উখিয়া নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৭/১২/২০২৪ ৯:৩১ এএম

মিয়ানমারের সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক সংকট এবং সেনা অভ্যুত্থানের ফলে দেশটির শিক্ষিত পেশাজীবী নারীরা চরম আর্থিক সংকটে পড়েছেন। অনেকেই জীবিকার তাগিদে বাধ্য হচ্ছেন যৌনকর্মে যুক্ত হতে। চিকিৎসক, নার্স ও শিক্ষকদের মতো পেশাজীবী নারীদের মধ্যে এ প্রবণতা বেড়েই চলেছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমস এ খবর জানিয়েছে।

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সেনা অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমারের অর্থনীতি ভেঙে পড়ে। বৈদেশিক মুদ্রার মান কমে যাওয়া, দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি এবং দীর্ঘস্থায়ী সংঘাত দেশটির জনজীবন বিপর্যস্ত করে তুলেছে। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশটির প্রায় অর্ধেক জনগণ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে।

মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্ডালেতে চিকিৎসক হিসেবে কাজ করতেন ২৬ বছর বয়সী মে নামের নারী। তিনি এখন যৌনকর্মে জড়িত। তিনি বলেন, ডাক্তারি পড়তে সাত বছর লেগেছিল। কিন্তু এখন টিকে থাকার জন্য এমন কাজ করতে হচ্ছে, যা একসময় কল্পনাও করিনি।

নার্স জারও (২৫) মান্ডালেতে একটি বেসরকারি হাসপাতালে কাজ করতেন। হাসপাতালটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর এক বন্ধুর মাধ্যমে ‘ডেট গার্ল’ হিসেবে কাজ শুরু করেন। তিনি বলেন, প্রথমবার এটি ছিল নরকযন্ত্রণার মতো। কিন্তু অর্থ উপার্জনের আর কোনও পথ ছিল না।

মিয়ানমারে নারীদের আর্থিক অবস্থার অবনতিতে যৌনকর্মে যুক্ত হওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। একজন নারীর দৈনিক আয়ের গড় ৫ ডলার, যা পুরুষদের চেয়ে ৪০ শতাংশ কম। অভ্যুত্থানের পর বহু গার্মেন্ট কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে, ফলে চাকরির সুযোগ কমেছে।

২৮ বছর বয়সী সু একজন চিকিৎসক ছিলেন। তিনি বলেন, আমার স্বপ্ন ছিল শিশুদের সাহায্য করার। কিন্তু অর্থনৈতিক বাস্তবতা এবং পরিবারের আর্থিক সংকট আমাকে এমন কাজ করতে বাধ্য করেছে, যা আমি কখনও কল্পনা করিনি।

যৌনকর্মে যুক্ত হওয়া নারীদের জন্য ঝুঁকি আরও বেড়েছে। পুলিশি ধরপাকড়ের শিকার হলে তাদের ঘুষ দিতে হয়, যা তাদের জীবনে নতুন বিপদ ডেকে আনে।

মিয়া নামের একজন মা তিন বছরের মেয়ের জন্য যৌনকর্মে যুক্ত হয়েছেন। তার স্বামী ২০২১ সালে বিক্ষোভে সেনাবাহিনীর গুলিতে নিহত হন। মিয়া বলেন, মানুষ আমাকে বিচার করতে পারে, কিন্তু তারা বুঝবে না ক্ষুধার্ত থাকা কতটা কষ্টকর। আমি প্রতিদিন প্রার্থনা করি যেন এ জীবন থেকে মুক্তি পাই।

মিয়ানমারের সংকট থেকে উত্তরণের কোনো সহজ পথ আপাতত দেখা যাচ্ছে না। সেনাবাহিনী শহরগুলোতে নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে। কিন্তু গ্রামাঞ্চলে বিদ্রোহীদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ অব্যাহত রয়েছে।

অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক সংকটের শিকার হয়ে নারীদের জীবনমান দিন দিন আরও অবনতির দিকে যাচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে নারীদের মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা মিয়ানমারের একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে

পাঠকের মতামত

বৈশ্বিক অনুদান কমায় রোহিঙ্গা শিশুদের পড়ালেখার ক্ষতি হচ্ছে

বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে শিশু শিক্ষার পরিস্থিতি আরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান ...

যে কারনে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত ট্রাম্প

এবার ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি চুক্তির জন্য ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়েছে। পাবলিকান আইনপ্রণেতা ...

ট্রাম্পের অনুরোধে ইরানকে যুদ্ধবিরতিতে রাজি করিয়েছে কাতার

ইসরায়েল-ইরান সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে তেহরানকে রাজি করাতে মধ্যস্থতা করেছেন কাতারের প্রধানমন্ত্রী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ...