

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আগে কক্সবাজার-২ (মহেশখালী–কুতুবদিয়া) আসনে বিএনপির জোটসঙ্গী ছিল জামায়াতে ইসলামী। কিন্তু স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পরিস্থিতি সম্পুর্ণ পাল্টে গেছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে মুখোমুখি লড়াইয়ে নামতে যাচ্ছে এক সময়ের জোটসঙ্গী বিএনপি ও জামায়াত।
দুটি দ্বীপ—মহেশখালী ও কুতুবদিয়া—নিয়ে গঠিত এই আসনে ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৮৭ হাজার ৮৪০ জন। এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থী ঘোষণা করেনি বিএনপি। তবে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে মাঠে সক্রিয় রয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য আলমগীর মোহাম্মদ মাহফুজ উল্লাহ ফরিদ।
এ আসনের রাজনৈতিক ইতিহাসও বেশ ঘনঘটাপূর্ণ। ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টির জহিরুল ইসলাম, ১৯৯১ সালে বাকশালের মোহাম্মদ ইসহাক বিএ, ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিএনপির এটিএম নুরুল বশর চৌধুরী, একই বছরের জুন ও ২০০১ সালে আলমগীর মো. মাহফুজুল্লাহ ফরিদ, ২০০৮ সালে জামায়াতের ড. এইচএম হামিদুর রহমান আযাদ এবং ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে আওয়ামী লীগের আশেক উল্লাহ রফিক নির্বাচিত হন।
অর্থনৈতিক-ভৌগোলিক গুরুত্বের দিক থেকেও আসনটি এখন জাতীয়ভাবে আলোচনায়। এখানেই গড়ে উঠছে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর, ধলঘাটা অর্থনৈতিক অঞ্চল, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, এলএনজি টার্মিনাল, এসপিএম প্রকল্পসহ একাধিক কৌশলগত স্থাপনা। সোনাদিয়া ও কুতুবদিয়ার মতো দ্বীপ এলাকাও আন্তর্জাতিকভাবে নজরকাড়া। ফলে বিশ্বের প্রভাবশালী রাষ্ট্রগুলোর চোখও রয়েছে এই আসনে।
নির্বাচনী বিশ্লেষকদের মতে, এ কারণেই বিএনপি আসনটি এখনও ফাঁকা রেখেছে। কেউ কেউ মনে করছেন, জোটগত কারণে শরিকদলকে সুযোগ দিতে পারে দলটি। তবে জেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক ইউসুফ বদরীর দাবি—আন্তর্জাতিক গুরুত্ব বিবেচনায় এ আসনে স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ কিংবা তারেক রহমান নিজেই প্রার্থী হতে পারেন।
এদিকে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে মনোনয়ন পেতে সক্রিয় রয়েছেন সাবেক এমপি ফরিদ, সাবেক এমপি এটিএম নুরুল বশর চৌধুরী, জামায়াতের সাবেক সংসদ সদস্য ড. এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ, এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতা এস এম সুজা উদ্দিন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের অধ্যক্ষ মাওলানা জিয়াউল হকসহ আরও কয়েকজন। মহেশখালীর সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবু বক্কর ছিদ্দিকও সালাহ উদ্দিন আহমেদের সমর্থনে গণসংযোগ করছেন এবং ধানের শীষের ভোট চেয়ে মাঠে রয়েছেন।
তবে দলীয় প্রধানের নির্দেশনা কিংবা মনোনয়ন বোর্ডের সিদ্ধান্ত—দুটোই এখনও অজ্ঞাত। কারন বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে কাউকে মনোনয়ন ও সমর্থন সমর্থন দেয়নি।
অন্যদিকে, জামায়াতের পরিস্থিতি তুলনামূলক সহজ। দলের একক প্রার্থী হিসেবে দলেন কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল সাবেক এমপি এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদের অবস্থান বেশ সুবিধাজনক বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। বিভিন্ন সামাজিক ও সাংগঠনিক কর্মসূচিতে তাকে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
বিশ্লেষকদের ধারণা—এ আসনে বিএনপি থেকে একাধিক প্রার্থী ভোটে নামলে মূল সুবিধা পেতে পারে জামায়াতে ইসলামী।

পাঠকের মতামত