উখিয়া নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৪/০৮/২০২২ ৭:২১ এএম
ফাইল ছবি

রোহিঙ্গা ঢলের পাঁচ বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ। দমন-পীড়নের মুখে বাংলাদেশে আশ্রিত সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গাদের অভিশপ্ত জীবনের অবসান হবে কবে জানে না কেউ। মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের নিজ বসতভিটায় নিরাপদে সম্মানের সঙ্গে ফিরিয়ে নেবে বলে প্রতিশ্র“তি দিয়েছিল। কথা রাখেনি মিয়ানমার।

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন এখনো অনিশ্চিত। এদিকে রোহিঙ্গা ঢলের পাঁচ বছর উপলক্ষ্যে জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে রোহিঙ্গা সংকট সমাধান এবং আর্থিক সহায়তা দেওয়ার জন্য আরও পদক্ষেপ নিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। ২০২২ সালে রোহিঙ্গা ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর ১৪ লাখ মানুষের জন্য ৮৮১ মিলিয়ন ডলার সহায়তার আবেদন করা হয়েছিল। এখন পর্যন্ত ৪৯ শতাংশ অর্থাৎ ৪২৬ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলার সহায়তা পাওয়া গেছে।

নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার অজুহাতে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সেনা অভিযান শুরু করে। তাদের ওপর নির্বিচারে দমন-পীড়ন চালায় দেশটির সেনাবাহিনী ও উগ্রপন্থি বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকেরা। হত্যা, অগ্নিসংযোগ, নির্যাতন, ধর্ষণসহ নানাভাবে নিষ্ঠুরতা চালানো হয়। দমন-পীড়নের মুখে দলে দলে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে

আশ্রয় নেন। ওই সময়ে প্রায় আট লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেন। প্রায় তিন লাখ রোহিঙ্গা আগে থেকে বাংলাদেশে ছিলেন। ফলে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা সংখ্যা ১১ লাখে দাঁড়ায়। রোহিঙ্গাদের সন্তান জন্ম লাভ করার কারণে তাদের সংখ্যা আরও এক লাখ বেড়ে গেছে।

রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের কারণে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান নিষ্ঠুরতাকে ‘জাতিগত নিধনের পাঠ্যবই দৃষ্টান্ত’ বলে উলে­খ করেন। আন্তর্জাতিক আদালতে রোহিঙ্গাদের ওপর পরিচালিত গণহত্যার বিচার হচ্ছে। মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যার বিচার চালানো যাবে বলে সম্প্রতি রায় দিয়েছে ‘ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস (আইসিজে)। তার আগে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে গাম্বিয়ার করা এক মামলার অন্তর্বর্তী আদেশে মিয়ানমারকে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে। আইসিজে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিচার করে। ফলে মিয়ানমার রাষ্ট্র হিসাবে যে অপরাধ করেছে তার বিচার পরিচালনা করছে আইসিজে।

অপরদিকে, ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট (আইসিসি) ২০১৯ সালের নভেম্বর থেকে গণহত্যার তদন্ত শুরু করেছে। আইসিসি যেসব ব্যাক্তি গণহত্যায় জড়িত তার বিচার করে থাকে। ফলে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সদস্য এবং অপরাপর যারা গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে; তাদের বিচার করবে। বাংলাদেশের সঙ্গে সীমান্তবর্তী রাখাইন রাজ্য যা পূর্বে আরাকান রাজ্য নামে পরিচিত ছিল সেখানে রোহিঙ্গারা বাস করতেন।

সেখানে সেনা অভিযান শুরুর পর স্যাটেলাইট ছবিতে দেখা যায়, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা গ্রামে আগুন জ্বেলে পুড়িয়ে দিয়েছে। হাজার হাজার রোহিঙ্গা নাফ নদী পেরিয়ে নৌপথে কিংবা সাগরপথে, দুর্গম পাহাড়ি পথে কিংবা সমতল ভ‚মি দিয়ে দলে দলে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন।

