ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: ০৪/০৩/২০২৩ ৯:৩৯ এএম

আব্দুল কুদ্দুস::
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে সন্ত্রাসীদের গুলিতে প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) স্কোয়াড্রন লিডার রিজওয়ান রুশদী নিহত হওয়ার সাড়ে তিন মাস পার হলেও এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। মাদক চোরাচালানবিরোধী অভিযান চালাতে গিয়ে গত বছরের ১৪ নভেম্বর মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী ‘আরাকান স্যালভেশন আর্মির (আরসা) সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন রিজওয়ান। একই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হন র‍্যাব-১৫-কক্সবাজারের সদস্য সোহেল বড়ুয়া।

পুলিশ বলছে, আসামিরা সবাই মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের পাহাড়ে অবস্থান করছেন। শূন্যরেখা অতিক্রম করে সেখানে (রাখাইনে) গিয়ে গ্রেপ্তার অভিযান পরিচালনা করা পুলিশের আওতাবহির্ভূত।

ওই ঘটনার পর ২৩ নভেম্বর রাতে আরসার প্রধান কমান্ডার আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনিকে (৪৮) প্রধান আসামি করে ৩১ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা ৩০-৩৫ জনের বিরুদ্ধে নাইক্ষ্যংছড়ি থানায় মামলা করেন ডিজিএফআই কক্সবাজার কার্যালয়ের মাঠ কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন।

মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা হলেন নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক (ইনচার্জ) সোহাগ রানা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার সময় আরসার প্রধান কমান্ডারসহ মামলার আসামিরা ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু সীমান্তের কোনারপাড়ার পাশে শূন্যরেখার আশ্রয়শিবিরে ছিল। গত ১৮ জানুয়ারি রাতে শূন্যরেখার আশ্রয়শিবিরে মিয়ানমারের দুটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে গোলাগুলি-সংঘর্ষের পর অগ্নিকাণ্ডে পুরো আশ্রয়শিবিরটি পুড়ে গেলে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশ ভূখণ্ডের তুমব্রুতে ঢুকে পড়েন। এ সময় আরসা কমান্ডারসহ কয়েকশ রোহিঙ্গা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের পাহাড়ে ঠাঁই নেন। এখনো তাঁরা সেখানে আছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

পুলিশ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, গত ১৮ জানুয়ারি শূন্যরেখার আশ্রয়শিবিরের নিয়ন্ত্রণ ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আরসার সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় মিয়ানমারের আরেক সশস্ত্রগোষ্ঠী আরাকান রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও)। কয়েক ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনায় একজন রোহিঙ্গা নিহত হন ও দুই শিশু আহত হয়। এ ঘটনার পর শূন্যরেখার আশ্রয়শিবিরে ৬৩০টির বেশি ঘর আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। তাতে গৃহহীন হয়ে ৪ হাজার ৩০০ রোহিঙ্গা বাংলাদেশ ভূখণ্ডে তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠ ও আশপাশের কয়েকটি জায়গায় আশ্রয় নেয়।

গত ২৯ ও ৩০ জানুয়ারি ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও আশপাশের কয়েকটি এলাকায় অবস্থান নেওয়া শূন্যরেখার রোহিঙ্গাদের গণনা করে ৫৫৮ পরিবারের ২ হাজার ৯৮৭ জন রোহিঙ্গার তথ্য পায়। অবশিষ্ট প্রায় দেড় হাজার রোহিঙ্গা আত্মগোপন করেছিল। আবার সাত ধাপে (গত ৫-২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়ে) তুমব্রুতে গণনা করে ২৮ পরিবারের ৪৬০ জন রোহিঙ্গার হদিস মেলেনি।

পুলিশ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, আত্মগোপন করা শূন্যরেখার প্রায় দুই হাজার রোহিঙ্গার অধিকাংশই আরসা সমর্থক। রোহিঙ্গাদের মধ্যে মাদক চোরাচালন, অস্ত্র ও হত্যা মামলার পলাতক আসামি অনেক। গ্রেপ্তার এড়াতে কিছু রোহিঙ্গা মিয়ানমারে, অন্যরা উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরের পাশের পাহাড়ি আস্তানায় অবস্থান নিয়েছে বলে জানা গেছে।

