ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: ১৮/১২/২০২৫ ৩:৩৫ পিএম
সেন্টামার্টিন জেটি

আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রতিদিন সর্বোচ্চ দুই হাজার পর্যটক প্রবালদ্বীপ সেন্ট মার্টিন ভ্রমণের সুযোগ পাচ্ছেন। তবে নানা বিধিনিষেধের মধ্যেই জাহাজের টিকিট নিয়ে তৈরি হয়েছে বিড়ম্বনা, পাশাপাশি জালিয়াতি চক্র সক্রিয় থাকার অভিযোগ উঠেছে। এসব জালিয়াতি ঠেকাতে টিকিটে উল্লিখিত নামধারীর জাতীয় পরিচয়পত্রের হার্ডকপি অথবা নিবন্ধিত মোবাইল নম্বর যাচাই বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যাচাই ছাড়া কোনো যাত্রীকে সেন্টমার্টিন ভ্রমণের অনুমতি দেওয়া হবে না।

বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আজ বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) থেকেই এ নির্দেশনা কঠোরভাবে কার্যকর করা হবে।

গত ১ ডিসেম্বর থেকে সরকার নির্ধারিত কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়া বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকে কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিন রুটে প্রতিদিন চলাচল করছে অনুমতিপ্রাপ্ত ৬টি জাহাজ। যাত্রার প্রথম ১৭ দিনে (১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত) প্রায় ৩০ হাজার পর্যটক সেন্টমার্টিন ভ্রমণ করেছেন।

ট্রাভেল পাস সংক্রান্ত সরকারি ওয়েবসাইট (travelpass.gov.bd) এর তথ্যানুযায়ী গত ১৬ ডিসেম্বর নির্ধারিত ২ হাজারটির সবকটি পাসই ইস্যু হয়েছে, যা একক দিন হিসেবে সর্বোচ্চ। ইতোমধ্যে ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত আগামী ৩০ দিনের নির্ধারিত প্রায় ৬০ হাজার টিকেটের মধ্যে অধিকাংশ টিকেটই অগ্রিম বিক্রি হয়ে গেছে বলে জাহাজ মালিক কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে।

সি ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (স্কোয়াব) সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর ঢাকা পোস্টকে বলেন, বছর কয়েক আগেও ৫ মাস যাবৎ দৈনিক ৫-১০ হাজার পর্যটক সেন্টমার্টিন ভ্রমণে যেতেন। এখন মাত্র ২ মাস প্রতিদিন ২ হাজার পর্যটক যেতে পারছেন। এমন পরিস্থিতিতে টিকেটের ওপর চাপ বেড়ে যাওয়ায় মধ্য জানুয়ারি পর্যন্ত প্রায় সব টিকেট শেষ। দৈনিক হারে ভ্রমণে আগ্রহী পর্যটকের সংখ্যা গড়ে ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজারের বেশি।

এদিকে অভিযোগ উঠেছে, প্রশাসনের কড়া নজরদারি সত্ত্বেও সূক্ষ্ম কারচুপির মাধ্যমে একটি জালিয়াতি চক্র সিন্ডিকেট করে অসাধু অনলাইন এজেন্টদের মাধ্যমে অগ্রিম টিকেট সংগ্রহ করছে এবং পরবর্তীতে চড়াদামে অবৈধভাবে কালোবাজারির মাধ্যমে পর্যটকদের কাছে বিক্রি করছে।

অনুসন্ধান বলছে, অন্যের নামে টিকেটে যাত্রা নিষিদ্ধ থাকলেও পর্যটকরা কালোবাজারিদের কাছ থেকে বাড়তি দামে তা সংগ্রহ করে ভ্রমণ করছেন। স্থানীয় ইউনুস, নিশাদ আপন নামে কয়েকজন যুবকের তথ্য পাওয়া গেছে যারা বাড়তি মূল্যে টিকেট বিক্রি করছেন।

ঢাকা থেকে ভ্রমণে আসা রুমেল হাসান নামে এক পর্যটক বলেন, অনলাইনে টিকেট পাইনি, অনেক দূর থেকে এসেছি। ফিরে তো যাব না। তাই এখানে এসে সাড়ে ৪ হাজার টাকায় টিকেট নিয়েছি যদিও অনলাইনে দাম আরও কম ছিল।

অভিযোগ প্রসঙ্গে ইউনুস বলেন, আমরা এজেন্টদের কাছে বাড়তি টাকা দিয়ে টিকেট সংগ্রহ করি। অনেকে গ্রুপ হয়ে আসে তারা আগেই টিকেট কিনে নেয়। আমরা শিক্ষার্থী কোন জালিয়াতি করছি না ব্যবসা করছি।

এদিকে গত ১৪ ডিসেম্বর ঢাকা পোস্টে ‘সক্রিয় জালিয়াতি চক্র/সেন্ট মার্টিনগামী জাহাজের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সব টিকিট বিক্রি’ শিরোনামে টিকেট জালিয়াতি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এছাড়া বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের পর নড়ে চড়ে বসে কর্তৃপক্ষ।

