
নিউজ ডেস্ক: গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার আজ ছয় মাস পূর্ণ হতে চললেও এখনো মূল পরিকল্পনাকারীকে শনাক্ত করতে পারেনি তদন্তকারী সংস্থা কাউন্টার টেররিজম ইউনিট (সিটি)। তবে মূল পরিকল্পনাকারী কে তা নিয়ে র্যাব ও সিটির বক্তব্যে ভিন্নতা আছে। এদিকে হলি আর্টিজান বেকারি আর থাকছে না। ভবনটি পার্শ্ববর্তী একই মালিকের লেক ভিউ ক্লিনিকের একটি অংশ হবে। তদন্তকারী সূত্র জানিয়েছে, গুলশান ও শোলাকিয়ায় হামলার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে যারা নিহত হয়েছেন বা আটক হয়েছেন তারা সবাই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ওই হামলার সঙ্গে জড়িত ছিল।
বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ এই জঙ্গি হামলার পর নড়েচড়ে বসে র্যাব-পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তাদের ধারাবাহিক বেশ কয়েকটি অভিযানে সফলতাও আসে। জঙ্গি দমন অভিযান দেশ-বিদেশে প্রশংসিত হয়। গুলশান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সালাউদ্দিন মিয়া বলেন, হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার পর তা দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। সাড়ে ৪ মাস পর নভেম্বরে তা প্লট মালিক সামিরা আহম্মদের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়।
একই মালিকের লেক ভিউ ক্লিনিকও দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর গত ২০ নভেম্বর খুলে দেওয়া হয়। মালিক সামিরা আহম্মদ জানিয়েছেন, হলি আর্টিজান বেকারি লেক ভিউ ক্লিনিকেরই একটি অংশ হবে। গুলশান হামলার ঘটনায় করা মামলায় এ পর্যন্ত দুজনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। তারা হলেন— নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সাবেক শিক্ষক হাসনাত রেজা করিম ও কল্যাণপুরে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে আটক রাকিব ওরফে রিগ্যান। এর পাশাপাশি এ ঘটনা তদন্তে শতাধিক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সিটি। এদের মধ্যে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া
৩৩ জন প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন। ঘটনা তদন্তে প্রাথমিক পর্যায়ে সিটি ধারণা করে, এ হামলার অন্যতম মাস্টারমাইন্ড বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডা প্রবাসী তামিম আহমেদ চৌধুরী। কিন্তু পরবর্তীতে সিটির কর্মকর্তারা জানতে পারেন, তামিম আহমেদ চৌধুরী হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলায় অপারেশন কামান্ডার হিসেবে কাজ করেছেন। হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার মূল পরিকল্পনাকারী কে— এমন প্রশ্নের জবাবে ডিএমপির ডিসি (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান বলেন, এ হামলার পরিকল্পনাকারীদের মধ্যে অনেকেই পুলিশের জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নিহত হয়েছে।
হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী তামিম আহমেদ চৌধুরীও নিহত হয়েছেন। এর সঙ্গে আরও বেশ কয়েকজন জড়িত রয়েছেন, যাদেরকে শনাক্ত করা ও আটকের চেষ্টা চলছে। গুলশান হামলায় ব্যবহূত আগ্নেয়াস্ত্রগুলো ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলার একটি অস্ত্র কারখানায় তৈরি করা হয়েছিল। চাঁপাইনবাবগঞ্জের সীমান্ত পথ দিয়ে আমের ঝুড়িতে ভরে ট্রাকে করে অস্ত্রগুলো ঢাকায় আনা হয়। অস্ত্রের বাহক আটক হলেও ওইসব আগ্নেয়াস্ত্র তৈরিতে অর্থ কারা দিয়েছে তা শনাক্ত হয়নি। গত ৮ অক্টোবর সাভারের আশুলিয়ায় র্যাবের অভিযানে পাঁচতলা ভবন থেকে লাফিয়ে পড়ে আবদুর রহমান নামে এক জঙ্গি মারা যান।
এ ঘটনার পর ২২ অক্টোবর র্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ দাবি করেন, নিহত আবদুর রহমানই উগ্রবাদী সংগঠন নব্য জেএমবির প্রধান। মূল নাম সারোয়ার জাহান। আরেক সাংগঠনিক নাম শাইখ ইব্রাহীম আবু আল হানিফ। আবদুর রহমানকে নব্য জেএমবির প্রধান ও গুলশান হামলার মূল পরিকল্পনাকারী বলে র্যাবের দাবির পর সিটির প্রধান মনিরুল ইসলাম তা নাকচ করে দেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, নিহত আবদুর রহমান নব্য জেএমবির তৃতীয় সারির নেতা। গুলশান হামলার মূল পরিকল্পনাকারী এখনো জীবিত। তাকে আমরা খুঁজছি। যদিও সে নিজেকে ‘হানিফ’ নাম বলে প্রচার করছে। কিন্তু সে আধ্যাত্মিক নেতা হিসেবে নব্য জেএমবিতেই আছে। সূত্র: বি/প্র
পাঠকের মতামত