উখিয়া নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ৩১/১০/২০২৩ ৯:২৭ এএম

দীর্ঘ ৬ বছর পেরিয়ে গেলেও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে এ পর্যন্ত কোন দিনক্ষণ ঠিক না হয়নি। এর মধ্যে আগের ২ টি ট্রানজিট ক্যাম্প ছাড়াও চলছে আরও ৩ টি ট্রানজিট ক্যাম্প নির্মাণের কাজ। আর এর মধ্যেই আজ মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) প্রত্যাবাসনের ইস্যুতে বাংলাদেশ আসছে মিয়ানমারের ৩৪ সদস্যের প্রতিনিধি দল। প্রত্যাবাসনের পক্ষে রোহিঙ্গাদের উদ্বুদ্ধকরণ এবং যাচাই-বাছাই করতে মঙ্গলবার সকালে কক্সবাজারের টেকনাফ হয়ে মিয়ানমার প্রতিনিধি দলটি বাংলাদেশ আসবেন।
দৈনিক কক্সবাজার এই বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজারস্থ শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মো. মিজানুর রহমান।
তিনি বলেন, জল ও স্থল দুই পথেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন হবে। যা ২০১৮ সালে দু’দেশের চুক্তিতে উল্লেখ্য রয়েছে। আমরা জল ও স্থল দুই পথেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য আমরা প্রস্তুত রয়েছি। ২০১৮ সালে দুটি ট্রানজিট ক্যাম্প নির্মাণ করেছি। ধারণা করেছিলাম, ২০১৮ সাল থেকে প্রত্যাবাসন কার্যক্রমটা শুরু হবে। আমরা আরও ৩টি ট্রানজিট ক্যাম্প নির্মাণ হাতে নিয়েছি। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরকে বরাদ্দ দিয়েছে প্রায় ৬ কোটি টাকার মতো। কাজ শুরু হয়েছে এবং দ্রুত শেষও হবে, যা আমরা তদারকি করছি।

কক্সবাজারস্থ শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয়ের সূত্র বলছে, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু, ঘুমধুম ও টেকনাফে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য আরও নতুন ৩টি ট্রানজিট সেন্টার নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের তত্ত্বাবধানে এ সেন্টারগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে। এর আগে ২০১৮ সালে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি ও কক্সবাজারের টেকনাফে ২টি ট্রানজিট সেন্টার নির্মাণ করা হয়।

আরআরআরসি মো. মিজানুর রহমান বলেন, চলতি বছর মিয়ানমার প্রতিনিধি দল দু’বার বাংলাদেশে আসে। এর মধ্যে একবার রোহিঙ্গাদের যাচাই-বাছাই করে, এর পরের বার প্রতিনিধি দলটি রোহিঙ্গদের সঙ্গে বসে এবং তাদের দাবি-দাওয়ার কথাগুলো শুনেন। এখনো একইভাবে আরেকটি মিয়ানমার প্রতিনিধি দল আসছে আজ মঙ্গলবার। তারা রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলবেন। মূলত প্রত্যাবাসন নিয়ে রোহিঙ্গাদের দাবি-দাওয়া ছিল, তা মিয়ানমার প্রতিনিধি দল যে ব্যবস্থা নিয়েছেন সে ব্যাপারে রোহিঙ্গাদের অবহিত করবেন। আমরা এর একটি পরিবেশ ও আয়োজনের ব্যবস্থা করছি। মিয়ানমার প্রতিনিধি দলের সদস্য সংখ্যা ৩৪ জন। তার মধ্যে ৪ জন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর। তারা ট্রলারে অবস্থান করবেন এবং বাকি ৩০ জন সদস্য রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলবেন।
মো. মিজানুর রহমান বলেন, মঙ্গলবার ৯টার মধ্যে দুটি ট্রলারযোগে নৌপথে মিয়ানমার প্রতিনিধি দলটি টেকনাফে পৌঁছাবে। তাদের জন্য টেকনাফের সড়ক ও জনপদ বিভাগের সরকারি রেস্ট হাউসে আয়োজন করা হয়েছে। রোহিঙ্গা নেতারা মিয়ানমার প্রতিনিধি দল আসার আগেই রেস্ট হাউসে উপস্থিত থাকবেন। এরপর মিয়ানমার প্রতিনিধি দলের সঙ্গে রোহিঙ্গা নেতাদের আলোচনা হবে। আমরা আশা করি, দু’পক্ষের কথা-বার্তার মাধ্যমে তাদের মধ্যে যে আস্থার সংকট রয়েছে, সেটি দূর হবে এবং অচিরেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হবে, যার জন্য আমরা প্রস্তুত।
এদিকে সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় হামুন পরবর্তী কক্সবাজারে আসেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো: এনামুর রহমান। এসময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সরকারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মহল কাজ করছে। নতুন একটি সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। আশা করি, দ্রুত এই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হবে।
এর আগে চলতি বছর দু’বার মিয়ানমার প্রতিনিধি দল আসে টেকনাফে। প্রথম বার ১৫ মার্চ ১৫ সদস্যের প্রতিনিধি বাংলাদেশ আসেন। এরপর দ্বিতীয় দফায় ১৪ সদস্যের প্রতিনিধি এসেছিলেন ২৫ মে। এর মধ্যবর্তী ৫ মে বাংলাদেশের ৭ সদস্য রোহিঙ্গাদের ২০ সদস্যের প্রতিনিধি দলও মিয়ানমারের মংডুর পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে আসেন। উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি ক্যাম্পে রোহিঙ্গার সংখ্যা ১২ লাখের বেশি আশ্রয়রত রয়েছেন। কিন্তু গত ছয় বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত নেয়নি মিয়ানমার।

পাঠকের মতামত

কুতুপালং পশ্চিমপাড়ায় পরিচয় যাচাইহীন রোহিঙ্গা ভাড়া, বাড়ছে শঙ্কা

মিয়ানমারের রাখাইনে আরাকান আর্মি ও সেনা জান্তার সংঘর্ষে প্রাণ বাঁচাতে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। সীমান্ত ...

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মানবিক কার্যক্রম পর্যবেক্ষণে ইউনাইটেড নেশন টিম

কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন ইউনাইটেড নেশন ফোরাম বাংলাদেশ স্টাডি প্রোগ্রাম (BSP) এর ...

কক্সবাজারে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে ধর্ম ও প্রশাসনের সমন্বিত উদ্যোগ

কক্সবাজারে বাল্যবিবাহ শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনার লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত হলো “বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে করণীয়” শীর্ষক আন্তঃধর্মীয় নেতৃবৃন্দের ...