বাংলাদেশের একমাত্র পাহাড়ি দ্বীপ মহেশখালীর শাপলাপুর ইউনিয়নের ‘ধুইল্যাজুড়ি পাহাড়ি ঢালা’ পর্যটন সম্ভাবনায় ভরপুর। সুউচ্চ পাহাড়, সবুজ গালিচায় মোড়া টিলা আর আঁকাবাঁকা মেঠোপথ মিলিয়ে এখানকার দৃশ্য যেন এক অপূর্ব নৈসর্গিক মায়াজাল। পাহাড় আর সড়কের মিতালিতে সৃষ্টি হয়েছে এক অন্যরকম ভ্রমণ-আবহ। তবে দুর্গম পথের কারণে এখনও দূর-দূরান্তের পর্যটকদের কাছে পুরোপুরি পরিচিত হতে পারেনি এ স্থানটি। ফলে স্থানীয়দের পদচারণাই এখানে বেশি।
সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও পর্যটনবান্ধব উদ্যোগ পাওয়া গেলে ধুইল্যাজুড়ি পাহাড়ি ঢালা হয়ে উঠতে পারে দেশের এক আকর্ষণীয় ভ্রমণ স্পট। মহেশখালী সদর থেকে প্রায় ১৬ কিলোমিটার উত্তরে শাপলাপুরে এর অবস্থান। চকরিয়া-বদরখালী সেতু থেকে ৯ কিলোমিটার দক্ষিণে সড়কপথে মাত্র ১০ মিনিটে পৌঁছানো যায় শাপলাপুরের মুদিরছড়া বাজারে। বাজারসংলগ্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পেরিয়ে আধা কিলোমিটার হাঁটলেই চোখে পড়ে মনোমুগ্ধকর এ পাহাড়ি সৌন্দর্য। সহজ যাতায়াতের সুযোগ থাকায় দিন দিন স্থানীয় ভ্রমণপিপাসুদের উপস্থিতি বাড়ছে।
অনেকে ইতোমধ্যেই ধুইল্যাজুড়িকে ‘মিনি শাপলাপুর’ হিসেবে চিহ্নিত করছেন। আবার কারও কাছে এটি পরিচিত হচ্ছে ‘মহেশখালীর উঁচু পাহাড়ের এলাকা’ নামে। উপজেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিদিন বহু মানুষ এখানে ভিড় করছেন। ঘুরতে আসা স্থানীয়রা জানান, নির্ভেজাল প্রাকৃতিক পরিবেশে নিজেকে মেলে ধরতে চাইলে এ পাহাড়ি ঢালার কোনো বিকল্প নেই। পাহাড়ের শান্ত-নিবিড় পরিবেশও দর্শনার্থীদের মনে প্রশান্তি জাগায়।
পাশের মাতারবাড়ী ইউনিয়ন থেকে পরিবার নিয়ে ভ্রমণে আসেন মোহাম্মদ সোহেল। ধুইল্যাজুড়ির সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে তিনি বলেন, রাঙামাটি বা বান্দরবানের ঝুলন্ত সেতু দেখার শখ ছিল বহুদিনের। কিন্তু এখানে এসে যেন এক নতুন বিস্ময়ের দেখা মিলেছে। তিনি মনে করেন, ধুইল্যাজুড়ি পাহাড় এক অনন্য প্রাকৃতিক ভ্রমণ-স্বর্গ, যেখানে না এলে পর্যটনের আনন্দ অপূর্ণ থেকে যাবে।
স্থানীয় সংবাদকর্মী হোবাইব সজীব জানান, মহেশখালীতে দীর্ঘদিন থাকলেও তিনি আগে এত সুন্দর জায়গার সন্ধান পাননি। সবুজে ঘেরা পাহাড়ের বুকজুড়ে ডালপালা মেলে গাছের দৃশ্য দেখে তিনি অভিভূত। তার মতে, ধুইল্যাজুড়ি দেশের অন্যতম প্রাকৃতিক দর্শনীয় স্থান হওয়ার যোগ্যতা রাখে। এটি সংরক্ষণ ও পরিচর্যার মাধ্যমে এক নতুন পর্যটন সম্ভাবনা সৃষ্টি সম্ভব।
স্থানীয়রা বলছেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদ্যোগ থাকলে পাহাড়ের এ অঞ্চলকে ইকোপার্কে রূপান্তর করা যেতে পারে। এতে কর্মসংস্থানের নতুন দুয়ার খুলবে দ্বীপবাসীর জন্য।