উখিয়া নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ২০/১১/২০২২ ১০:৪৯ এএম , আপডেট: ২০/১১/২০২২ ১১:০৫ এএম

কক্সবাজারের টেকনাফে ২০১৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি প্রথম দফায় নিজদের ইয়াবা কারবারি স্বীকার করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আত্মসমর্পন করেছিলেন ১০২ জন। যার মধ্যে ছিলেন টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের মোহাম্মদ জামাল প্রকাশ জামাল মেম্বার এবং তার পুত্র শাহ আজম। আত্মসমর্পনের পর পুলিশের দায়ের করা ২ টি মামলায় সকলের সাথে কারাগারে যান পিতা-পুত্র। পরে জমিনে মুক্তি পাওয়ার পর ইয়াবা কারবারে আর জড়িত না হওয়ার অঙ্গিকার রক্ষা করেন নি।

কক্সবাজারে মাদক প্রতিরোধে সামাজিক সচেতনতার লক্ষ্যে কাজ করা সংগঠণ কক্সবাজার পিপলস্ ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ ইকবাল এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, জমিনে মুক্তি পাওয়ার পর শাহ আজম ২০২১ সালের ২৩ মে পুলিশের অভিযানে ইয়াবা সহ আবারও আটক হন। ওই দিন ১০ হাজার ইয়াবা সহ শাহ আজমের আরও ৩ সহযোগি আটক হয়েছিল।
ফরহাদ ইকবাল জানান, দুই দফায় ১২৩ জন শীর্ষ মাদক কারবারি অস্ত্র ও মাদক জমা দিয়ে আর মাদক ব্যবসায় না ফেরার শপথ নিয়েছিলেন। কিন্তু জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর তাদের কেউ কথা রাখেন নি।

