প্রকাশিত: ০৯/০৪/২০১৮ ৯:১৬ এএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ৪:২৫ এএম

উখিয়া নিউজ ডেস্ক::
মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনা অভিযানের ঘটনায় প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশের কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ সীমান্তে পালিয়ে আসা প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গার সে দেশে ফিরে যাওয়া প্রায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এই সংকটের সমাধান আপাতত হচ্ছে না বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
তাই বর্তমান পরিস্থিতিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে জোর কূটনৈতিক তৎপরতার বিকল্প নেই বলে সতর্ক করেছেন। অন্যথায় এ সমস্যা বাংলাদেশে ঘাড়ে স্থায়ীভাবে চেপে বসতে পারে বলে মনে করছেন তারা।
গত বছরের ২৫ আগস্ট থেকে রাখাইনে সন্ত্রাস দমনের নামে নৃশংস গণহত্যা শুরু হলে ৬ লাখ ৯০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে সীমান্তসংলগ্ন বাংলাদেশের কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়। এর আগে একই কারণে পালিয়ে আসা আরো প্রায় ৫ লাখ রোহিঙ্গা কক্সবাজারে অবস্থান করছিল।
বাংলাদেশের পক্ষে বিপুলসংখ্যক এই শরণার্থীর বোঝা বহন করা অসম্ভব বলে তাদের মিয়ানমারে ফেরাতে দ্রুত দ্বিপক্ষীয় কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু হয়।
রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারকে রাজি করাতে গত বছরের ২৩ অক্টোবর বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল দেশটিতে সফরে যান। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ওই সফরে মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে রাজী হয় ও কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছাতে প্রত্যাবাসন চুক্তি করতেও সম্মত হয়। পরে দুই দেশের প্রতিনিধিদের মধ্যে এ বিষয়ক একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
একই বছরের ২৩ নভেম্বর দুই দেশের মধ্যে একটি সম্মতিপত্র স্বাক্ষরিত হয়। মিয়ানমারের পক্ষে দেশটির স্টেট কাউন্সিলর ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী অং সান সু চির পক্ষে তার দফতরের মন্ত্রী কিয়াও সোয়ে এবং বাংলাদেশের পক্ষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ওই সম্মতিপত্রে স্বাক্ষর করেন।
এর ভিত্তিতে দুই দেশ যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করে। চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি ওই গ্রুপের প্রথম বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিভিন্ন বিষয় ঠিক করে ‘ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট’ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
চুক্তি অনুযায়ী স্বাক্ষরের তারিখ থেকে দুই বছরের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার প্রশ্রিুতি দেয় মিয়ানমার। কিন্তু তারপরই শুরু হয় দেশটির নানা টালবাহানা।
প্রত্যাবাসন চুক্তি অনুসারে বাংলাদেশ প্রথম ধাপে আট হাজার ৩২ জন রোহিঙ্গার একটি তালিকা মিয়ানমারকে দেয়। ওই তালিকা যাচাই করে নানা অজুহাতে মাত্র ৬৭৫ জনকে ফিরিয়ে নিতে রাজী হয় তারা।
এ ছাড়া রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের স্থান প্রস্তুত নয়, প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ করতে দেরি হচ্ছে, পর্যাপ্ত জনবলের অভাব, মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতা রয়েছে, রাখাইন পরিস্থিতি শান্ত হয়নি বলে প্রচারণা চালিয়ে মিয়ানমার পরিস্থিতিকে ক্রমশ জটিল করছে।
সর্বশেষ বাংলাদেশের বৌদ্ধদের রাখাইনে গেলে নাগরিকত্বের প্রস্তাবের মধ্য দিয়ে তারা আগুনে ঘি ঢেলেছে।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে এমন জটিল পরিস্থিতিতে গত ৫ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার হতাশা ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ঢাকায় সফররত আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মহাসচিব সলিল শেঠির সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে রোহিঙ্গা পুনর্বাসনে চুক্তি সম্পাদিত হওয়া সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান অগ্রগতি লক্ষ করা যাচ্ছে না।’ স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্যে সন্দেহের জন্ম দিয়েছে যে, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সত্যিই অনিশ্চিত হয়ে গেল কি না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত ও পররাষ্ট্র সচিব এম হুমায়ুন কবির বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে এটা স্পষ্ট যে, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রায় অনিশ্চিত হয়ে গেছে। তা ছাড়া মিয়ানমারের কথা ও কাজের কোনো মিল নেই। তাদের ওপর আস্থা রাখাও কঠিন। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলোও একই কথা বলছে, সেখানে রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার পরিবেশ নেই।’
রোহিঙ্গাদের নিয়ে বাংলাদেশ দীর্ঘস্থায়ী সমস্যায় জড়িয়ে পড়েছে কি না জানতে চাইলে হুমায়ুন কবির বলেন, ‘সে আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়ার সুযোগ নেই।’ শান্তির প্রচারক বলে পরিচিত বৌদ্ধ ভিক্ষুরাও ঘৃণা ছড়িয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. শামছুল আলম বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যুটি সমাধানে বরাবরই মিয়ানমারের মধ্যে আন্তরিকতার অভাব লক্ষ করা গেছে। সমস্যার সমাধানে আগেও কথা রাখেনি দেশটি। এবারো ঠিক সে পথেই হাঁটছে বলেই মনে হচ্ছে।
তার প্রমাণ, প্রত্যাবাসন চুক্তি হওয়ার পরও এখনো রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। একই সঙ্গে চুক্তি বাস্তবায়নের তাগিদ দিলেই নানা অজুহাত দেখাচ্ছে। এটাই সন্দেহের জন্ম দেয়। এর অর্থ একটাই, তারা চায় না রোহিঙ্গারা সেখানে ফিরে যাক।’
পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য মোটেও সুবিধাজনক নয় মন্তব্য করে এ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বলেন, ‘সমস্যার শেকড় আরো গভীর হওয়ার আগে যে কোনো সময়ের চেয়ে জোর তৎপরতার বিকল্প নেই। অন্যথায় এ সমস্যা বাংলাদেশের ঘাড়ে স্থায়ীভাবে চেপে বসতে পারে।’
রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া বাংলাদেশের হাতে নেই বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম।
তিনি বলেন, ‘এর আগে ১৯৯০ সালে বাংলাদেশে আসা মাত্র ২ লাখ ৩৬ হাজার রোহিঙ্গাকে ফেরত নিতে ১৩ বছর সময় নিয়েছিল মিয়ানমার। এবার রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ১০ লাখেরও বেশি। এই বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাকে ফেরত নিতে কত বছর সময় নেবে, তা মিয়ানমারের ওপরই নির্ভর করছে।’

পাঠকের মতামত

২২ টি মোবাইল টীমের মাধ্যমে উখিয়ায় স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে প্রান্তিক

তাপমাত্রা প্রায় ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যে তাপমাত্রায় মানুষ ঘর থেকে বের হতে ভয় পায়। সেখানে ...