উখিয়া নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৮/০৯/২০২২ ৯:৫০ এএম , আপডেট: ০৮/০৯/২০২২ ১১:৩৭ এএম

নাইক্ষ্যংছড়ি ঘুমধুম সীমান্তে মানুষের পদচারণা প্রায় নেই। বিজিবির ঘুমধুম সীমান্ত ফাঁড়ি এলাকার অবস্থা।

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সদর ঘুমধুম ইউনিয়নের মিয়ানমার সীমান্তে আবারও গোলাগুলির শব্দ পাওয়া যাচ্ছে।

৭ সেপ্টেম্বর বুধবার সকাল ৮টা থেকে ১২টা পর্যন্ত অন্তত ১৩ রাউন্ড গুলির শব্দ শোনা গেছে বলে নিশ্চিত করেছেন ঘুমধুম ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ। তবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি প্রশাসন।

গত রবি ও সোমবার ২দিন গোলাগুলি বন্ধ ছিল। তবে বুধবার সকাল থেকে নতুন করে নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের আশার তলী ফুলতলীসহ ঘুমধুমের রেজু আমতলী ও বাইশফাঁড়ি সীমান্তে গোলাগুলির শব্দ পাওয়া যায়।

ঘুমধুম ইউপি চেয়ারম্যান ও এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহীদের গোলাগুলি হলেও সীমান্ত এলাকা হওয়ায় বাংলাদেশের নাইক্ষ‍্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নে বসবাসকারীদের মধ্যে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও আতঙ্কও দেখা দেয়। বিশেষ করে দেশের অভ্যন্তরে মিয়ানমারের নিক্ষিপ্ত গোলা পড়া ও যুদ্ধবিমানের মহড়ার কারণে সীমান্তে শ্রমিকেরা কাজ বন্ধ রেখে নিরাপদ স্থানে সরে এসেছেন।

অন্যদিকে ঘুমধুম সীমান্তে বিরাজমান পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশের বর্ডার গার্ড (বিজিবি) সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।

বান্দরবান জেলা প্রশাসন ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে বাংলাদেশের বান্দরবান জেলার নাইক্ষ‍্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের আমতলী, তুমব্রু, রেজু ও বাইশফাঁড়ি এলাকায় সীমান্তের ওপারে প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার সে দেশের সরকারি বাহিনীর সঙ্গে আরাকান বিদ্রোহীদের গোলাগুলি চলতে থাকে। এর ফলে দুই দফায় নাইক্ষ‍্যংছড়ির ঘুমধুমের তুমব্রু উত্তরপাড়া এলাকায় ১০০ গজের মধ্যে দুটি মর্টার শেল এসে পড়ে। এতে হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি।

এরপর গত শনিবার (৩ সেপ্টেম্বর) মিয়ানমারের যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার মহড়া দেয়। এ সময় যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার থেকে অন্তত ৫০ রাউন্ড গোলাবর্ষণ হয়। এর মধ্যে দুটি গোলা ঘুমধুমের রেজু আমতলী এলায় এসে পড়ে। তবে এতে কেউ হতাহত হয়নি।

বান্দরবানের পুলিশ সুপার মো. তারিকুল ইসলাম ওই সময় গণমাধ্যমকে সীমান্তে গোলাগুলির কথা বলেন। জেলা প্রশাসন জানিয়েছিলেন, সীমান্তে গোলাগুলির ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে।

এদিকে শনিবার (৩ সেপ্টেম্বর ) যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার মহড়া ও গোলাগুলির ঘটনার পর গত রবি ও সোমবার (৫ ও ৬ সেপ্টেম্বর) সীমান্তে কোনো গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়নি।

ঘুমধুম ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ মঙ্গলবার দুপুরে এই প্রতিবেদক বলেন, দুই দিন সীমান্তে মিয়ানমারের গোলাগুলির ঘটনা না ঘটায় বাংলাদেশের মায়ানমার সীমান্তে ঘুমধুম ইউনিয়নের লোকজনের মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসে। দুই দিন বন্ধ থাকার পর মঙ্গলবার সকালে মিয়ানমারে ফের গোলাগুলি শুরু হয়। সীমান্তসংলগ্ন ঘুমধুমের লোকজন সকাল ৮টার দিক থেকে অন্তত ১৫ রাউন্ড গুলির শব্দ শোনে। এটা চলে সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত।

ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, তবে মঙ্গলবার মিয়ানমারের নিক্ষিপ্ত গোলা বাংলাদেশ সীমান্তের অভ‍্যন্তরে পড়েনি। তবে স্থানীয়দের মধ্যে ফের উৎকণ্ঠা দেখা দেয়। আজ সকালে সীমান্তসংলগ্ন মিয়ানমারে গোলাগুলির ঘটনায় বাংলাদেশের ঘুমধুম সীমান্তে বিজিবিকে সতর্ক অবস্থায় থাকতে দেখা গেছে।

এদিকে মঙ্গলবার সীমান্তের ঘুমধুম, গর্জনবুনিয়া বাইশ পারী চাকডালা আশারতলী সহ বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে লোকজনের সাথে কথা বলে জানাযায় , দুই দিন বন্ধ থাকার পর সীমান্তে ফের গোলাগুলির ঘটনায় ঘুমধুম, ইউনিয়ন, সদর ইউনিয়ন, সহ সীমান্ত এলাকায় বসবসরত মানুষের মাঝে নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়তে দেখা গেছে। বিজিবি সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।

৪ সেপ্টেম্বর রোববার সকাল থেকে সোমবার পর্যন্ত কোনো ধরনের গোলাগুলির শব্দ পাওয়া যায়নি বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দা ও রেজু গর্জনবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক উক্যচিং তংচংগা।

গর্জনবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছৈয়দ হামজা সাংবাদিকদের বলেন প্রতিদিন বর্মী (মিয়ানমার) সামরিক বাহিনীর গোলাগুলিতে বিদ্যালয়ে বসেই শোনা যেত বিকট শব্দ। ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে ছিলাম শঙ্কায়। তাই বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা অফিসার ত্রিরতন চাকমাকে অবহিত করেছিলাম।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিজিবির এক কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন, ‘সীমান্ত এলাকায় আমাদের (বিজিবি) নজরদারি ও টহল সব সময়ই থাকে। তবে সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনায় বিজিবি সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।’

অপর দিকে সীমান্তের পাহাড়ী ভুমির জুম চাষী সদর ইউনিয়ন এলাকার বাসিন্দা উচিং থোয়াই মার্মা ও জামাল উদ্দিন সহ অনেকে জানান, বর্মী বাহিনীর প্রতিদিনের গুলা গুলি ও হেলিকপ্টার থেকে গোলা বর্ষনের কারনে জুমের পাকা ধান কাটা মুশকিল হয়ে পড়েছে। শত শত একর পাকা ধান নষ্ট হওয়ার পথে। তাছাড়া জুম ক্ষেতে উৎপাদিত ফল ফলাদি নষ্ট হওয়ার পথে । চাষীরা কান্না জড়িত অবস্থায় এই প্রতিবেদককে বলেন এই অবস্থা চলতে থাকলে তারা খাদ্য সংকটে পড়তে পারেন। জুমের ধান ও ফল ফলাদি নষ্ট হওয়ার সমুহ সম্ভাবনার কথা ও চাষীরা জানান।

পাঠকের মতামত

তহবিল কমে যাওয়ায় নতুন সংকটের মুখে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা: জাতিসংঘ

তহবিল কমে যাওয়ায় বাংলাদেশের কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা এখন ভয়ানক পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছে বলে গত মঙ্গলবার ...

পরিবার নিয়ে বান্দরবান যাওয়ার পথে সড়কে প্রাণ গেলো এসবি কর্মকর্তার

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি মাইক্রোবাস সড়কের পাশের কালভার্টে ধাক্কা লেগে জাহিদ ইকবাল (৪৬) নামের ...

বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির সংবাদ সম্মেলন : ক্যাডার কম্পোজিশনের সুরক্ষাসহ নানা দাবি

ক্যাডার কম্পোজিশনের সুরক্ষা, পদোন্নতি, পদসৃজন, স্কেল আপগ্রেডেশন ও আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসনসহ বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের ...