প্রকাশিত: ১৬/০৬/২০১৭ ৮:৫৫ এএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ৪:২৬ পিএম

হাফিজুল ইসলাম চৌধুরী :
২০১২ সাল থেকে ভাঙনের শুরু। সর্বশেষ ২০১৫ সালের জুনে ¯্রােতের ধাক্কায় ৪০০ ফুট দীর্ঘ সংযোগ সড়ক নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। তারপর থেকে যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল দীর্ঘ দেড় বছর। এতে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে অন্তত দুই লাখের মতো মানুষকে। সম্প্রতি আবারো নদীর জলে বিলীন হতে আরম্ভ করেছে ওই এপ্রোচ সড়ক। এই গল্প কক্সবাজারের রামু উপজেলার বাঁকখালী নদীর ওপর নির্মিত গর্জনিয়া সেতুর। স্বপ্নের সেতুটি রক্ষা করতে পারবেন কিনা তা নিয়ে এখন শঙ্কায় আছেন স্থানীয়রা।

রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো.শাহজাহান আলি বলেন, ‘আমরা নদী শাসনের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডেকে অনেকবার অনুরোধ জানিয়েছি। কিন্তু তাদের বাজেট বরাদ্দ না থাকায় সাংসদ সাইমুম সরওয়ার কমল মহোদয়ের নেতৃত্বে স্থানীয় স্বল্প বাজেটে এপ্রোচ সড়ক পুন:নির্মাণ করে যানবাহন চলাচলের উপযোগী করা হয়। এই এপ্রোচ সড়ক রক্ষায় সবাইকে আন্তরিকতা নিয়ে এগিয়ে আসা দরকার।

স্থানীয় সূত্র জানায়, গুরুত্বপূর্ণ গর্জনিয়া সেতুর সংযোগ সড়ক বিলীন হয়ে যাওয়ার পর দীর্ঘ দেড় বছর রামু উপজেলার গর্জনিয়া-কচ্ছপিয়া ও ঈদগড়ের সঙ্গে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ও বাইশারি ইউনিয়নের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বন্ধ ছিল। এতে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হয়েছেন কৃষকেরা। এই বর্ষা মৌসুমে আবারো সংযোগ সড়ক বিচ্ছিন্ন হলে জনগণের মহাদুর্ভোগের পাশাপাশি নানামূখি সঙ্কট তৈরী হয়ে সবদিকে বিপর্যয় নেমে আসবে।

বৃহস্পতিবার (১৫জুন) সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, বাঁকখালী নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় গর্জনিয়া সেতুর ৮৫ভাগ অংশে পানি প্রবাহ বন্ধ রয়েছে। তাই নদীতে পানি বৃদ্ধি পেলেই সেতুর দক্ষিণপাশে আঘাত হেনে এপ্রোচ সড়ক ভাঙছে। আর জনমনে সৃষ্টি হচ্ছে কান্নার রোল। কিন্তু এই পর্যন্ত নদীর তলদেশ খনন করে সেতু রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ড কার্যত কোন ধরণের উদ্যোগ নেননি। অন্যদিকে পুন:নির্মিত এপ্রোচ সড়ক রক্ষায় কিছুটা হলেও প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে গর্জনিয়া ইউনিয়ন পরিষদ। চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যরাও শ্রমিকদের সঙ্গে কাজ করছেন।

গর্জনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘গর্জনিয়া সেতুকে নিয়েই আমাদের সব আবেগ আর অনুভূতি। সেতু অকার্যকর হলে অতদঞ্চলের লাখো মানুষ অচল। সেতু রক্ষায় নানা চেষ্টার পরও এখনো সরকারি বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। এটা অত্যন্ত দু:খজনক। বর্তমানে ইউপির নিজস্ব তহবিল থেকে সেতুর দক্ষিণপাশে বল্লি ব্যবহার করে নদীতে বাঁধ দেওয়া হচ্ছে। তবে পাউবোর বরাদ্দ না পেলে সেতু রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে।’

