প্রকাশিত: ২৫/০৪/২০১৮ ১১:৪৪ এএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ৩:৪৩ এএম
ইয়াঙ্গুনে ইউএসডিপির সংবাদ সম্মেলন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক::

ইয়াঙ্গুনে ইউএসডিপির সংবাদ সম্মেলন

ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন কার্ডধারী (এনভিসি) রোহিঙ্গাদের ওপর আরোপিত ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার বিরোধীতা করছে মিয়ানমারের বিরোধী দলগুলো। গত সপ্তাহে মিয়ানমারের সমাজকল্যাণমন্ত্রী এই পরিকল্পনার কথা ঘোষণার পর এর প্রতিবাদে প্রেসিডেন্টের কাছে চিঠি দেওয়ার কথা জানিয়েছে প্রধানবিরোধিদল ইউনিয়ন সলিডারিটি এন্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (ইউএসডিপি)।মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে দলটি জানিয়েছে, সংসদেও এই বিষয়ে প্রস্তাব তোলা হবে। দেশটির অন্য বিরোধীদলগুলোও বলছে এনভিসি কার্ডধারীদের মুক্ত চলাচলের অধিকার দেওয়া হলে তা দেশের জন্য বিপদজনক হবে। পূর্ব এশিয়াভিত্তিক মার্কিন সংবাদমাধ্যম রেডিও ফ্রি এশিয়া তাদের ওয়েবসাইটে এই খবর জানিয়েছে।

গত বছরের আগস্টে রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর পূর্ব পরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতার পর বাংলাদেশে পালিয়ে যায় প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা। এই সেনা অভিযানের জন্য মিয়ানমার রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে সশস্ত্র বিদ্রোহী গ্রুপ আরসার হামলাকে দায়ী করে। তবে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদন বলছে ওই হামলার আগে থেকেই সেখানে চলছে রোহিঙ্গাবিদ্বেষী প্রচারণা। অ্যামনেস্টির সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনেও ‘রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞের সামরিক প্রচারণা’কে সেখানকার সংকটের জন্য দায়ী করা হয়েছে। পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গাদের ফেরাতে এবছরের জানুয়ারিতে বাংলাদেশের সঙ্গে প্রত্যাবাসন চুক্তি সাক্ষর করেছে মিয়ানমার। দেশটি বলছে স্বেচ্ছায় ফেরত যাওয়া রোহিঙ্গাদের এনভিসি কার্ড দিয়ে প্রথমে মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের (আইডিপি) ক্যাম্পে রাখা হবে।

মঙ্গলবার ইয়াঙ্গুনে দলের প্রধান কার্যালয়ে মিয়ানমারের প্রধান বিরোধিদল ইউএসডিপির মুখপাত্র নানদা হ্লা মিয়ান্ট বলেন, ‘এনভিসি কার্ডধারীরা মুক্তভাবে চলাচল করলে দেশের জন্য বিপদজনক হবে।’

সম্প্রতি প্রথমবারের মতো মিয়ানমারের কোনও মন্ত্রী বাংলাদেশের শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করে গেছেন মিয়ানমারের সমাজকল্যাণমন্ত্রী উইন মিয়াট আঁয়। দেশে ফিরে গত সপ্তাহে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, রাখাইনের সহিংসতার পর অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের (আইডিপি) ক্যাম্পে বসবাসকারীরা এনভিসি কার্ডগ্রহণ করে অভিবাসন ফর্ম পূরণ করলে দেশের যেকোনও স্থানে যাতায়াত করতে পারবে রোহিঙ্গারা। তিনি জানান, এনভিসি কার্ডধারীরা নাগরিকত্বের আবেদন করতে পারবে তার পাঁচ মাসের মধ্যে নাগরিকত্ব পেয়ে যাবে। আর এই পরিকল্পনার বিরোধিতায় নেমেছে দেশটির বিরোধীদলগুলো।

ইউএসডিপির মুখপাত্র নানদা হ্লা মিয়ান্ট বলেন, আমরা আজ বলতে চাই কর্তৃপক্ষ মুক্ত চলাচলের সুযোগ দিলে আমরা একই মনোভাবের অন্য বিরোধিদলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে অবশ্যই কিছু একটা করা হবে। তিনি জানান, এনভিসি ইস্যুতে পার্লামেন্টেও একটি প্রস্তাব তোলা হবে।

