ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: ১০/০৬/২০২৪ ১০:৫৭ এএম , আপডেট: ১০/০৬/২০২৪ ১:০৭ পিএম

পর্যটন নগরী কক্সবাজারে প্রতিদিনই ছুটে আসে হাজার হাজার ভ্রমণপিপাসু মানুষ। এসব ভ্রমণপিপাসুরা ঘুরছে দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভ, ইনানী, হিমছড়ি, পাতুয়ারটেক ও দরিয়ানগরে। আর আকাশে উড়ে পাহাড় ও সাগরের রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার স্বাদ নিতে করেন প্যারাসেইলিং। কিন্তু এই প্যারাসেইলিং করতে গিয়ে অনেকেই জীবনের ঝুঁকিতে পড়ছে।

কারণ যারা প্যারাসেলিং পরিচালনা করছেন তার মধ্যে অনেকেই রয়েছেন অদক্ষ। আর মানছেন না প্রশাসনের নির্দেশনা ও শর্ত। তাই সোমবার (১০ জুন) থেকে পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত প্যারাসেইলিং পরিচালনা কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে প্রশাসন।


কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (পর্যটন সেল) মো. মাসুদ রানা বলেন, পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত প্যারাসেইলিং পরিচালনা কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ থাকবে। ব্যবহৃত সরঞ্জামাদি যাচাই বাছাই, সামগ্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা, টেকনিক্যাল টিম কর্তৃক মূল্যায়ন সাপেক্ষে পুনরায় চালু করে দেয়া হবে।


প্যারাসেইলিং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞ বিমানবাহিনীর কমান্ডো অফিসার, নৌবাহিনীর দক্ষ প্রশিক্ষক, লাইফ গার্ড ট্রেইনারসহ টেকনিক্যাল টিম সামগ্রিক মূল্যায়ন কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।

 

 


মো. মাসুদ রানা আরও বলেন, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে বিমানবাহিনীর কমান্ডো অফিসার, নৌ বাহিনীর দক্ষ প্রশিক্ষক, লাইফ গার্ড ট্রেইনার দিয়ে মাসব্যাপী প্রশিক্ষণ শুরু হবে। যারা প্রশিক্ষণে মূল্যায়ন হবে তাদেরকেই প্যারাসেইলিং পরিচালনার অনুমতি দেয়া হবে। একই সঙ্গে প্রতিমাসেই এই মূল্যায়ন কার্যক্রম চলবে। কারণ আমরা চাই, কক্সবাজার ভ্রমণে আসা প্রত্যেক পর্যটক নিরাপদে ভ্রমণ করুক।
প্যারাসেইলিং করতে গিয়ে জীবনের ঝুঁকি 

‘আমি কিছুদূর ওপরে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে নিচে পড়তে থাকি। বুঝতে পারছিলাম না কী হচ্ছে। হঠাৎ দেখলাম আমি সমুদ্রের মধ্যে পড়ে গেছি।’ বলছিলেন ঢাকার নিউ ইস্কাটন থেকে কক্সবাজার পর্যটন স্পটে আসা আফসান জ্যাবিন অদিতি। তিনি রোমাঞ্চকর প্যারাসেইলিংয়ের অভিজ্ঞতা নিয়ে দুর্ঘটনায় পড়েন। তিনি বলেন, দড়ি ছিঁড়ে পড়ে যাওয়ার পর দুই থেকে তিনবার সমুদ্রের পানিতে ডুবে হাবুডুবু খেয়েছি। লবণপানি খেয়ে বমি হয়েছে কয়েকবার। বাম হাত ও দুই পায়ে ব্যথা পেয়েছি। তাছাড়া মেরুদণ্ডে প্রচণ্ড ব্যথা পেয়েছি।
অদিতিই প্রথম না। এর আগেও বিভিন্ন সময় ‘ফ্লাই এয়ার সি স্পোর্টস প্যারাসেইলিং’ নামের এই প্রতিষ্ঠানে এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসনের একজন বিচকর্মী। 

নাম প্রকাশ না করার তিনি শর্তে বলেন, অদিতির আগে গত ১৯ মে একই প্রতিষ্ঠানে প্যারাসেইলিং করতে গিয়ে ১ জন পর্যটক দড়ি ছিঁড়ে নিচে পড়ে যান। সমুদ্রে ডুবে যান সেই পর্যটক। পরে স্পিডবোট নিয়ে বিচকর্মীরা তাকে উদ্ধার করেন। সেই পর্যটক গুরুতর আহত হয়ে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। পর্যটকদের অভিযোগ, কোন প্রকার সেফটি সিকিউরিটি মেইনটেইন না করে প্যারাসেইলিং পরিচালনা করছে কর্তৃপক্ষ। এক্ষেত্রে প্যারাসেইলিংয়ে ব্যবহৃত স্পিডবোট এবং ব্যবহৃত রশিসহ অন্য উপকরণসমূহ উপযোগী না বলে অভিযোগ উঠেছে।

অদিতি জানান, ২৪ মে বিকেলে দরিয়ানগর পয়েন্টে গিয়ে ‘ফ্লাই এয়ার সি স্পোর্টস প্যারাসেইলিং’ নামের এই প্রতিষ্ঠানে ২ হাজার টাকায় টিকিট কেটে প্যারাসেইলিং শুরুর কয়েক মিনিটের মধ্যেই দড়ি ছিঁড়ে সাগরে পড়ে যান তিনি। তার কথায়, ‘আমি সাঁতার-না জানা মানুষ। আর একটু দূরে গিয়ে এমন ঘটনা ঘটলে জীবন বাঁচাতে পারতাম কি না সন্দেহ। অথচ কর্তৃপক্ষের কোনও সেফটি মেজারমেন্ট নেই। আমাকে উদ্ধার করার জন্য কোনও বোট ছিল না।’ 
 

অদিতি আরও জানান, বিষয়টি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ছবি-ভিডিও প্রকাশ করার পর কক্সবাজার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে যোগাযোগ করলে তাকে অনলাইনে লিখিত অভিযোগ দেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। আফসান জ্যাবিন অদিতি দুর্ঘটনার এক ভিডিও প্রতিদিনের বাংলাদেশকে পাঠিয়েছেন। সেখানে দেখা গেছে, প্যারাসেইলিং শুরুর কয়েক মিনিটের মধ্যে ঘটে এমন দুর্ঘটনা। অনেক দূর থেকে দুই যুবক তাকে উদ্ধারের জন্য দৌড়ে যান।

ফ্লাই এয়ার সি স্পোর্টস প্যারাসেইলিংয়ের মালিক মোহাম্মদ ফরিদ নিজেও পরিষ্কার নন তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে। দুর্ঘটনার পর তিনি বলেছেন, ১৯ মের ঘটনাটা অসাবধানতাবশত ঘটেছে। তবে ২৪ মের ঘটনাটিকে পুঁজি করে একটি পক্ষ তার ব্যবসা বন্ধ করার চেষ্টা করছে। এই পক্ষটি কে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, সৈকতের যে পয়েন্টটি আমি ব্যবহার করি, ওখানে অন্য কেউ ব্যবসা করতে চায়। তারাই দুর্ঘটনাটি নিয়ে অপতৎপর হয়েছে।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাসুদ রানা বলেন, ১৪টি শর্তসাপেক্ষে প্যারাসেইলিং পরিচালনার অনুমতি দিয়েছে জেলা প্রশাসন। যদি এই ১৪টি শর্ত অমান্য করা হয় তাহলে অনুমতি বাতিল করা হবে। এ ব্যাপারে কোনও অভিযোগ থাকলে জেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত জানানোর আহ্বান জানান তিনি।

১৪ শর্তের মধ্যে আছে, দক্ষতাসম্পন্ন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চালককে দিয়ে প্যারাসেইলিং পরিচালনা করতে হবে। প্রতিকূল আবহাওয়ায় প্যারাসেইলিং পরিচালনা করা যাবে না। যাত্রী ও চালকের জন্য লাইফ জ্যাকেট বাধ্যতামূলক। দুর্ঘটনা ঘটলে মালিকপক্ষ দায়ী থাকবে এবং তাৎক্ষণিক চিকিৎসার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

পাঠকের মতামত

ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলার বাদী এখন কক্সবাজার দুদকের উপ-পরিচালক

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও গ্রামীণ টেলিকমের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির ...

দৈনিক জনকণ্ঠের রিপোর্ট রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় প্রাইভেট হাসপাতালগুলোর সরকারি লাইসেন্স নেই, তদন্ত টিমের পরিদর্শন

রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকা উখিয়ায় ১৫টি ক্লিনিক হাসপাতাল ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টার চলছে অনুমতি বিহীন। সরকারিভাবে কোন ...

উখিয়ায় র‌্যাব পরিচয়ে অপহরণ, ইউনিফর্ম, অস্ত্র-গুলি ও হাতকড়াসহ আটক ১

কক্সবাজারের উখিয়ায় র‌্যাব পরিচয়ে রোহিঙ্গা যুবককে অপহরণ, মুক্তিপণ আদায়ের চেষ্টা এবং প্রতারণার অভিযোগে একটি সংঘবদ্ধ ...