উখিয়া নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৮/১০/২০২২ ৭:৫৫ এএম

কক্সবাজারের বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ঘটছে একের পর এক খুনের ঘটনা। গেল বছর রোহিঙ্গা তরুণদের দিয়ে স্বেচ্ছা পাহারা ব্যবস্থা চালুর পর বেশ কিছু দিন বড় ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানো গেলেও সম্প্রতি ফের উত্তপ্ত ক্যাম্প। মিয়ানমারভিত্তিক আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) পরিচয়ধারী সন্ত্রাসীরা নতুন ছক নিয়ে এগোচ্ছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনবিরোধী এই সংগঠনটি ক্যাম্পের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ নিতে মরিয়া। চাঁদাবাজি, অপহরণ, মাদক চোরাচালান ও আশপাশ এলাকায় ব্যবসা-বাণিজ্যে একক প্রভাব রাখতে চায় তারা।

এ ছাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পকেন্দ্রিক আরেক সংগঠন ‘ইসলামী মাহাজ’কে রুখতেও আগ্রাসী আরসা। তারা মনে করে, জনপ্রিয় রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহর আদর্শে বিশ্বাসী ইসলামী মাহাজ শক্তিশালী হলে সাধারণ রোহিঙ্গাদের মধ্যে ভীতি সঞ্চার করা আরসার পক্ষে কষ্টসাধ্য হবে। এ ছাড়া সম্প্রতি মিয়ানমার সীমান্তের ওপারে ধারাবাহিক গোলাগুলির পর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সন্ত্রাসী চক্রের আনাগোনা বেড়েছে। যারা বাইরে ছিল তাদের কেউ কেউ ক্যাম্পে এসে আশ্রয় নিয়েছে। গত চার মাসে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ছয় মাঝিসহ অন্তত ২০ জন খুন হয়েছেন। এর মধ্য সাতজন স্বেচ্ছাসেবক। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার দুই রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়।
১৪-এপিবিএনের অধিনায়ক (অতিরিক্ত ডিআইজি) সৈয়দ হারুন অর রশীদ সমকালকে বলেন, মিয়ানমার সীমান্তের ওপারে গোলাগুলির কারণে শূন্যরেখার ক্যাম্প থেকে কৌশলে অনেক রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী উখিয়া-টেকনাফের ক্যাম্পগুলোতে ঢুকে পড়েছে। মূলত তারাই ক্যাম্পে নতুন করে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চালাচ্ছে। এই সন্ত্রাসীদের ধরতে এপিবিএন প্রতিদিন কৌশল বদলে অভিযান চালাচ্ছে।
আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচ) নেতা সৈয়দ মাহামুদ জানান, যারা প্রত্যাবাসনের পক্ষে এবং মাদক ও মানব পাচারসহ রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন অপরাধ ঠেকাতে কাজ করছে তারা ক্যাম্পে ভয়ে আছে। রোহিঙ্গারা যাতে নিজ দেশে ফিরে না যায় এজন্য আরসা প্রতিনিয়ত ক্যাম্পে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বেশ কয়েকজন আরসার পরিচয়ধারী সন্ত্রাসী সম্প্রতি জামিন পেয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছে ইয়াহিয়া ওরফে সেলিম ও নুরুল বশর। ক্যাম্পে ফিরেই পিকনিক পার্টি ও ফাঁকা গুলি ছুড়ে তাদের নতুন অবস্থান জানান দেয়। এ ছাড়া আরসার পরিচয়ে আরও যারা সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাচ্ছে তারা হলো- খালেদ, ছমি উল্লাহ ওরফে নুর কামাল, মৌলভী আকিজ, মো. লালু, মো. মুছা, হাফেজ নুর মোহাম্মদ, মৌলভী জোবাইর, মৌলভী এহেসান, ওক্কাস, মাস্টার ইউনুছ, মৌলভী শাহ আলম ও মুহাম্মদ শাহা আলম।

রোহিঙ্গা নেতারা জানিয়েছেন, সম্প্রতি আরসা পরিচয়ে বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গাকে হুমকি দেওয়া হয়। প্রশাসনকে সহায়তা করলে তাদের পরিণতি ভালো হবে না বলে শাসানো হয়। হুমকি যারা পেয়েছেন তাঁদের মধ্যে রয়েছেন আবুল বাশার, হাবিব, আয়াজ ও নুর আমিন। তাঁদের অনেককে বলা হয়- ক্যাম্পের ভেতরে যেসব দোকান রয়েছে, সেখান থেকে মাসিক চাঁদা পেতে আরসাকে দিতে হবে। আবার ইসলামী মাহাজকে বার্তা পাঠানো হয়েছে- ক্যাম্পে থাকতে হলে আরসাকে ভাগ দিতে হবে।
একাধিক রোহিঙ্গা মাঝি সমকালকে জানান, একসময় আরসার পরিচয়ধারী সন্ত্রাসীরা ক্যাম্পে টাকার বিনিময়ে বিচার-সালিশ বসাত। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা ও সাধারণ রোহিঙ্গাদের প্রতিরোধের মুখে কিছু দিন তারা কোণঠাসা হয়ে পড়লেও আবার নতুনভাবে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে। আরসা নেতা পরিচয়ধারী ইয়াহিয়া চারটি বিয়ে করেন। বছর খানেক আগে মালয়েশিয়া প্রবাসী এক রোহিঙ্গা তরুণের স্ত্রীর সঙ্গে অশালীন আচরণ করলে সাধারণ রোহিঙ্গারা তাকে হাতেনাতে ধরে পুলিশে দেয়। নারী নির্যাতন, ইয়াবা কারবারের মামলায় তিন দফা কারাগারে যাওয়ার পর আবার জামিনে বেরিয়ে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাচ্ছে সে। এখন আরসা ‘সিঙ্গেল অ্যাটাক’ করার কৌশল নিচ্ছে।

আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) পুলিশ জানায়, গত বছরের অক্টোবর থেকে চালু হয় ক্যাম্পে ব্লকভিত্তিক স্বেচ্ছা পাহারা ব্যবস্থা। উখিয়া ও টেকনাফে ৮-এপিবিএনের আওতায় ক্যাম্পে প্রতি রাতে প্রায় ৪ হাজার স্বেছাসেবী রোহিঙ্গা নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে। এ ছাড়া ১৪-এপিবিএনের আওতায় ৩ হাজার ৫১৬ জন এবং ১৬-এপিবিএনের আওতায় ৩ হাজার ৭০০ স্বেচ্ছাসেবক একই কাজ করছে। এরপর থেকে ক্যাম্পভিত্তিক অপরাধীরা চাঁদাবাজি, অপহরণ, মাদক চোরাচালান ও মানব পাচার কমে আসে। এখন আবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের চ্যালেঞ্জের মুখে।

উখিয়ার একটি ক্যাম্পের এক রোহিঙ্গা নেতা বলেন, আরসা ক্যাম্পের সাধারণ রোহিঙ্গাদের হুমকি-ধমকি দিয়ে জোর করে তাদের দলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। তারা নতুন সদস্য সংগ্রহ করছে। তাদের দলে যোগ না দিলে হত্যার হুমকিও দিচ্ছে। হুমকিদাতা কয়েকজনকে শনাক্ত করেছে প্রশাসন।

উখিয়ার কুতুপালং এলাকার স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘ক্যাম্পে হঠাৎ করে যেভাবে খুনোখুনি শুরু হয়েছে এতে করে স্থানীয় মানুষও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী সমকালকে বলেন, নেতা মুহিবুল্লাহ রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত নিতে কাজ শুরু করেছিলেন। আন্তর্জাতিক মহলে তিনি হয়ে উঠেছিলেন রোহিঙ্গা মুখপাত্র হিসেবে। এটা মেনে নিতে পারেননি আরসার সদস্যরা। প্রত্যাবাসনের পক্ষে কেউ কাজ করলেও আরসার রোষানলে পড়তে হয়। আরও টার্গেট কিলিংয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে। সাধারণ রোহিঙ্গাদের মধ্যে ভীতি ছড়াতে আরসার একের পর এক মাঝি ও স্বেচ্ছাসেবকদের নিশানা করছে।

২০২১ সালের ২২ অক্টোবর ক্যাম্প-১৮ এর একটি মাদ্রাসায় ৬ জনকে হত্যা করা হয়। এর আগে ২৯ সেপ্টেম্বর হত্যা করা হয় রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহকে। সুত্র: সমকাল

পাঠকের মতামত

মিয়ানমারে সংঘাত/টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে ঢুকল আরও ৯ বিজিপি সদস্য

মিয়ানমারের রাখাইনে সংঘাতময় পরিস্থিতিতে কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে মিয়ানমার সীমান্ত রক্ষী বাহিনী ...