সীমান্ত সুরক্ষার দায়িত্বে থাকা একাধিক সূত্র জানায়, ১৮ জানুয়ারির আগ পর্যন্ত টানা পাঁচ বছর শূন্যরেখার ওই আশ্রয়শিবিরকে মাদক (ইয়াবা ও আইস) চোরাচালানের আখড়ায় পরিণত করে সশস্ত্র গোষ্ঠীর সন্ত্রাসীরা। সেখান থেকে ইয়াবা-আইসের বড় চালান সরবরাহ হতো নাইক্ষ্যংছড়ি, বান্দরবান, কক্সবাজার, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জায়গাতে। মাদক বিক্রির টাকায় ভারী অস্ত্র কিনে শূন্যরেখার আশ্রয়শিবিরে প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো। শূন্যরেখার এই আশ্রয়শিবির থেকে রাতের বেলায় সশস্ত্র গোষ্ঠী উখিয়ার আশ্রয় শিবিরে ঢুকে চাঁদাবাজিসহ খুনখারাবির ঘটনা ঘটিয়ে পুনরায় শূন্যরেখাতে ফিরে যেত।

পুলিশ ও গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ডিজিএফআই কর্মকর্তা হত্যা মামলার প্রধান আসামি করা হয়েছে আরসার প্রধান কমান্ডার আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনিকে। তাঁর সঙ্গে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর বোঝাপড়া রয়েছে। শূন্যরেখার আশ্রয়শিবির ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান ও রোহিঙ্গা নেতা মাস্টার দিল মোহাম্মদ, সেক্রেটারি মৌলভি আরিফ, আরসার আঞ্চলিক কমান্ডার ওস্তাদ খালেদ, মৌলানা মোস্তফা, আবদুর রহমান, আরসা সদস্য জুবায়ের, শাকের কাউসার, নোমান চৌধুরী, জিন্নাত উল্লাহ, লাল মোহাম্মদ, হাফিজ নুর, রহিম উল্লাহ, মৌলভি আজিজসহ এজাহারনামীয় ৩১ জন এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৩০-৩৫ জনকে আসামি করা হয়। মামলার পর থেকেই শূন্যরেখার আশ্রয়শিবিরের চেয়ারম্যান-সেক্রেটারি শীর্ষ দুই রোহিঙ্গা নেতা মাস্টার দিল মোহাম্মদ ও মৌলভি আরিফেরও হদিস মিলছে না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে উখিয়ার আশ্রয়শিবিরের কয়েকজন রোহিঙ্গা নেতা বলেন, ডিজিএফআই কর্মকর্তা হত্যা মামলার আসামিরা কে কোথায় অবস্থান করছেন নিশ্চিত হওয়া না গেলেও ক্যাম্পে (উখিয়ার আশ্রয়শিবিরে) তাদের শক্তিশালী বাহিনী আছে। যোগাযোগও ঠিকমতো রাখা হয়। ইন্টারনেটভিত্তিক মাধ্যম ব্যবহার করে আরসা আশ্রয়শিবিরে চাঁদাবাজি-অপহরণ, মাদক চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ করছে। ক্যাম্পে আরসার সক্রিয় সদস্য কয়েক হাজার হতে পারে। সব ক্যাম্পে আরসার প্রভাব আছে। সন্ধ্যার পর বোঝা মুশকিল হয়ে পড়ে আশ্রয়শিবিরের কে শরণার্থী, আর কে সন্ত্রাসী।

বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ। এর মধ্যে ৮ লাখ এসেছে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর নির্যাতন-নিপীড়নের মুখে। সুত্র: প্রথম আলো

পাঠকের মতামত

মিয়ানমারে সংঘাত/টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে ঢুকল আরও ৯ বিজিপি সদস্য

মিয়ানমারের রাখাইনে সংঘাতময় পরিস্থিতিতে কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে মিয়ানমার সীমান্ত রক্ষী বাহিনী ...