প্রকাশিত: ২২/০৮/২০১৯ ৯:৫৩ এএম , আপডেট: ২২/০৮/২০১৯ ৯:৫৭ এএম

ছৈয়দুল আমিন চৌধুরী, টেকনাফ::
প্রত্যাবাসনের তালিকায় থাকা ৩ হাজার ৪৫০ জন রোহিঙ্গার মধ্যে দু’শতাধিক পরিবারের সাক্ষাৎকার গ্রহন করা হয়েছে। রোহিঙ্গা শরনার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন (আরআরআরসি) ও ইউএনএইচসিআর মঙ্গল ও বুধবার দু’দিনে টেকনাফের শালবাগান রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এ সাক্ষাৎকার সম্পন্ন করেন। তালিকায় থাকা ৯৫ ভাগ রোহিঙ্গাদের মাঝে প্রত্যাবাসনের বার্তা পৌঁছানো হয়েছে বলে জানা গেছে। শেষ পর্যন্ত আজ বৃহস্পতিবার প্রত্যাবাসন হবে কিনা তা এখনো অনিশ্চিত। তবে প্রত্যাবাসনের জন্য কেরুনতলী ও ঘুমধুম ঘাট প্রস্তুত রয়েছে। এদিকে ক্যাম্পে প্রত্যাবাসনকে কেন্দ্র করে সেনা, বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশ ও আনসারের টহল জোরদার রয়েছে।
২১ আগস্ট বুধবার টেকনাফে শালবাগান রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে।
শালবাগান সিআইসি (ক্যাম্প ইনচার্জ) অফিসে সাক্ষাৎকার প্রদান শেষে ফেরার পথে রোহিঙ্গা শব্বির আহমদ, ইসমাইল, নুর বাহার, নুরুল আলম, নুর হাসানের সাথে কথা হলে তারা দাবি পূরণ হলে মিয়ানমারে ফিরে যাবেন বলে জানান। অন্যথায় তারা স্বদেশ ফিরতে রাজি নয়। এক কথায় তারা ফিরতে নারাজ।
তাদের এ দাবী দাওয়া গুলোর মধ্যে সরাসরি নাগরিকত্ব প্রদান, ভিটে-বাড়ি ও জমি-জমা ফেরত, আকিয়াব জেলায় আশ্রয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের নিজ বাড়ীতে ফেরত, কারাগারে বন্ধি রোহিঙ্গাদের মুক্তি, হত্যা, ধর্ষনের বিচার, অবাধ চলাফেরা, নিরাপত্তা প্রদানসহ একাধিক শর্ত ।
তবে এসব রোহিঙ্গাদের সবাইকে একই সুরে কথা বলতে দেখা গেছে। অনেকটা শেখানো বুলি’র মত।
এদিকে প্রত্যাবাসন বিরোধী একটি চক্র ক্যাম্পগুলোতে সক্রিয় রয়েছে। তাদের চোখ রাঙ্গানীতে তটস্থ সাধারন রোহিঙ্গারা। এমনকি তারা উচ্চ স্¦রে ক্থা বলতেও শঙ্কিত। অদৃশ্য এ চক্রের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে রাজি নয়।
প্রত্যাবাসনের রাজি ১০-১৫টি পরিবারের খবর জানা গেলেও স্পস্ট কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।
টেকনাফ নয়াপাড়া শালবন রোহিঙ্গা ক্যাম্পের (নং- ২৬) ইনচার্জ মোঃ খালিদ হোসেন জানান, দুই দিনে ২৩৫ পরিবার প্রধানের সাক্ষাৎকার গ্রহন করা হয়েছে। এর মধ্যে মঙ্গলবার ২১ পরিবারের সাক্ষাৎ নেওয়া হয়েছিল। তবে এদের মধ্যে কত পরিবার প্রত্যাবাসনের জন্য রাজি হয়েছে তা সাক্ষাৎ প্রক্রিয়া শেষে জানা যাবে বলে জানান তিনি। আবার আগের দিনের চেয়ে সাক্ষাৎকার প্রদানে রোহিঙ্গাদের আগ্রহ বেড়েছে।
প্রত্যাবাসন বিরোধী একটি চক্র সক্রিয় থাকার ব্যাপারে তিনি জানান, কোন রোহিঙ্গাকে ভয়-ভীতি দেখানো হয়েছে এরকম কোন অভিযোগ তিনি পাননি।
টেকনাফ র‌্যাবের কোম্পানী কমান্ডার লেঃ মির্জা শাহেদ মাহতাব জানান, র‌্যাবের তিনটি টহল দল রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সার্বক্ষনিক তৎপর রয়েছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিরোধী উস্কানীমুলক কর্মকান্ড ঠেকাতে কাজ করছে তারা।
এদিকে বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টায় কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার আবুল কালাম জানান, ঘুমধুম ঘাট দিয়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সম্পন্ন হবে। এব্যাপারে সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহন করা হয়েছে। টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে ঘুমধুম পর্যন্ত নিছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। মিয়ানমারের ১ জন ও চীনের ২ জনসহ ৩ জন প্রতিনিধি প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষন করবেন। তারা ইতিমধ্যে কক্সবাজারে অবস্থান করছেন। প্রত্যাবাসন তালিকায় থাকা ১ হাজার ৩৩ পরিবারের মধ্যে যে ২৩৫ পরিবারের সাক্ষাতকার সম্পন্ন হয়েছে, যাচাই বাছাই করে তাদের মধ্য থেকে ফিরতে ইচ্ছুকদের চুৃড়ান্ত করা হবে। রোহিঙ্গাদের পরিবহনের জন্য ৫ টি বাস ও ৩টি ট্রাক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পাশাপাশি সাক্ষাৎকার গ্রহন প্রক্রিয়া চলমান থাকবে।
প্রত্যাবাসনে প্রস্তুত টেকনাফের কেরুনতলী ও ঘুমধুম ঘাট :
প্রত্যাবাসনের জন্য টেকনাফের কেরুনতলী ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমঘুম ঘাট প্রস্তুত রয়েছে। নাফ নদীর কিনারে কেরুনতলী প্রত্যাবাসন ঘাটে রোহিঙ্গাদের সাময়িক অবস্থানের জন্য ৩৩ টি ঘর ও অন্যান্য সুবিধাদি প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জলপথে প্রত্যাবাসন হলে এঘাট দিয়েই রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো হবে। অপরদিকে স্থল পথে প্রত্যাবান হলে বান্দরবন জেলার নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ঘাট দিয়ে রোহিঙ্গাদের স্বদেশ ফেরত পাঠানো হবে।

পাঠকের মতামত