ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: ২৮/০৮/২০২৫ ৮:৩৫ এএম

রাজধানীসহ দেশের অধিকাংশ সাধারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের নির্ধারিত ড্রেসকোড আছে। এতে বিপাকে পড়ছেন পর্দা করতে চাওয়া ছাত্রীরা। পোশাকবিধির বাইরে গিয়ে বড় ওড়না বা হিজাব পরা নিয়ে বাধা-বিপত্তির মুখে পড়ছেন তারা। মাঝেমধ্যে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভূমিকায় সমালোচনার ঝড় উঠছে। এমনকি কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়েও হিজাব বা নেকাব পরা নিয়ে বাধার মুখে পড়ার ঘটনা ঘটছে। এ নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের আন্দোলনসহ বিভিন্ন অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটতে দেখা যায়। সর্বশেষ রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি কাণ্ডে চাপা অস্থিরতা বিরাজ করছে।

শিক্ষক-অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্টদের দাবি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ড্রেসকোড ও হিজাব নিয়ে বিতর্ক বা জটিলতার স্থায়ী সমাধান হওয়া উচিত। এক্ষেত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশ হিসেবে এবং অনৈতিকতা থেকে রক্ষার জন্য সাধারণভাবে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই শালীন ড্রেসকোড থাকা দরকার। এর বাইরে আগ্রহীদের হিজাব বা বড় ওড়না পরার সুযোগ রেখেই ড্রেসকোড নির্ধারণ করতে হবে। তাছাড়া সরকারিভাবে সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য একই পোশাকবিধি নির্ধারণ করে দেওয়া, হিজাবের সুফল তুলে ধরা এবং এতে বাধাদানকারীদের শাস্তির আওতায় আনা জরুরি।

গত ২৪ আগস্ট ভিকারুননিসা স্কুলের বসুন্ধরা শাখায় ওড়না পরার কারণে শিক্ষার্থীদের ক্লাস থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে শিক্ষক ফজিলাতুন নাহারের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। দুদিন পর একপর্যায়ে প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাজেদা বেগমের সই করা নোটিসে ফজিলাতুন নাহারকে বরখাস্ত করার কথা জানানো হয়।

নোটিসে বলা হয়, স্কুলের বসুন্ধরা প্রভাতি শাখার ষষ্ঠ শ্রেণির একটি শ্রেণিকক্ষ থেকে ২২ শিক্ষার্থীকে হিজাব পরার কারণে বের করে দেওয়ার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এবং অ্যাডহক কমিটির (অস্থায়ী কমিটি) সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ওই শিক্ষককে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। তাকে কেন চাকরি থেকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করা হবে না, তার কারণ সাত কর্মদিবসের মধ্যে লিখিতভাবে জানাতে বলা হয় নোটিসে।

ওই শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করার প্রতিবাদে বুধবার বিক্ষোভ করেন প্রতিষ্ঠানটির বসুন্ধরা শাখার সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা। এ সময় বরখাস্ত শিক্ষক ফজিলাতুন নাহারকে পুনর্বহাল, ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং ‘অপপ্রচারকারীদের’ শাস্তির দাবি জানানো হয়। এ নিয়ে প্রতিষ্ঠানটিতে বেশ অস্থিরতা বিরাজ করছে।

যদিও ভিকারুননিসা স্কুলের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাজেদা বেগম আমার দেশকে বলেন, ‘এখানে হিজাব পরায় কোনো বাধা নেই। আমাদের নির্ধারিত হিজাব আছে। অনেক শিক্ষক-শিক্ষার্থীই হিজাব পরে।’

