প্রকাশিত: ১৫/১১/২০১৮ ৭:৪০ এএম

অনেক আশা স্বপ্ন নিয়ে সংসার পেতে ছিলেন টঙ্গীর ফারহানা হক মিথি । জনতা ব্যাংক দিলকুশা শাখার প্রিন্সিপাল অফিসার দেওয়ান আশরাফের সঙ্গে। পরিবারের অভিযোগ গত বছরের ৪ আগস্ট তাদের ঘটা করে বিয়ে হওয়ার পর থেকে মিথির ওপর নেমে আসে অমানিশার অন্ধকার।

মিথি বিয়ের পরে জানতে পারেন আশরাফ আগেও ফারজানা নামের একজনকে বিয়ে করেছিলেন। সেই স্ত্রীকে মানসিক-শারীরিক নির্যাতন করে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে ফারহানা তার স্বামী আশরাফের সঙ্গে কথা বললে সে অগ্নিশর্মা হয়ে যায়। এরপর থেকে শ্বশুরবাড়ির লোকজনরা কথায় কথায় ফারহানার জাত-গোষ্ঠী, বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজন ও পারিবারিক বিষয়ে খোটা দেয়াসহ নানা ধরনের মানসিক নির্যাতন করতে থাকে।

পান থেকে চুন খসলেই শাশুড়ি, খালা শাশুড়ি ও শ্বশুর সবাই তাকে মানসিক চাপে রাখতো। অনার্স মাস্টার্স পাশ করা ফারহানা চাপা স্বভাব ও খুবই নম্র-ভদ্র হওয়ায় শ্বশুর বাড়ির লোকজনের নির্যাতনের কোনো প্রতিবাদ করতো না। সবই নিরবে সহ্য করে গেছে।

একপর্যায়ে সে গর্ভবতী হলে তার ওপর মানসিক চাপ আরো বেড়ে যায়। এতো কিছুর পরও স্বামী দেওয়ান আশরাফ তাকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করতো। একপর্যায়ে গত ৫ নভেম্বর অবুঝ শিশু আশফাককে (৪১ দিন) এতিম করে গাজীপুর সদরের ছায়াবিথীর স্বামীর বাসা থেকে তাকে লাশ হয়ে টঙ্গীর বাসায় ফিরতে হলো। শ্বশুর বাড়ির লোকজন ফারহানার জানাজা নামাজে পর্যন্ত শরীক না হওয়ায় সন্দেহ আরো বেশি দানা বেঁধেছে।

ফারহানার মা ফাতেমা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘গত বছরের ৪ঠা আগস্ট ইসলামী শরিয়া মোতাবেক জনতা ব্যাংক দিলকুশা করপোরেট শাখার প্রিন্সিপাল অফিসার, গাজীপুর সদর উপজেলার এফ-১০৪/৪, উত্তর ছায়াবীথি এবং ঢাকার ধামরাই থানার কানেস্ট্রা হাটির দেওয়ান আব্দুল জলিল ও লায়লা জলিলের ছেলে দেওয়ান আশরাফের সাথে টঙ্গীর ফারহানা হক মিথির বিয়ে হয়।’

‘বিয়ের সময় জামাইকে তার পছন্দের ৫৬ ইঞ্চি এলইডি টিভি, দামি ঘড়ি-জুতা, পোশাক এবং পৌনে আট ভরি স্বর্ণালংকারসহ প্রায় ৮-১০ লাখ টাকার মালামাল প্রদান করা হয়। শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার পর মেয়ে জানতে পারে তার স্বামী পূর্বে ফারজানা নামে অপর এক মেয়েকে বিয়ে করেছিল। যা কিনা আমাদের কাছে গোপন রাখা হয়েছিল।’

ফারহানা গর্ভবতী হলে তার প্রতি অবহেলার মাত্রা আরও বেড়ে যায়। ফারহানা অসুস্থ হলে টঙ্গীতে তার বাবার বাসায় আসতে চাইলে শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে আসতে দিতো না। এমনকি মায়ের সাথে কথা বলবে সেজন্য তার মোবাইল ফোনটি পর্যন্ত কেড়ে নিতো। এতো অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করেও সে স্বামীর সংসার করে আসছিল।

একপর্যায়ে আশফাক নামে তার একটি পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। সন্তান জন্মের পর থেকে তাদের অবহেলা-অনাদর আরও বেড়ে যায়। সদ্যজাত সন্তানটিকে চিকিৎসক মায়ের দুধ পান করাতে উপদেশ দিলেও শ্বশুর-শাশুড়ি দুধ পান করাতে দিতো না। এমনকি শিশুটিকে ফারহানার কোলে পর্যন্ত দিতে চাইতো না।

গত ২৭ অক্টোবর ফারহানার মা ও বড় দুই ভাই তাকে আনতে গেলে তাদের সাথে খারাপ আচরণ করা হয়। একপর্যায়ে গত ৫ নভেম্বর ফারহানার শ্বশুরবাড়ি থেকে মোবাইলে জানানো হয় তার শারীরিক অবস্থা ভালো না আপনারা তাকে দেখে যান। পরে বলা হয় তার শ্বাসকষ্ট হচ্ছে।

আবারও বলা হয় সে স্ট্রোক করেছে। এভাবে বিভিন্ন সময় ভিন্ন ভিন্ন কথা বলা হয়। পরে ফারহানার মা, ভাই ও আত্মীয় স্বজনরা গিয়ে দেখেন তার লাশ ফ্রিজিং গাড়িতে (ন-৭১-২৪০৬) বাড়ির পাশের রাস্তায় রেখে শ্বশুর বাড়ির লোকজন বাসার চার তলায় গিয়ে বসে রয়েছে এবং গাড়ির ড্রাইভার সাইদ রানাকে লাশ পাহারা দেওয়ার জন্য বসিয়ে রাখা হয়েছে।

পরে খবর পেয়ে গাজীপুর সদর থানার এসআই লিয়াকত আলী সঙ্গীর ফোর্স নিয়ে লাশ উদ্ধার করে সুরতহাল রিপোর্ট করেন এবং ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেন। এ ঘটনায় ৫ নভেম্বর গাজীপুর সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি (নম্বর-২০৭) দায়ের করা হয়।

এ বিষয়ে অ্যাম্বুলেন্সের ড্রাইভার সাইদ রানা বলেন, মৃত মহিলাটির শ্বশুরবাড়ির লোকজনের আচার আচরণ ভালো মনে হয়নি। লাশের গাড়িটি আমাকে পাহারা দিতে বলে ফারহানার জামাই, শ্বশুর, শাশুড়ি কোথায় যে গেলো একটি বারও তারা লাশের খবর নিল না।

এ ঘটনায় জানতে ফারহানা হক মিথির স্বামী দেওয়ান আশরাফের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি রিসিভ না করায় তার বক্তব্য জানা যায়নি।

গাজীপুর সদর থানা পুলিশের এসআই মো. লিয়াকত আলী বলেন, ফারহানা হক মিথির মৃত্যুটি হত্যা না স্বাভাবিক মৃত্যু তা ময়নাতদন্ত রিপোর্ট হাতে পেলে বিস্তারিত বলতে পারবো। তবে ঘটনা সন্দেহজনক বিধায় আমরা এটি অপমৃত্যু মামলা আকারে না নিয়ে সাধারণ ডায়েরি আকারে নিয়েছি। তবে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে তা দেখে প্রয়োজনীয় আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে। কেউ এ ঘটনায় দোষী হলে তাকে ছাড় দেয়া হবে না।

ডেইলি বাংলাদেশ

পাঠকের মতামত