কক্সবাজার পিপলস্ ফোরামের পক্ষে গত এক বছরের এক জরিপে দেখা গেছে, এরা বরং কৌশলে পুরোদমে ইয়াবা এমনকি ক্রিস্টাল মেথ এর মতো ভয়াবহ মাদক পাচারে ব্যস্ত হয়ে গেছেন। আর এ জন্য কালো টাকা খচর করে একে একে নির্বাচিত হয়েছেন জনপ্রতিনিধিও। টেকনাফের সবচেয়ে আলোচিত ইয়াবা সম্রাট ছিলেন হাজি সাইফুল ইসলাম। ২০২০ সালের দ্বিতীয় দফায় আত্মসমর্পনের উদ্দেশ্যে প্রকাশ্যে আসলেও
পুলিশের কথিত বন্দুক যুদ্ধে মারা যান। যার দুই শ্যালক জিয়াউর রহমান ও আবদুর রহমান প্রথম দফায় আত্মসমর্পন করে ছিলেন। সাইফুলের মৃত্যুর পর জামিনে মুক্তি পাওয়া শ্যালকদের নিয়ন্ত্রণে যায় ইয়াবা কারবার। সর্বশেষ ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন জিয়াউর রহমান।
জরিপ মতে, আত্মসমর্পনকারিদের মধ্যে রেজাউল করিম, এনামুল হক, নুরুল বশর নুরশাদ সহ অনেকেই ফের ইয়াবা কারবারে জড়িয়েছেন। আত্মসমর্পণে বহুল আলোচিত সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির ভাই-বেয়াইসহ আট স্বজন ছিলেন। ঘুরে-ফিরে এরাই নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন ইয়াবার কালো জগৎ।
সরকারি একটি দায়িত্বশীল সংস্থার তথ্য বলছে, আত্মসমর্পনকারিরা সকলেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ছিল। জমিনে মুক্তি পাওয়ার পর ইয়াবা কারবার থেকে তারা নিজকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছেন। অন্যান্যদের সাথে ঘুরে-ফিরে এরাই গডফাদারের ভুমিকা নিয়েছেন।
টেকনাফ উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি নুরুল বশর জানিয়েছেন, আত্মসমর্পনকারিরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরেননি।
একই কথা বলেছেন আত্মসমর্পনে প্রশাসনের সাথে আলোচনা করে সহযোগিতাকারী বেরসকারি টেলিভিশনের সাংবাদিক আকরাম হোসেনও।
এ পরিস্থিতিতে আগামি ২৩ নভেম্বর প্রথম দফায় আত্মসমর্পনকারি ১০১ ইয়াবা কারবারিদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া ২ টি মামলার রায় ঘোষণার দিন ধার্য্য করেছে আদালত। ওইদিন আদালতে হাজির থাকা ১৭ আসামির জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানো আদেশ দেয়া হয়েছে। কিন্তু জামিনে থাকার পরও শেষ শুনানীতে আদালতে আসেননি ৮৪ জন। যাদের জামিন বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ফরিদুল আলম জানান, ধার্য্য দিন এই মামলার রায় ঘোষণা করবেন কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল। ইয়াবা কারবারি হিসেবে এরা সকলেই স্বীকার করে আত্মসমর্পন করেছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষ এদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে সকল কিছু বিচারকের কাছে উপস্থাপন করেছেন।
এজাহারের বিবরণ মতে, ২০১৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি শনিবার টেকনাফ সদরের টেকনাফ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের উপস্থিতিতে ১০২ জন আত্মস্বীকৃত ইয়াবা কারবারি ও গডফাদার সাড়ে ৩ লাখ ইয়াবা, ৩০ টি দেশীয় তৈরি বন্দুক ও ৭০ রাউন্ড গুলিসহ আত্মসমর্পণ করেন।
ওইদিনই আত্মসমর্পণকারী ১০২ জনকে আসামী করে টেকনাফ মডেল থানায় অস্ত্র ও মাদক আইনে মামলা দায়ের করা হয়। বাদী হয়ে মামলাটি করেন টেকনাফ থানার তৎকালীন পরিদর্শক (অপারেশন) শরীফ ইবনে আলম। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয় পরিদর্শক এবিএমএস দোহাকে। মামলা দায়েরের দিনই আদালতের মাধ্যমে সকল আসামীকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কক্সবাজার জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। ১০২ জন আসামীর মধ্যে মামলার বিচারিক কার্যক্রম চলাকালে ২০১৯ সালের ৭ আগস্ট মোহাম্মদ রাসেল নামে এক আসামী অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ২০২০ সালের ২০ জানুয়ারি কক্সবাজারের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম তামান্ন ফারাহ এর আদালত ১০১ আসামীর বিরুদ্ধে মামলার অভিযোগপত্র (চার্জশীট) দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। পরবর্তীতে মামলাটি বিচারের জন্য জেলা ও দায়রা জজ আদালতে প্রেরণ করা হয়।
একই বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল সকল আসামীর উপস্থিতিতে শুনানী শেষে মামলার চার্জ গঠন করেন। বিচার শেষে ১৫ নভেম্বর মামলার রায় ঘোষণার জন্য ২৩ নভেম্বর দিন ধার্য্য করেন।
কারাগারে পাঠানো ১৭ জন :
নুরুল হুদা, শাহ আলম, আব্দুর রহমান, ফরিদ আলম, মাহবুব আলম, রশিদ আহমেদ, মোহাম্মদ তৈয়ব, জাফর আলম, মোহাম্মদ হাশেম ওরফে আংকু, আবু তৈয়ব, আলী নেওয়াজ, মোহাম্মদ আইয়ুব, কামাল হোসেন, নুরুল বশর ওরফে কালাভাই, আব্দুল করিম ওরফে করিম মাঝি, দিল মোহাম্মদ, মো. সাকের মিয়া ওরফে সাকের মাঝি।
জামিন বাতিল হওয়া ৮৪ আসামি :
সাবেক এমপি বদির ভাই আব্দুর শুক্কুর, বদির ভাই আমিনুর রহমান ওরফে আব্দুল আমিন, দিদার মিয়া, বদির ভাগনে মো. সাহেদ রহমান নিপু, আব্দুল আমিন, নুরুল আমিন, বদির ভাই শফিকুল ইসলাম ওরফে শফিক, বদির ভাই ফয়সাল রহমান, এনামুল হক ওরফে এনাম মেম্বার, একরাম হোসেন, ছৈয়দ হোসেন, বদির বেয়াই সাহেদ কামাল ওরফে সাহেদ, মৌলভী বশির আহমদ, আব্দুর রহমান, মোজাম্মেল হক, জোবাইর হোসেন, নুরুল বশর ওরফে কাউন্সিলার নুরশাদ, বদির ফুপাত ভাই কামরুল হাসান রাসেল, বর্তমানে টেকনাফ সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান ওরফে জিহাদ, মোহাম্মদ শাহ, নুরুল কবির, মারুফ বিন খলিল ওরফে বাবু, মোহাম্মদ ইউনুচ, ছৈয়দ হোসেন ওরফে ছৈয়দু, মোহাম্মদ জামাল ওরফে জামাল মেম্বার, মো. হাসান আব্দুল্লাহ, রেজাউল করিম ওরফে রেজাউল মেম্বার, মো. আবু তাহের, রমজান আলী, মোহাম্মদ আফছার, হাবিবুর রহমান ওরফে নুর হাবিব, শামসুল আলম ওরফে শামশু মেম্বার, মোহাম্মদ ইসমাঈল, আব্দুল গনি, মোহাম্মদ আলী, জামাল হোসেন, আব্দুল হামিদ, নজরুল ইসলাম, মোয়াজ্জেম হোসেন ওরফে দানু, মোহাম্মদ সিরাজ, মোহাম্মদ আলম, মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, হোসেন আলী, নুরুল কবির মিঝি, শাহ আজম, জাফর আহমেদ ওরফে জাফর, রুস্তম আলী, মোহাম্মদ হোছাইন, নুরুল আলম, শফি উল্লাহ, মো. জহুর আলম, মোহাম্মদ হুসাইন, মোহাম্মদ সিদ্দিক, রবিউল আলম, মঞ্জুর আলী, হামিদ হোসেন, মোহাম্মদ আলম, নুরুল আমিন, বোরহান উদ্দিন, ইমান হোসেন, মোহাম্মদ হারুন, শওকত আলম, হোছাইন আহম্মদ, মোহাম্মদ আইয়ুব, মো. আবু ছৈয়দ, মো. রহিম উল্লাহ, মোহাম্মদ রফিক, মোহাম্মদ সেলিম, নুর মোহাম্মদ, বদির খালাত ভাই মং অং থেইন ওরফে মমচি, মোহাম্মদ হেলাল, বদিউর রহমান ওরফে বদুরান, ছৈয়দ আলী, মোহাম্মদ হাছন, নুরুল আলম, আব্দুল কুদ্দুস, আলী আহম্মেদ, আলমগীর ফয়সাল ওরফে লিটন, জাহাঙ্গীর আলম, নুরুল আলম, সামছুল আলম শামীম, মোহাম্মদ ইউনুচ, নুরুল আফসার ওরফে আফসার উদ্দিন, মোহাম্মদ শাহজাহান আনছারী। সুত্র: দৈনিক কক্সবাজার

পাঠকের মতামত

মিয়ানমারে সংঘাত/টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে ঢুকল আরও ৯ বিজিপি সদস্য

মিয়ানমারের রাখাইনে সংঘাতময় পরিস্থিতিতে কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে মিয়ানমার সীমান্ত রক্ষী বাহিনী ...