তবে বাস্তবে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ড্রেসকোডের বাইরে গিয়ে হিজাব বা ওড়নাধারী শিক্ষার্থীদের প্রতি কেউ কেউ নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করেন, এতে সংশ্লিষ্টদের বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ার অভিযোগ পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু আমার দেশকে বলেন, রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে ১৯৭৩ সাল থেকে ড্রেসকোডে মেয়েদের দুটি ওড়না ও মুসলিম ছেলেদের মাথায় টুপি ছিল। কিন্তু ২০২০ সালে স্কুলটির সভাপতির দায়িত্বে থাকা আওয়ামীপন্থি এক সচিব ওই ড্রেসকোড বাতিল করেন। এ নিয়ে বিভিন্ন ক্যাম্পাসে আন্দোলন হয়। আন্দোলনের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্টরা তিনটি মামলা করে। তাতে তিনি ও ফোরামের কয়েকজন জেলেও যান। পরে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হলে আবার আগের ড্রেসকোড ফিরিয়ে আনা হয়।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় হিজাবের সুযোগ রেখে ড্রেসকোড থাকা উচিত জানিয়ে জিয়াউল কবির দুলু বলেন, ‘আমরা ২০২২ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দেওয়া আবেদনে জানিয়েছিলাম, সরকারিভাবে সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ড্রেসকোড নির্ধারণ করে দেওয়া হোক। তবে নৈতিক অবক্ষয় রোধে অবশ্যই শালীনতা বজায় রেখেই সব ড্রেসকোড করতে হবে। সে দাবি আবারও জানাচ্ছি।’

রাজধানীর খিলগাঁও ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুলের সিনিয়র শিক্ষক কাকলী পারভীন বলেন, বাংলাদেশের মতো মুসলিম দেশের স্কুলে মেয়েদের ড্রেসকোড শালীন থাকা উচিত। তাতে অবশ্যই হিজাবের সুযোগ রাখতে হবে। কিছু স্কুলের ড্রেস খুবই আপত্তিকর।

মোহাম্মদপুরের অন্যতম খ্যাতনামা ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, ওই স্কুলে মেয়েদের হিজাব পরতে বাধা দেওয়া হয়। তার মেয়ে হিজাব পরে যাওয়ায় স্কুল থেকে তাকে সিস্টারের রুমে ডেকে নিয়ে স্কুল কম্পাউন্ডের মধ্যে হিজাব পরতে নিষেধ করা হয়। পরে ওই অভিভাবক স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেখা করলে তাকে বলা হয়, এটা ব্রিটিশ কারিকুলাম ও ড্রেসকোড অনুযায়ী চলে। এ নিয়ম সবাই মানতে বাধ্য।

এ বিষয়ে শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন আমার দেশকে বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সাম্য ও ইনসাফ শিক্ষা দেয়। ধনী-দরিদ্র সব শিক্ষার্থী সমান। সেক্ষেত্রে একটি সুনির্দিষ্ট ড্রেসকোড থাকা বাঞ্ছনীয়। তবে এমন ড্রেস নির্ধারণ করা উচিত, যেন শালীনতা বজায় থাকে, ধর্মীয় ও মানবিক মূল্যবোধ নিশ্চিত হয় এবং শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক উন্নয়নে ব্যাঘাত না ঘটে।

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বোর্ড অব গভর্নরসের গভর্নর এবং তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ড. খলিলুর রহমান মাদানী বলেন, ড্রেসকোড ও হিজাব বিষয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে বিশেষ আইন জারি করতে হবে। আগ্রহীদের অবশ্যই হিজাব পরার সুযোগ রাখতে হবে এবং এতে বাধাদানকারীদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। এছাড়া হিজাবের সুফলের বিষয় তুলে ধরে সারা দেশে সরকারিভাবে প্রচার চালানোর প্রস্তাব দেন তিনি।  আমারদেশ

পাঠকের মতামত

কক্সবাজার -চট্টগ্রাম মহাসড়ক নয়, মৃত্যুর পথ: যাত্রীর আতঙ্ক বাড়ছে দিন দিন

কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দিনদিন বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা। গত কয়েক সপ্তাহে একাধিক প্রাণঘাতী দুর্ঘটনায় বহু হতাহতের ঘটনা ...

মানবতার আলো জ্বলে উঠল কক্সবাজারে- তারুণ্যের অভিযাত্রিক পরিবার

ওমর ফারুক (সংবাদদাতা) কক্সবাজারে ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ালো সামাজিক সংগঠন তারুণ্যের অভিযাত্রিক ...