ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: ১২/১২/২০২২ ১০:২৫ এএম

রোহিঙ্গাদের মানবিক কার্যক্রম পরিচালনায় নিয়োজিত বিদেশি কর্মীদের পেছনে বাজেটের একটি বড় ব্যয় হয়। এই ব্যয় কমাতে বিদেশিদের বাংলাদেশি নিয়োগ বাড়াতে চায় সরকার। অর্থায়ন সংকটও এর পেছনে বড় একটি কারণ।

জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক সমন্বয়কারীর কার্যালয় (ইউএনওসিএইচএ) প্রকাশিত হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের জন্য চলতি বছর সবচেয়ে কম অনুদান এসেছে। বছর শেষ হতে চললেও এখন পর্যন্ত চাহিদার মাত্র ৪৪ শতাংশ অর্থ সংগ্রহ করা গেছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট কূটনৈতিক সূত্র বলছে, বৈশ্বিক মন্দা এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবে দাতা দেশগুলো প্রতিশ্রুত অর্থ দিতে পারেনি। যার প্রভাব পড়ছে রোহিঙ্গা এবং স্থানীয়দের ওপর।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম দৈনিক বাংলাকে বলেন, আমাদের বাজেট সীমিত, যার বড় অংশ প্রশাসনিক ব্যয়ে চলে যায়। বিদেশি নাগরিক বা ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ডের এমপ্লয়মেন্টের জন্য খরচ অনেক বাড়ে। তাই আমরা বেশি সংখ্যক বাংলাদেশি নিয়োগের বিষয়ে উৎসাহিত করব।

এ ধরনের কার্যক্রম পরিচালনার সক্ষমতা বাংলাদেশের আছে বলে মনে করেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, বাংলাদেশের একাধিক এনজিও দেশের বাইরে গিয়ে কঠিন পরিস্থিতিতে দায়িত্ব পালন করেছে। বিদেশিদের পরিবর্তে বাংলাদেশি নিয়োগ হলে প্রশাসনিক এই খরচ অনেকটাই কমে আসবে।

জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর তাদের প্রশাসনিক ব্যয় প্রকাশ করতে চান না বলেও জানান শাহরিয়ার আলম।

যদিও নভেম্বরে ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য দাতাদের দেয়া তহবিল থেকে জাতিসংঘের স্থানীয় অফিস ব্যবস্থাপনার (প্রশাসনিক খরচ) জন্য মাত্র ৬ থেকে ৭ শতাংশ ব্যয় করা হয়।

এটা নিয়ে নির্দিষ্ট কোনো গবেষণা না থাকলেও এই খরচ ৭ শতাংশের বেশি বলে দাবি করেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।

২০২২ সালে জাতিসংঘ জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যানে (জেআরপি) অর্থের মোট চাহিদা ধরা হয় ৮৮ কোটি ১০ লাখ ডলার। ইউএনওসিএইচএর তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ৪৯ কোটি ডলার সহযোগিতা এখনো পাওয়া যায়নি। মিলেছে মাত্র ৩৯ কোটি ১৩ লাখ ডলার।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেয়ায় দাতা দেশ ও সংস্থাগুলোর প্রতিশ্রুত অর্থ দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। ইউক্রেনের শরণার্থীদের দিকেও মনোযোগী হতে হয়েছে পশ্চিমা দেশগুলোকে, যারা রোহিঙ্গাদের জন্য বড় অর্থ সহায়তা দিয়ে থাকে।

তবে পরিকল্পনার বাইরে রোহিঙ্গাদের জন্য এ বছর ৫ কোটি ৯৭ লাখ ডলার সহায়তা এসেছে। ফলে রোহিঙ্গা সহায়তায় মোট ৪৫ কোটি ১০ লাখ ডলার পাওয়া গেছে।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মিয়ানমার অনুবিভাগের মহাপরিচালক মিয়া মো. মাইনুল কবির দৈনিক বাংলাকে বলেন, এই মুহূর্তে আমাদের কাছে সবচেয়ে জরুরি বিষয় রোহিঙ্গাদের জন্য অর্থ সংগ্রহ। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ দাতাদের তাগিদ দেয়া হচ্ছে। মানবিক বিবেচনায় ১২ লাখ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশ আশ্রয় দিলেও এই সংকটের দায়িত্ব পুরো বিশ্বের।

রোহিঙ্গাদের সহায়তায় সবচেয়ে বড় দাতা যুক্তরাষ্ট্র। ২০১৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত রোহিঙ্গা সংকটে ১৯০ কোটি ডলারের বেশি সহযোগিতা করেছে দেশটি। এ বছর পাওয়া অর্থের মধ্যে ৫১ দশমিক ৪ শতাংশ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রায় ১০ শতাংশ এবং যুক্তরাজ্য ৮ দশমিক ৬ শতাংশ।

ঢাকার জাতিসংঘ কার্যালয়ের কর্মকর্তারা জানান, চাহিদার তুলনায় রোহিঙ্গাদের অর্থ কম আসায় তাদের পরিকল্পনায়ও কাটছাঁট করতে হয়েছে। রোহিঙ্গাদের প্রধান মৌলিক সেবাগুলো বিশেষ করে- খাদ্য, চিকিৎসা এবং শিক্ষায় গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।

তবে অনুদান নির্ভরতা কমিয়ে রোহিঙ্গাদের আয়ের সুযোগ করে দিতে আগামী বছর শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নে জোর দেয়া হবে বলে জানায় কূটনৈতিক সূত্র।

এদিকে প্রতিবছর রোহিঙ্গা অর্থায়নের জন্য যে জেআরপি তৈরি করা হয়, তা এক বছরের পরিবর্তে কয়েক বছর মেয়াদি করার প্রস্তাব দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সম্প্রতি মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের জনসংখ্যা, শরণার্থী ও অভিবাসনবিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জুলিয়েটা ভ্যালস নয়েসের সফরেও এ বিষয়ে আলোচনা হয়।

শাহরিয়ার আলম বলেন, যুক্তরাষ্ট্র কয়েক বছর ধরেই এই প্রস্তাব দিয়ে আসছে। বিষয়টি বিবেচনায় রয়েছে। সুত্র: দৈনিক বাংলা

পাঠকের মতামত

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এলেন আরও ৫৯ সেনা-বিজিপি সদস্য

আরাকান আর্মির হামলার মুখে ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিপি) সদস্যরা পালিয়ে বাংলাদেশের ঘুমধুম সীমান্ত ফাঁড়ির ...