এরপর থেকে কালোবাজারি প্রতিরোধে প্রশাসন ও জাহাজ কর্তৃপক্ষের পক্ষে বাড়তি তৎপরতা লক্ষ্য করা গেছে। একই সঙ্গে এনআইডি প্রদর্শন ব্যতীত কেউ যেন ভ্রমণ না করে সেই নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।

ই-ট্যুরিজম এসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক জুবায়ের হাসান বলেন, টিকেটের নাম অনুযায়ী প্রকৃত এনআইডি হার্ডকপি বা মোবাইলে প্রদর্শন ছাড়া ও উল্লেখিত মোবাইল নং ছাড়া কোনো যাত্রী সেন্ট মার্টিন ভ্রমণ করতে পারবেন না। বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) মন্ত্রণালয়ের এক সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়েছে, ১৮ ডিসেম্বর থেকে যা কঠোরভাবে কার্যকর করা হবে।

তিনি টিকেট বিক্রয়কারী এজেন্টদের উদ্দেশ্যে বলেন, টিকেট কাটার সময় অবশ্যই প্রকৃত যাত্রীর নাম, মোবাইল এবং এনআইডি নাম্বার সঠিকভাবে দিয়ে টিকেট কাটার জন্য অনুরোধ করছি। ঘাটে চেকিংয়ের সময় কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি হলে কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না।

কালোবাজারি প্রসঙ্গে স্কোয়াবের সাধারণ সম্পাদক বাহাদুর বলেন, এবার টিকেট বিক্রি এবং পর্যটক যাতায়াতে প্রশাসনের কঠোর নজরদারি রয়েছে। প্রতিদিনই ভ্রাম্যমাণ আদালত, পরিবেশ অধিদপ্তরের এনফোর্সমেন্ট টিম কাজ করছে। টিকেট বিক্রির সময় এনআইডি নম্বর ব্যবহার, ট্রাভেল পাস জরুরি হওয়ায় কালোবাজারে টিকেট বিক্রির সুযোগ নেই। তবে এক শ্রেণির জালিয়াতি চক্র বিভিন্নজনের এনআইডি ব্যবহার করে অগ্রীম টিকেট সংগ্রহ করে তা অতিরিক্ত দামে বিক্রি করছে বলে প্রমাণ মিলেছে।

পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি কালোবাজারি প্রতিরোধে ট্যুরিস্ট পুলিশ গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করেছে বলে জানান সংস্থাটির কক্সবাজার রিজিয়নের প্রধান ও অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ।

তিনি বলেন, আমরা জাহাজ চলাচল শুরুর পর থেকে পর্যটকদের নিরাপত্তা ও সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে সব ধরনের সহযোগিতা করে আসছি। ইতোমধ্যে জালিয়াতির বেশ কিছু ঘটনা সামনে আসায় গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে, কালোবাজারির মাধ্যমে পর্যটক হয়রানি কঠোরভাবে দমন করা হবে।

সেন্টমার্টিন দ্বীপের অনন্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় গত ২২ অক্টোবর ১২টি নির্দেশনাসহ একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে।

ভ্রাম্যমাণ আদালতের দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানজিলা তাসনিম জানিয়েছেন, আমাদের টিম ভোর থেকেই প্রতিদিন দুই প্রান্তের ঘাটে (কক্সবাজার ও সেন্ট মার্টিন) নিয়োজিত রয়েছে। আগত পর্যটকদের পরিবেশ সংক্রান্ত নির্দেশনা মেনে চলতে উৎসাহিত করার পাশাপাশি অভিযোগ-অনিয়ম তদারকি করা হচ্ছে এবং কোন অনিয়মের প্রমাণ পেলে সাথে সাথে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

পাঠকের মতামত

টেকনাফের রঙ্গীখালী পাহাড়ে বিজিবির অভিযান: বিপুল অস্ত্র ও হ্যান্ড গ্রেনেড উদ্ধার

কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তবর্তী হ্নীলা ইউনিয়নের রঙ্গীখালী এলাকার গহীন পাহাড়ে বিশেষ অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র, ...

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অনুমতিহীন টার্ফ নির্মাণ, নিরাপত্তা ঝুঁকি ও সংঘাতের আশঙ্কা

কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির এলাকায় অত্রযত্র অনুমোদনবিহীন ফুটবল টার্ফ গড়ে উঠছে। প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ...

উখিয়ায় জাইকা প্রকল্পে পাহাড়ি মাটি দিয়ে সড়ক নির্মাণ!

জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)’র অর্থায়নে পরিচালিত ডিগলিয়া-চাকবৈটা সড়ক নির্মাণ প্রকল্পে গুরুতর অনিয়মের তথ্য পাওয়া ...