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের অর্ধেকের বেশি শিশু। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ প্রশংসিত হলেও একজন রোহিঙ্গা নেতা খুন হওয়াসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, ইয়াবাসহ মিয়ানমারের মাদক পাচারে রোহিঙ্গাদের ব্যবহার, পরিবেশ বিনাশসহ নানা চাপের মুখে পড়েছে বাংলাদেশ। তার ওপর রোহিঙ্গাদের ব্যয় পরিচালনায়ও আর্থিক সংকটে আছে বাংলাদেশ। কক্সবাজারে উখিয়া ও কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরে ঘনবসতির কারণে সরকার কিছু রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তর করেছে। প্রথম দিকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের বিরোধী ছিল। পরে অবশ্য জাতিসংঘ তা মেনে নিয়েছে। বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর প্রতি অধিক গুরুত্ব আরোপ করছে। এ ব্যাপারে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ।

রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশ চুক্তি করেছে। কিন্তু মিয়ানমার প্রত্যাবাসনে আন্তরিকতা দেখায়নি। তার ওপর কোভিড-১৯ মহামারি এবং ২০২১ সালের পহেলা ফেব্র“য়ারিতে অং সান সু চিকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাইং ক্ষমতা দখলের কারণে উদ্ভ‚ত পরিস্থিতিতে প্রত্যাবাসনের কাজ অগ্রসর হয়নি।

ইউএনএইচসিআরের আহ্বান : ইউএনএইচসিআরের মুখপাত্র শাবিয়া মান্টু মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে রোহিঙ্গা সংকট সমাধান এবং আরও আর্থিক সহায়তা দেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, কক্সবাজারে বিশ্বের সর্ববৃহৎ শরণার্থী শিবিরে ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য বাংলাদেশ সরকার এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দ্রুত সহায়তা নিয়ে অগ্রসর হয়েছে।

তিনি বলেন, পাঁচ বছর পর রোহিঙ্গা শরণার্থীরা ইউএনএইচসিআরকে বলেছেন, তারা নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ, টেকসই উপায়ে মিয়ানমারে নিজের বাড়িতে ফিরে যেতে চান। এ লক্ষ্যে তারা উপযুক্ত পরিবেশ এবং চলাচলের স্বাধীনতা, নাগরিকত্বের পথে ডকুমেন্টেশন করা এবং আয় বর্ধন কর্মকাণ্ড পরিচালনার সুযোগ চান। তারা খুবই ঘনবসতির মধ্যে আছেন। তাদের দরকার পুষ্টি, আশ্রয় সামগ্রী, পয়ঃনিষ্কাশন ও জীবিকায়ন সুবিধা। অনেকে বিপজ্জনকভাবে নৌকা দিয়ে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে ভালো ভবিষ্যৎ করতে চাইছেন। তিনি রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আরও বিনিয়োগের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আবেদন জানান।

পাঠকের মতামত

ঘটনাপ্রবাহঃ রোহিঙ্গা ঢলের ৫ বছর

রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় প্রাইভেট হাসপাতালগুলোর সরকারি লাইসেন্স নেই, তদন্ত টিমের পরিদর্শন

রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকা উখিয়ায় ১৫টি ক্লিনিক হাসপাতাল ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টার চলছে অনুমতি বিহীন। সরকারিভাবে কোন ...

ভূয়া ডাক্তার দিয়ে চিকিৎসা, পালংখালী তাজমান হাসপাতালসহ চার প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা

উখিয়ায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে চার মামলায় ২লাখ ৫৫হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেছে উপজেলা প্রশাসন। ...

উখিয়ায় র‌্যাব পরিচয়ে অপহরণ, ইউনিফর্ম, অস্ত্র-গুলি ও হাতকড়াসহ আটক ১

কক্সবাজারের উখিয়ায় র‌্যাব পরিচয়ে রোহিঙ্গা যুবককে অপহরণ, মুক্তিপণ আদায়ের চেষ্টা এবং প্রতারণার অভিযোগে একটি সংঘবদ্ধ ...