রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী। সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে আরসার কার্যক্রম নেই বলে জানানো হয়েছে।
এদিকে গতকাল পর্যন্ত ঘটনায় জড়িত পাঁচজনসহ ১০ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের মধ্যে ১১ নম্বর ক্যাম্পের আবুল কালামের ছেলে মুজিবুর রহমানকে (১৯) ঘটনার পরই একটি ওয়ান শ্যুটার গান ও ছয় রাউন্ড তাজা গুলিসহ আটক করে এপিবিএন-৮। পরে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয় ৮ নম্বর ক্যাম্পের আবু তৈয়বের ছেলে দিলদার মাবুদ ওরফে পারভেজ (৩২), সৈয়দ আহমদের ছেলে মোহাম্মদ আইয়ুব (৩৭), ৯ নম্বর ক্যাম্পের নুর বাশারের ছেলে ফেরদৌস আমিন (৪০) এবং মৌলভি জাহিদ হোসেনের ছেলে আব্দুল মজিদকে (২৪)। এ মামলায় পুলিশের হাতে সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার হয়েছেন ১৩ নম্বর ক্যাম্পের আলী আহমদের ছেলে মোহাম্মদ আমিন (৩৫), আবু সিদ্দিকের ছেলে মোহাম্মদ ইউনুস ওরফে ফয়েজ (২৫), ১২ নম্বর ক্যাম্পের ইলিয়াছের ছেলে জাফর আলম (৪৫), ১০ নম্বর ক্যাম্পের ওমর মিয়ার ছেলে মোহাম্মদ জাহিদ (৪০) এবং মৃত নাজির আহমদের ছেলে মোহাম্মদ আমিন (৪৮)।

এজাহারে থাকা পলাতক আসামিরা হলেন ১৮ নম্বর ক্যাম্পেরই হাফেজ সানাউল্লাহ ওরফে মুহতেম সাহেব (৪৩), হাফেজ হামিদুল্লাহ (৩৫), জোবায়ের (৩৪), লালু (৪৫), তাহের (৩৯), রবি আলম ওরফে কারি সাহেব (৪৮), ১১ নম্বর ক্যাম্পের মাওলানা তোহা ওরফে গাজী সাহেব (৩৯), ৫২ নম্বর ক্যাম্পের মাওলানা ছৈয়দুল ইসলাম ওরফে ওলি ওরফে মাওলানা আকিজ (৩৮), ৫৬ নম্বরের হাসিব, এক্সএক্স জোনের ওস্তাদ হাশিম ওরফে খুইল্লা (৪২), ৪৬ নম্বরের সফিকুল ইসলাম লালু (৫০), আরিফ (৩০), ওসমান (২৭), ৫৬ নম্বরের হামিদ ওরফে খালেদ ( ৪২), ৫৩ নম্বরের রহমত করিম (৩৫), ৫৫ নম্বরের আব্দুল খালেক (৪০), ১১ নম্বরের হাফেজ নূরুল্লাহ (৪০), এক্সএক্স জোনের হাছন (২৮), মৌলভি মফিজ (২৭) ও মাস্টার হারেজ (২৫)।

বাদি নূরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, তাঁর পাঁচ ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে আজিজুল ছিল তৃতীয়। তাঁর ছোট ছেলে নূর কদর ওই মাদরাসায় হিফজ পড়ে। শুক্রবার ভোরে মাদরাসায় হামলা হলে আজিজ ছোট ভাইকে বাঁচাতে সেখানে যায়। সে ছোট ভাইকে বাঁচাতে পারলেও নিজে বাঁচতে পারেনি। নূরুল ইসলাম বলেন, ‘আকিজ, হাশিম, খালেক, হাফিজসহ অনেকেই আল ইয়াকিনের হয়ে কাজ করে তা প্রশাসনও জানে। আবু আব্বার নামের একজনকে তারা নেতা মানে।’

মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা দীন মোহাম্মদ বলেন, ‘এরা গত মাসের ১৬ তারিখ থেকে আমাকে সরে যাওয়ার হুমকি দিচ্ছে। পুলিশকে আমরা এই সব বলেছিলাম। তারা আমাকে খুঁজছিল। আমাকে মারতে আসে।’ ভুক্তভোগীরা জানান, ১৮ নম্বর ক্যাম্পের মাদরাসাটি ঘিরে অনেকে ইসলামিক মাহাজ নামের সংগঠনের সমর্থক। সংগঠনটি রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনসহ বিভিন্ন স্বার্থ রক্ষার ব্যাপারে কাজ করে। এ কারণেই মাদরাসাটিকে টার্গেট করেছে সন্ত্রাসীরা।

এপিবিএন-৮-এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কামরান হোসেন বলেন, ‘আমরা ১০ জনকে আটক করে উখিয়া থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছি। এদের মধ্যে মজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে আলাদা মামলা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে পাঁচজন হামলায় জড়িত বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদের কোনো সাংগঠনিক পরিচয় জানা যায়নি। কী কারণে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে তা তদন্তে জানা যাবে।’

উখিয়া থানার ওসি আহমেদ সঞ্জুর মোর্শেদ বলেন, ‘আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তদন্ত চলছে। এখনই কিছু বলা যাবে না। তাদের রিমান্ডের জন্য আবেদন করা হবে।’

প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার ভোরে উখিয়ার ১৮ নম্বর ক্যাম্পের দারুল উলুম নাদওয়াতুল উলামা আল ইসলামিয়া মাদরাসায় গুলিবর্ষণ এবং ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা চালানো হয়। এতে ঘটনাস্থলে তিনজন এবং পরে হাসপাতালে তিনজনের মৃত্যু হয়। সুত্র: কালেরকন্ঠ

পাঠকের মতামত

কক্সবাজার ইউনিয়ন হাসপাতালে ডাক্তার নার্সদের ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যু

কক্সবাজারের বেসরকারি ইউনিয়ন হাসপাতালে ডাক্তার ও নার্সদের ভুল চিকিৎসায় মারা গেলো মহেশখালীর আফসানা হোসেন শীলা ...

টেকনাফ সীমান্তে সর্ববৃহৎ মাদকের চালান লুটপাট শীর্ষক সংবাদে একাংশের ব্যাখ্যা ও প্রতিবাদ

গত ১৯ এপ্রিল টেকনাফ সীমান্তের জনপ্রিয় অনলাইন টেকনাফ টুডে এবং গত ২১এপ্রিল টিটিএন সংবাদমাধ্যমসহ বিভিন্ন ...