প্রতিবেদকের অনুসন্ধান বলছে ‘গর্জনিয়া সেতু রক্ষা করা সম্ভব না হলে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গর্জনিয়া ও বাইশারির আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটবে। তখন বাইশারিতে জঙ্গি আস্তানা তৈরী হওয়ার সমূহ সম্ভাবনাও রয়েছে। এসব বিষয় বিবেচনায় এনে বাঁকখালী নদীর তলদেশ খননের পর গতিপথ ঠিক করে সেতু রক্ষা করতে হবে। এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের আন্তরিকতা প্রয়োজন।’

ইতোপূর্বে ২০১৬ সালের এপ্রিলে কক্সবাজারে মানববন্ধন ও সমাবেশ শেষে জেলা প্রশাসক মো.আলী হোসেনকে স্মারকলিপি দিয়ে তিন দফা দাবির দ্রুত বস্তবায়ন চেয়েছিলেন এলাকাবাসী। সমাবেশে তিন দফা দাবি পেশ করেছিলেন তৎকালীন গর্জনিয়া ইউপি চেয়ারম্যান তৈয়ব উল্লাহ চৌধুরী ও সাংবাদিক হাফিজুল ইসলাম চৌধুরী।

দাবিগুলো ছিলো-বাঁকখালী নদীর চর খননের মাধ্যমে ¯্রােতের গতিপথ ঠিক করা, স¤্রাট শাহসুজা সড়ক ও গর্জনিয়া সেতুর দক্ষিণাংশের বিলীন সড়ক মেরামত করে যানবাহন চালু এবং বাঁকখালী নদীর ভাঙনের কবল থেকে ইউনিয়নের চারটি গ্রাম রক্ষার্থে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ। কার্যত সেতুর দক্ষিণাংশের বিলীন সড়ক মেরামত করা ছাড়া বাকি দুটি দাবির বাস্তবায়ন এখনো হয়নি।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্র জানায়, ২০০৫ সালে এলজিইডি প্রায় ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে বাঁকখালী নদীর ওপর ১৬১ মিটার দৈর্ঘ্যরে গর্জনিয়া সেতু নির্মাণ করে। সেতুটি রক্ষার জন্য ২০১৪ সালের এপ্রিলে নদীর তলদেশ খনন করে ¯্রােতের গতিপথ পরিবর্তন করা হয়। কিন্তু পলি জমে ওই অংশ পুনরায় ভরাট হয়ে যায়। পরে ২০১৫ সালের জুনে সেতুর দক্ষিণপাশের প্রায় ৪০০ ফুট সংযোগ সড়ক বিলীন হয়ে যায়।

জানতে চাইলে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক (ভারপ্রাপ্ত) কাজি মো.আবদুর রহমান বলেন, ‘গর্জনিয়া সেতু স্থায়ীভাবে রক্ষা করার জন্য পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলি সবিবুর রহমানের সঙ্গে আলোচনা করে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।’

পাঠকের মতামত

খেলাভিত্তিক শিক্ষায় ব্র্যাকের তথ্য বিনিময় অনুষ্ঠান

শিশুদের খেলাভিত্তিক শেখা, অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা ও মনোসামাজিক বিকাশ নিশ্চিতে ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচির উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হলো ...

১২ ফেব্রুয়ারি ভোট শেষ না হওয়া পর্যন্ত অনুমতি ছাড়া ওয়াজ মাহফিল নিষিদ্ধ

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ধর্মীয় প্রচার কার্যক্রমে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে। ...

জামিন বাতিল, মহেশখালীর তোফায়েল হত্যা মামলায় ৭ জন কারাগারে

কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার কালারমারছড়ার মোহাম্মদ শাহ ঘোনা গ্রামের বাসিন্দা জুলাই অভ্যুথানে নিহত শহীদ তানভীর ছিদ্দিকীর ...

ফেসবুক পোস্ট দিয়ে ছাত্রশক্তি নেত্রীর পদত্যাগ‘জুলাইয়ে থানার বাইক চোরের কাছে অনেক সময় হেরে যাই’

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সহযোগী সংগঠন জাতীয় ছাত্রশক্তি কক্সবাজার জেলা শাখার সদ্য ঘোষিত নতুন কমিটি’র ...