প্রকাশিত: ২৭/১০/২০১৮ ১২:৪৮ পিএম

উখিয়া নিউজ ডেস্ক:
ঘরের চালায় ঝুলছে ফুল, পাখি, ছাতা। শুধু কি তাই! ঝুলছে হাতি, ঘোড়া, খরগোশ, কলা, আম, বল, গাড়িও। আর মেঝেতে বসে নির্ভয়ে হাসছে-খেলছে-পড়ছে ছোট্ট শিশুরা।
রূপকথার আজব দেশের কথা নয়; এমন দৃশ্য বাস্তবের। তবে এসব ফুল, পাখি, জন্তু, খেলনার সবগুলোই রঙিন কাগজের। সুতায় টাঙানো এসব কাগুজে খেলনা যখন বাতাস লেগে দুলে ওঠে একই ছন্দে তার সঙ্গে খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে মেঝেতে বসা শিশুরা। কেউবা হাত তালি দিয়ে উল্লাস করে ওঠে। একটু দূরে দাঁড়ানো এক তরুণী হাসিমুখে শিশুদের শান্ত হতে বলেন। কুতুপালং হিন্দু রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ঢোকার পথে হাতের ডান পাশের একটি ঘরে এমন দৃশ্য প্রতিদিনই দেখা যায়। এটি ক্যাম্পের শিশুদের প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার জন্য বেসরকারি সংস্থা মুক্তি কক্সবাজার পরিচালিত একটি লার্নিং সেন্টার। ক্যাম্পের ফুলেশ^রী, ববিতা, শর্মিলা, রূপা, রেনু বালা, অপু, সুমন ওদের বয়স ছয় থেকে সাত বছর। ইউনিসেফের দেয়া নীল রঙের ব্যাগ কাঁধে ঝুলিয়ে ওরা প্রতিদিনই আসে এই সেন্টারে। তারা জানায়, সেন্টারে এলে তাদের খুব ভালো সময় কাটে। ফুলেশ^রী বলে, এখানে এলে লেখাপড়া যেমন হয় তেমনি হাসি আনন্দও হয়। শিক্ষকরা তাদের কিছু বলেন না।
এই সেন্টারে ইংরেজি আর অঙ্ক শেখান রেখা শর্মা। তিনি জানান, বাচ্চাদের বার্মিজ ভাষা শেখানোর জন্য আরেকজন শিক্ষক রয়েছেন। সেন্টারে ৩৫ মিনিট করে ইংরেজি ও অঙ্ক শেখানো হয়। রেখা শর্মা বলেন, বাচ্চাদের একটানা ক্লাস করানো হয় না। ক্লাসের মাঝখানে বিরতি দেয়া হয়। ওই সময় তাদের খেলার ব্যবস্থাও থাকে। তাদের খেলার মধ্য দিয়ে বর্ণমালা শেখানো হয়। এই বাচ্চাদের সঙ্গে সময় কাটাতে আমার খুব ভালো লাগে। ওরা সহজে পড়া ধরতে পারে।
মধুরছড়া ও ময়নার ঘোনা ক্যাম্পেও দেখা গেছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের শিশুদের শিক্ষা আর মনোবিকাশে জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ)সহ বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার চেষ্টার কমতি নেই। তবে উন্নয়ন কর্মীরাই বলছেন, এসব সেন্টারের মাধ্যমে ক্যাম্পের শিশুরা পড়ালেখার কিছুটা সুযোগ পাচ্ছে। তবে প্রয়োজনের তুলনায় তাদের এই প্রচেষ্টা নিতান্তই কম। অনেক শিশু বঞ্চিত রয়েছে শিক্ষার সুযোগ থেকে। জানা যায়, বিভিন্ন এনজিওর পরিচালিত অন্তত এক হাজার ২০০ শিক্ষাকেন্দ্র থেকে ৩০টি ক্যাম্পে রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষাদান করা হচ্ছে। তবে এগুলো যথেষ্ট না হওয়ায় আরো শিক্ষাদান কেন্দ্র গড়ে তোলা হচ্ছে।
শিক্ষাদান কেন্দ্রগুলোর কয়েকজন শিক্ষক জানান, রোহিঙ্গারা শিক্ষায় অনেক পিছিয়ে আছে। তবে শিশুরা শিক্ষা নিতে আগ্রহী। বেশিরভাগ শিশু নিয়মিত স্কুলে এলেও অনেককে আবার ঘর থেকে ডেকে আনতে হয়। সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী এসব সেন্টারে শিশুদের অঙ্ক ও ইংরেজি শেখানো হয়। পাশাপাশি তাদের বার্মিজ ভাষা শেখাতে অপেক্ষাকৃত শিক্ষিত রোহিঙ্গাদের সাহায্য নেয়া হয়।
চলতি বছরের জুলাই মাসে বাংলাদেশ সফরে এসে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম। এ সময় তিনি রোহিঙ্গাদের শিক্ষার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন এবং দুই কোটি ৫০ লাখ ডলার অনুদান দেয়ার আশ্বাস দেন। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা গ্লোবাল পার্টনারশিপ ফর এডুকেশনের ৮৩ লাখ ডলার অনুদানও রয়েছে, যা বিশ্বব্যাংকের মাধ্যমেই ব্যয় হবে। কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ৭৩ শতাংশের কোনো অক্ষরজ্ঞান নেই। এ অবস্থায় রোহিঙ্গা শিশুসহ নিরক্ষর রোহিঙ্গাদের শিক্ষা কার্যক্রমে ইউনিসেফের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ অনুদান দেয়া হচ্ছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৬ থেকে ১৪ বছর বয়সী ৬০ হাজার শিশু রয়েছে। লার্নিং সেন্টারে শিশুদের আনন্দ দিতে টেলিভিশনসহ নানা রকম বিনোদন মাধ্যমও থাকবে। শিশুদের আনন্দের সঙ্গে শিক্ষাদান করাতে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সুত্র: ভোরের কাগজ

পাঠকের মতামত