
ডেস্ক রিপোর্ট ::
কয়েকদিন আগে নিয়ে গেল নাইট্যং পাড়ার ফিশারী জহিরে আহম্মদের ভাগিনা নুরুল আবছার কে। সে পরদিন কৌশলে পালিয়ে আসে। আবার ও গত রাত্রে ১০ ১১.৩০ মিনিটে তুলে নিয়ে গেল জহির আহমদের বড় ছেলে জালাল আহম্মদ (২২) কে। এই সময় আব্দুল হাকিমের সাথে নাকি আরও ১০/১৫ জন ডাকাত ছিল। ঘটনাটি ঘটে নাইট্যং পাড়ার ইসমাইলের বাড়ীর সামনে। সেখান থেকে ধরে তুলে নিয়ে যায়। এ নিয়ে এলাকায় থমথমে ও ভয়াবহ আরও বড় ঘটনা ঘটে যাওয়ার আশঙ্কা করছে এলাকার নিরীহ গরীব জনগণ।
কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার সাধারন মানুষের কাছে এক আতঙ্কের নাম রোহিঙ্গা ডাকাত আব্দুল হাকিম।এই ডাকাত মিয়ানমারের মংডু বড় ছড়া এলাকার জানে আলমের ছেলে। মাদক পাচার,অপহরণ, ডাকাতি, হত্যা, ধর্ষণ এসব যেন তার কাছে ঠুনকো বিষয়।আর এইসবের পেছনে তার ছায়া হিসেবে কাজ করেন এলাকার কিছু নেতা। কথিত নেতারা এই ভয়ঙ্কর রোহিঙ্গা ডাকাত কে নিরাপত্তা দেন বলেও বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়।
স্থানীয় সূত্রে আরো জানা যায়, অপহৃত কিশোর নুরুল আবছার টেকনাফ নাইট্যংপাড়া এলাকার মৃত মোঃ কাশিম এর পুত্র। গত ৩১ জানুয়ারী রাত ৯ টার দিকে রোহিঙ্গা ডাকাত হাকিম ও তার সশস্ত্র লোকজন অস্ত্র ঠেকিয়ে বাড়িতে ঢুকে কিশোর নুরুল আবছার কে অপহরণ করে তার আস্তানায় নিয়ে যায়।এরপর ডাকাত দল তাকে তালা ও শিকল দিয়ে বেঁধে রাখে। পরের দিন ডাকাত আব্দল হাকিম এর আস্থানা থেকে পালিয়ে আসে কিশোর নুরুল আবছার।
অপহৃতের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়,ডাকাত হাকিম এক বছর আগে অপহৃতের বড় ভাই তোফাইল আহমদকে অপহরণ করে নির্মমভাবে খুন করেছিল।এই ঘটনার পরে নিহতের মামা মোঃ জহির বাদী হয়ে টেকনাফ মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ মামলা তুলে নিতে সশস্ত্র লোকজন নিয়ে নুরুল আবছারকে অপহরণ করেছে বলে জানান অপহৃতের মামা মোঃ জহির।
তিনি আরো বলেন, অস্ত্রবাজ ডাকাত হাকিম তার ভাগিনা কে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়ার সময় হুংকার দিয়ে বলে যান, ”মামলা তুলে না নিলে এই ছেলেরও লাশ পড়বে”। অপহৃত পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা এই ঘটনায় উদ্বেগ আর উৎকন্ঠা ও নিরপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে জানান।
নির্ভরশীল সূত্রে জানা যায়, টেকনাফের গহীন পাহাড়ে আস্থানা আছে এই ডাকাত হাকিমের। সেখান থেকেই তার বাহিনীর লোকজন দিয়ে এসব মানুষ হত্যা, মায়ানমার থেকে বিশাল আকারের ইয়াবার চালান এনে তার আস্থাশীলদের রসদ যোগান দেন এই ডাকাত হাকিম। তার রয়েছে বিশাল অস্ত্রের ভাণ্ডার। দেশী আর বিদেশী এসব অস্ত্রের যোগান কারা দেয় এটিও এখন অনেকের কাছে মিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন।
পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে জানতে পেরেছি ” এই ভয়ঙ্কর ডাকাত হাকিমের কাছে এক থেকে দুই ট্রাকের মত বিভিন্ন অস্ত্রের সংগ্রহ রয়েছে। আর এইসব অস্ত্র দিয়ে সে তার কুকর্ম সম্পাদন করে।আর কিছু লোকজন তাকে অর্থ দিয়ে লালন পালন করে বলে জানতে পেরেছি” । তবে তাকে থামাতে না পারলে এই অঞ্চলে আরও অপরাধ ঘটতে আরে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
