প্রকাশিত: ০৫/০৬/২০২২ ১১:৪৬ এএম , আপডেট: ০৫/০৬/২০২২ ১১:৫৩ এএম

আজ বিশ্ব পরিবেশ দিবস। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘ একটাই পৃথিবী: প্রকৃতির ঐক্যতানে টেকসই জীবন। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে সরকারী ও বেসরকারী বিভিন্ন সংগঠন নানা ধরনের কর্মসূচী পালন করছে আজ। প্রতি বছর পরিবেশ দিবস পালিত হলেও দূষণ মুক্ত পরিবেশ বজায় রাখার ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের মাঝে যেমন সচেতনতা বৃদ্ধি পায়নি তেমনি যথাযথ কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাও রয়েছে। বর্তমানে উখিয়া উপজেলার বিভিন্ন স্থানে রাস্তার পাশে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ বৃদ্ধি পাচ্ছে দিনদিন। এসব ময়লা-আবর্জনার স্তূপ থেকে সৃষ্ট উৎকট দুর্গন্ধ সাধারণ মানুষের জন্য পীড়াদায়ক হয়ে উঠেছে। উখিয়া প্রেস ক্লাব তথা উখিয়া পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের কাছে প্রদান সড়কের পাশে প্রায় প্রতিদিন বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। আর তাতে মারত্নকভাবে বেড়ে যাচ্ছে বায়ু দূষণ । প্রধডহা সড়ক হওয়ার কারণে শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে সর্বশ্রেনীর মানুষ এই রাস্তা ব্যবহার করেন। হেটে যাওয়া পথচারী থেকে শুরু করে যানবাহনে আরোহন করা যাত্রীদেরকেও নাকমুখ চেপে ধরে রাস্তার এই অংশটি পার হতে দেখা যায় প্রতিদিন। কারণ একটাই, ময়লা-আবর্জনা থেকে ভেসে আসা উৎকট দুর্গন্ধ। এর আগে ৪ নং রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জনাব জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী উক্ত স্থানে ময়লা ফেলার উপর নিষেধাজ্ঞা দিলে সেখানে ময়লা ফেলা বন্ধ ছিলো। বর্তমানে নিষেধাজ্ঞার পোস্টারটি ছিড়ে যাওয়ার পর আবারও নতুন করে ময়লা ফেলা হচ্ছে। মূলত বাজারের ময়লা-আবর্জনাই এখানে ফেলা হচ্ছে। এছাড়া কাঁচাবাজার গুলোতে ছড়িয়ে -ছিটিয়ে থাকা ময়লা ও আবর্জনার কারণে বায়ু দূষণের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পতিত হচ্ছে। পরিবেশের বিপর্যয় মানে জীবনের বিপর্যয়। বায়ু দূষনণের কারণে হাঁপানিসহ ফুসফুসের রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। জাতীয় বাজেটে প্রতিবছর স্বাস্থ্য খাতের আকার বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে স্বাস্থ্যখাতে বাজেট ছিল ৩২ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা। আর ২০২২-২৩ অর্থ বছরের বাজেটেও স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাজেটে স্বাস্থ্যখাতের বরাদ্দ যতই বৃদ্ধি হোক না কেন, পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় সচেতনতা বৃদ্ধি এবং কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহণ করা না গেলে জনস্বাস্থ্যের অবনতি অনিবার্য।
টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) বাস্তবায়নে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। এর আগে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় সাফল্যের স্বীকৃতি পেয়েছে বাংলাদেশ। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যের অংশ হিসেবে শিশুমৃত্যু রোধে বড় মাপের সাফল্যের জন্য জাতিসংঘের পুরস্কার পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য প্রাকৃতিক সম্পদ ও জলবায়ুর সুরক্ষা প্রদানের কথা বলা হয়েছে এসডিজিতে যার পূর্বশর্ত হচ্ছে পরিবেশের সুরক্ষা। এসডিজি বাস্তবায়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে যে ১০টি বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে তাতে পরিবেশের সুরক্ষাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, আর বাকি ৯টির মধ্যে রয়েছে।

