প্রকাশিত: ১১/০৮/২০২১ ৪:৩৯ পিএম

নব্য জেএমবির সামরিক শাখার প্রধান জাহিদ হাসান রাজু ওরফে ইসমাঈল হাসান ওরফে ফোরকানসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)।

রসায়নের মেধাবী ছাত্র ফোরকান তৎকালীন নব্য জেএমবির আমীর মুসার সার্বক্ষণিক সঙ্গী ছিলেন। মেধা ও সাহসিকতার জন্য দ্রুত সংগঠনের সামরিক শাখার সদস্য হিসেবে নিয়োগ পান জাহিদ। তার নেতৃত্বে বান্দরবানে সামরিক প্রশিক্ষণ ও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে একাধিক বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়৷

অল্পদিনে তিনি গ্রেনেড ও বোমা বানানোয় দক্ষতা অর্জন করেন। আইইডি প্রস্তুতেও দক্ষ জাহিদ সংগঠনের বেশ কয়েকজন বিশ্বস্ত সদস্যকে বোমা ও গ্রেনেড তৈরিতে দিয়েছেন প্রশিক্ষণ।

মঙ্গলবার (১০ আগস্ট) রাজধানীর কাফরুল থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সিটিটিসির বোম ডিসপোজাল ইউনিটের একটি টিম বিশেষ নব্য জেএমবির সামরিক শাখার প্রধান প্রশিক্ষক ও বোমা প্রস্তুতকারক জাহিদসহ তিনজনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতার অন্যরা হলেন- সাইফুল ইসলাম মারুফ ওরফে বাসিরা ও রুম্মান হোসেন ফাহাদ ওরফে আব্দুল্লাহ।

এ সময় তাদের হেফাজত থেকে বিস্ফোরক পদার্থ, ঢাকনাযুক্ত জিআই পাইপ, রিমোট কন্ট্রোল ডিভাইস, লোহার বল, সাংগঠনিক কাজে ব্যবহৃত তিনটি মোবাইল ফোন ও একটি ট্যাব উদ্ধার করা হয়।

বুধবার (১১ আগস্ট) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সিটিটিসি প্রধান ডিআইজি মো. আসাদুজ্জামান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সিটিটিসির স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের উপ-পুলিশ কমিশনার আব্দুল মান্নান ও অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার রহমত উল্লাহ চৌধুরী।

তিনি বলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র জাহিদ হাসান রাজু ওরফে ইসমাঈল হাসান ওরফে ফোরকান। তিনি রসায়ন বিভাগ থেকে অনার্স শেষ করার পর ২০১৬ সালে অনলাইনে ‘হোয়াইট হাউজের মুফতি’ নামক আইডির মাধ্যমে তৎকালীন আমির মুসার হাত ধরে নব্য জেএমবিতে যোগদান করেন। আমির মুসার সঙ্গে কাজের সুবাদে সংগঠনের শীর্ষস্থানীয় জঙ্গিদের নজরে আসেন তিনি।

রসায়নে পারদর্শী হওয়ার কারণে তার মেধা এবং সাহসের জন্য তাকে এই সংগঠনের সামরিক শাখার সদস্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি অল্পদিনে গ্রেনেড ও বোমা বানানোর অত্যন্ত দক্ষ হয়ে ওঠেন। নিত্য-নতুন কৌশলে আইইডি, বোমা ও গ্রেনেড তৈরিতে পারদর্শী জাহিদ বিশ্বস্ত সহযোগীদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দিতেন।

সিটিটিসি প্রধান বলেন, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সিটিটিসি তথা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধারাবাহিক অভিযানে নব্য জেএমবির শীর্ষস্থানীয় জঙ্গিরা গ্রেফতার বা নিহত হলে এই সংগঠনটি সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। জাহিদ তখন গ্রেফতার এড়াতে আত্মগোপনে চলে যান। পরে তিনি আমিরের নেতৃত্বে সংগঠনকে সংগঠিত করার উদ্যোগ নেন। তারই অংশ হিসেবে অনলাইনে আইডি খোলার মাধ্যমে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সামরিক বিভাগে কাজ করতে আগ্রহী সাহসী সদস্যদের বিভিন্ন ধরনের টাইম ও রিমোট কন্ট্রোল বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ দিতেন।

সংগঠনকে বিস্তৃত করতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিচরণ

নব্য জেএমবির কার্যক্রম বিস্তৃত করার পরিকল্পনা ছিল জাহিদের। রোহিঙ্গা ক্যাম্প কেন্দ্রিক নব্য জেএমবিকে বিস্তৃত করতে তিনি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে একাধিকবার মিটিং ও যাতায়াত করেন।

গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলার পরিকল্পনা ছিল জাহিদের

বড় কোনো কেমিক্যাল সাপ্লাই কোম্পানিতে চাকরি করে সেখান থেকে বিস্ফোরক সামগ্রী নিয়ে আইইডি তৈরির পরিকল্পনাও করেছিলেন জাহিদ। তিনি শারীরিক সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশ কারাতে ফেডারেশনের আওতাধীন মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়াম থেকে কারাতে প্রশিক্ষণও গ্রহণ করেন। সর্বশেষ তিনি ড্রোন বানানোর পরিকল্পনা করেছিলেন। ড্রোনের সাথে এক্সপ্লোসিভ যুক্ত করে কোনো জায়গায় আক্রমণের পরিকল্পনার পাশাপাশি সামরিক শাখার প্রধান নিযুক্ত হয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, পুলিশ বক্সে হামলার পরিকল্পনার সাথেও জড়িত ছিলেন। আমির মুসার নির্দেশে যেসব হামলার ঘটনা ঘটেছে সেসব হামলায় জাহিদ সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করেছেন বলেও দাবি সিটিটিসির।

গ্রেফতার অপর অভিযুক্ত সাইফুল ইসলাম মারুফ একজন দক্ষ বোমা তৈরির কারিগর। তিনি অনলাইনে জাহিদের নিকট হতে বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। বেশ কয়েকটি বোমা হামলার ঘটনায় তার সম্পৃক্ততা থাকার বিষয়ে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেন।

প্রশিক্ষণের জন্য বান্দরবানে হিজরত

সাইফুল ইসলাম মারুফ এবং গ্রেফতার অপর অভিযুক্ত মো. রুম্মান হোসেন ফাহাদসহ সংগঠনের সিদ্ধান্তে সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করার লক্ষ্যে বান্দরবান এলাকায় হিজরত করেন জাহিদ।

সংগঠনের ফান্ড সংগ্রহে ইলেকট্রিক শকে ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা

নব্য জেএমবি’র বিস্তৃতি ও সংগঠনের অর্থের জোগান দিতে গাজীপুরের টঙ্গী থানাধীন রেলগেট এলাকায় রুম ভাড়া নেন তারা। সংশ্লিষ্ট এলাকায় ইলেকট্রিক শক থেরাপির মাধ্যমে অজ্ঞান করে ছিনতাই ও ডাকাতির চেষ্টাও করছিলেন তারা।

নব্য জেএমবিতে বোমা মিজান খ্যাতি পায় জাহিদ

২০১৪ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ত্রিশালে প্রিজনভ্যানে হামলা চালিয়ে এক পুলিশ সদস্যকে হত্যা করে জেএমবির তিন শীর্ষ নেতাকে ছিনিয়ে নেওয়ায় জড়িত ছিলেন জাহিদুল ইসলাম মিজান ওরফে বোমা মিজান।

বলা হয়, একুশ শতকের শুরুর দিকে পাকিস্তানি জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তইয়েবার কুখ্যাত জঙ্গি নসরুল্লাহর কাছ থেকে বোমা বানানোর প্রশিক্ষণ পেয়েছিলেন মিজান। পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে লস্কর-ই-তইয়েবার ক্যাম্পে তিনি প্রশিক্ষণ নেন এবং ভারতে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের বোমা বিশেষজ্ঞদের সঙ্গেও তার যোগাযোগ ছিল। বোমা তৈরির দক্ষতার কারণেই সংগঠনে তার নাম হয় ‘বোমা মিজান’ বা ‘বোমারু মিজান’।

জেএমবি’র সেই বোমা মিজান ভারতে গ্রেফতারের পর তার অনুপস্থিতিতে নব্য জেএমবিতে বোমা মিজান খ্যাতি পান সামরিক শাখার প্রধান জাহিদ। রসায়নের ছাত্র হওয়ার সুবাদে নতুন কৌশলে আইইডি, বোমা ও গ্রেনেড তৈরিতেও দ্রুত পারদর্শী হওয়ায় জাহিদ নব্য জেএমবিতে এই খ্যাতি পান।

সিটিটিসি প্রধান জানান, গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে কাফরুল থানায় মামলা হয়েছে। মামলা তদন্ত অব্যাহত আছে। গ্রেফতারদের আরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আজই আদালতে সোপর্দ করা হবে। সূত্র ঢাকা পোস্ট

পাঠকের মতামত

১৩ রোহিঙ্গার জন্মনিবন্ধন জালিয়াতি, ইউপি উদ্যোক্তার স্বামী কারাগারে

নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে চেয়ারম্যান ও সদস্যদের ভুয়া সিল–স্বাক্ষর ব্যবহার করে ১৩ জন রোহিঙ্গা নাগরিকের জন্মনিবন্ধন তৈরির ...

খেলাভিত্তিক শিক্ষায় ব্র্যাকের তথ্য বিনিময় অনুষ্ঠান

শিশুদের খেলাভিত্তিক শেখা, অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা ও মনোসামাজিক বিকাশ নিশ্চিতে ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচির উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হলো ...

১২ ফেব্রুয়ারি ভোট শেষ না হওয়া পর্যন্ত অনুমতি ছাড়া ওয়াজ মাহফিল নিষিদ্ধ

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ধর্মীয় প্রচার কার্যক্রমে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে। ...