দশকের পর দশক রাখাইন রাজ্যে বসবাস করে আসলেও রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বের স্বীকৃতি দেয় না মিয়ানমার। ক্যাম্পের বাইরে তাদের চলাচলের অধিকারও সীমিত। শিক্ষা, চাকরি ও স্বাস্থ্য সেবায়ও তাদের প্রবেশাধিকার সীমিত।

মিয়ানমারের ছোট দলগুলোও একই দাবি তুলেছে। ন্যাশনাল ইউনিয়ন পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান হান সুয়ে ২০০০৮ সালের সংবিধানের দিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন, শুধুমাত্র পূর্ণ নাগরিকত্বের অধিকারীদেরই নাগরিক অধিকার রয়েছে। তারা দেশের যেকোনও স্থানে মুক্তভাবে চলাচল করতে পারবে। তিনি বলেন, এনভিসি কার্ডধারীদের মুক্ত চলাচলের অধিকার সংবিধান দেয়নি।

রাখাইন সমস্যার জন্য আরসাকে দায়ী করে তিনি বলেন, সেই কারণেই এই ইস্যুকে খুবই সতর্ক হয়ে মোকাবিলা করা উচিত।

ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক ফোর্স (এনডিএফ) পার্টির চেয়ারম্যান খিন মং সুয়ে এনভিসিকার্ডধারীদের মুক্ত চলাচলের অধিকার দেওয়ার জন্য সরকারি দল এনএলডিকে অভিযুক্ত করেন। তিনি বলেন, তারা এনভিসি কার্ডধারীদের মুক্ত চলাচলের সুযোগ দিতে পারে না কারণ তা করা হলে রোহিঙ্গারা নাগরিকের মতো হয়ে যাবে কিন্তু তারা তা নয়। তিনি জানান, এনভিসি কার্ডধারীদের মুক্ক চলাচলের অধিকার দিতে হলে কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই দেশের অভিবাসন আইন সংস্কার করতে হবে। ১৯৮২ সালে প্রবর্তিত হয় মিয়ানমারের নাগরিকত্ব আইন। ওই আইনের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বকে অস্বীকার করে তৎকালীন সামরিক সরকার।

নিউ ন্যাশনাল ডেমোক্র্যটিক পার্টির চেয়ারম্যান থিয়েন নাউন্ট বলেন, এনভিসি কার্ডধারীদের মুক্ত চলাচলের অধিকার দেওয়া উচিত হবে না। তিনি বলেন, তারা এখনও নাগরিক নয়। বে-নাগরিকদের নাগরিক অধিকার সরকার দিতে পারে না। আমাদের দল এই এর সঙ্গে একমত নয় কারণ এটা আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য খুবই বিপদজনক।

রাখাইন আদিবাসীদের মধ্যে জনপ্রিয় আরাকান নেশনস পার্টির সেক্রেটারি তুন অং খিয়াও সরকারের এই সিদ্ধান্ত পুর্নবিবেচনার আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, রাখাইনে সত্যিই বসবাস করা বাঙালিরা বার্মিজ অথবা রাখাইন ভাষা বলতে পারে। কর্তৃপক্ষ যদি তাদের এনভিসি কার্ড দিয়ে মুক্ত চলাচলের অধিকার তাহলে ঠিক আছে। কিন্তু এমন অনেক মানুষ আছে যারা রাখাইনে অবৈধ অনুপ্রবেশ করেছে। তাদের যদি এনভিসি কার্ড দিয়ে মুক্ত চলাচলের অধিকার দেওয়া হয় তাহলে তা হবে খুবই বিপদজনক। দয়া করে এটা নিয়ে ভালো করে চিন্তা করুন।

পাঠকের মতামত

জাতিসংঘে প্রেসিডেন্ট পদে লড়বে বাংলাদেশ, প্রতিদ্বন্দ্বী ফিলিস্তিন

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮১তম অধিবেশনের প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে বাংলাদেশ। এবারের নির্বাচনে বাংলাদেশের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ...

জাতিসংঘে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব বিপুল ভোটে পাস

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে হামাসমুক্ত স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একটি প্রস্তাব বিপুল ভোটে পাস হয়েছে। ...

বিমান ছিনতাই করেছিলেন নেপালের নতুন প্রধানমন্ত্রী সুশীলা কার্কির স্বামী

নেপালের অন্তর্বর্তী সরকারের নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন দেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কি। দুর্নীতির ...