ডাকাত হাকিমের যত অপকর্ম : ১৫ বৎসর আগে বার্মা থেকে এসে টেকনাফে দিন মজুরের কাজ করত আবদুল হাকিম ডাকাত।বার্মায়া আবদুল হাকিম ডাকাত এখন কয়েক গ্রামের রাজা হয়ে শাসন করছে কয়েকটি গ্রাম।গত বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে টেকনাফ পুরাতন পল্লান পাড়াস্থ রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী আব্দুল হাকিমের ঘরে অভিযান চালিয়ে ইয়াবাসহ স্ত্রী- ভাই ও অপর এক মিয়ানমার নাগরিককে আটক করেছিল ২ বিজিবি সদস্যরা। এ সময় অন্য একটি কক্ষ থেকে বন্দি অবস্থায় এক যুবককে উদ্ধার করা হয়েছিল।সেই সময় তার বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল ৩৯৩৭ পিস ইয়াবা, ৭ টি মোবাইল ও ২ টি চাকু।
উদ্ধার হওয়া যুবক মোঃ সেলিম বলেছিলেন, ২০ ফেব্রুয়ারি বিকাল সাড়ে ৪ টার সময় টেকনাফ পৌরসভা এলাকার কায়ুকখালী ব্রীজের উপর থেকে তাকে অপহরণ করা হয়। আব্দুল হাকিম ডাকাতের ঘরের একটি রুমে হাত-পা বেধে রেখে মোবাইলে তার পরিবারের কাছ থেকে ৮ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবী করা হয়। টাকা না দেওয়ায় তাকে বেশ কয়েকবার হত্যারও হুমকি দেওয়া হত। পরে বিজিবি’র অভিযানে ভাগ্যক্রমে উদ্ধার হয়ে বেচেঁ যায় সে। পরে সে টেকনাফ মডেল থানায় হাকিম ডাকাতসহ অন্যান্যদের আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেছিল। এ ছাড়া ইয়াবা উদ্ধার ও বৈদেশীক নাগরিকদের আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে ২ বিজিবি হাবিলদার মোঃ মিনহাজ উদ্দিন বাদী হয়ে দুটি মামলা দায়ের করেছিলেন।
তবে এ অভিযানে কৌশলে পালিয়ে যায় আব্দুল হাকিম।টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগ সদরের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম হত্যা মামলার ৩ নং আসামী এই ডাকাত হাকিম।গত বছরের আগস্ট মাসে টেকনাফের গহীন পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে ডাকাত আব্দুল হাকিমের দুই সহযোগী সহ বিপুল পরিমান অস্ত্র উদ্ধার করেছিল র্যাব-৭। সেই সময় র্যাব ১৭টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৪৩৭ রাউন্ড কার্তুজ উদ্ধার করেছিল।
নাম প্রকাশ না শর্তে টেকনাফ উপজেলার ব্যবসায়ীরা জানান, রোহিঙ্গা ডাকাত আব্দুল হাকিম এক ভয়ঙ্কর ও পেশাদার খুনি ও মাদক ইয়াবা চোরাকারবারি।বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের ফোন করে চাঁদা দাবি করে সে। আর চাঁদা না দিলে পাওয়া যায় হত্যার হুমকি। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারি দলের সমন্বিত অভিযানের মাধ্যমে এই ডাকাত ও মাদক পাচারকারীকে থামাতে না পারলে মানুষের মনে স্বস্তি আসবে না বলে জানান তিনি।
১০ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০ টার দিকে টেকনাফ উপজেলা পরিষদের সামনে ডাকাত আব্দুল হাকিমের সহযোগী টেলিফোনে কথা বলার সময় নাইট্যংপাড়া এলাকার মোহাম্মদ রফিকের স্ত্রী আনজুমা (৩২) কে আটক করে স্থানীয় জনসাধারণ। সে থাকে নুর আহম্মদ ঘোনা এলাকায়।আনজুমার স্থায়ী ঠিকানা হচ্ছে মহেশখালী থানার কুতুবজুম।
তবে এসব বিষয়ে জানতে চাইলে টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ মাইন উদ্দিন খান জানান, হাকিম ডাকাতের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। তার বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তার বিরুদ্ধে আরো একটি মামলা রুজু করা হবে। অপহৃত জালাল আহম্মদ কে উদ্ধারের কাজ চলছে।
পাঠকের মতামত