নারীর ক্ষমতায়ন, আশ্রয়ণ (গৃহহীন মানুষের পুনর্বাসন) প্রকল্প, শিক্ষা সহায়তা, আমার বাড়ি আমার খামার, ডিজিটাল বাংলাদেশ, কমিউনিটি ক্লিনিক, ও বিনিয়োগ উন্নয়ন।

পরিবেশের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সম্পর্কিত আইনের সংখ্যা প্রায় ২০০টি। কিন্তু তার বাস্তবায়ন হয় খুব কম। পরিবেশ দূষণ রোধে ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন এবং ১৯৯৭ সালে পরিবেশ দূষণ বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়। পরিবেশ আদালত আইন প্রণয়নের মাধ্যমে বিচারিক আদালতে বিশেষায়িত পরিবেশ বিচার ব্যবস্থা চালু করা হয় ২০০০ সালে। দেশের প্রতিটি বিভাগে এক বা একাধিক পরিবেশ আদালত এবং সারা দেশের জন্য এক বা একাধিক পরিবেশ আপিল আদালত প্রতিষ্ঠার বিধান রাখা হয় আইনে। পরিবর্তনের হাওয়ায় আগের আইনটি রহিত করে ২০১০ সালের পরিবেশ আদালত আইন নামে সম্পূর্ণ নতুন একটি আইন প্রণয়ন করা হয়। এছাড়া জাতীয় পরিবেশ নীতি (১৯৯২), জাতীয় পরিবেশ অ্যাকশন প্ল্যান (১৯৯২), বননীতি (১৯৯৪), বনায়ন মাস্টারপ্ল্যান (১৯৯৩-২০১২) ও পরিবেশ সংরক্ষণ আইন (১৯৯৫) উল্লেখযোগ্য। সর্বশেষ ২৩ ডিসেম্বর ২০২১ সালে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা (২০২১) গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। তাতে ড্রেনে কঠিন বর্জ্য ফেলার জন্য দুই বছরের কারাদণ্ড বা দুই লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধানের কথা বলা হয়েছে।
স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন (২০০৯) এর ওয়ার্ড সভার ক্ষমতা ও কার্যাবলী ৬ নং এর ১(ছ) তে- পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, পরিবেশ সংরক্ষণ, বৃক্ষ রোপণ, পরিবেশ দূষণ রোধ, দুনীর্তিসহ অন্যান্য সামাজিক অপকর্মের বিষয়ে গণসচেতনতা সৃষ্টি করার কথা বলা হয়েছ।
২০১৩ সালে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কর্তৃক প্রকাশিত উপজেলা প্রশাসনের দায়িত্ব ও কার্যাবলী সংক্রান্ত খসড়ার ৫৭(২) এ- পরিবেশ দূষণরোধে উদ্ভাবিত দেশীয় লাগসই (উপযুক্ত) প্রযুক্তির প্রচার ও ব্যবহারে উতসাহিতকরণের কথা বলা হয়েছে।
স্থানীয় এসব বাজার সরকারের রাজস্ব আয়ের উৎস। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে রাস্তার ভিক্ষুকও কলা-রুটি কিনতে গিয়ে রাষ্ট্রকে কর দেয়। তাই সাধারণ মানুষ তথা জনস্বাস্থ্য রক্ষা করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। আর তৃণমূল পর্যায়ে কাজটি করার কথা স্থানীয় সরকারের। আবার বাজারের মালিকানা যেহেতু ইজারাদারের হাতে থাকে। তাই বাজারের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দায়িত্বও তাদের নেয়া উচিৎ। তবে স্থানীয় সরকারকে এক্ষেত্রে কর্তৃত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।
লেখক-
এ. হোসাইন
গবেষক ও উন্নয়ন কর্মী
এম এস এস (ঢাবি) এম এস সি (জাপান)
যোগাযোগ- [email protected]

পাঠকের মতামত

নতুন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকানোই যখন বড় চ্যালেঞ্জ!

মিয়ানমারের তিনটি প্রধান এথনিক রেজিস্ট্যান্ট গ্রুপ—তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ), মিয়ানমার ন্যাশনাল এলায়েন্স (এমএমডিএ) এবং ...

একটি ফুল—

একটি ফুল, একটি ফুলের জন্যে কতো নিষ্পাপ গাছ প্রাণ হারালো, এই বর্বর শুকোনের দল বারংবার ...