প্রকাশিত: ০৬/০৯/২০১৭ ৭:৪৯ এএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ২:০০ পিএম

নিউজ ডেস্ক::
মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিচ্ছে বাংলাদেশ। তবে দীর্ঘমেয়াদে অবস্থান করে তারা যাতে দেশে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর কাজে জড়িয়ে পড়তে না পারে, সেই লক্ষ্যে সকলকে বায়োমেট্রিক পরিচয়পত্র দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। আঙুলের ছাপসহ এই পরিচয়পত্রে তাদের সব ধরনের তথ্য সংরক্ষণ করা হবে। গতকাল মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আঙুলের ছাপ সংরক্ষণের ৬টি মেশিন কেনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব মেশিনগুলো কক্সবাজারে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে পাঠানো হবে। রোহিঙ্গাদের পরিচয়পত্র তৈরিতে স্থানীয় প্রশাসনকে সহায়তা করবেন পাসপোর্ট অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র আরও জানায়, যত্রতত্র অবস্থান নেওয়া রোহিঙ্গাদের কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালীতে আবাসনের ব্যবস্থা করবে সরকার। বন বিভাগের ৫০০ একর জমিতে জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে। ওই ‘সেফ জোনের’ নিরাপত্তায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ১০০ সদস্য মোতায়েন থাকবেন। এছাড়া পুরো এলাকায় বসানো হবে সিসিটিভি। এমনকি বাংলাদেশে আসা নির্যাতিত ও অসুস্থ রোহিঙ্গাদের চিকিৎসায় মেডিকেল টিম গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া বিদেশি কোনো এনজিও রোহিঙ্গাদের সহায়তা করলে তা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে করতে হবে বলে জানা গেছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দিন সমকালকে বলেন, সোমবার গণভবনে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে একটি জরুরি সভা হয়। সেখানে রোহিঙ্গাদের শনাক্ত করার জন্য পৃথক পরিচয়পত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তারা যাতে বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর সঙ্গে মিশে গিয়ে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত কাজে জড়াতে না পারে সেই লক্ষ্যে এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। রোহিঙ্গারা কোনো অপরাধে জড়ালে তাকে শনাক্ত করতে ওই পরিচয়পত্র কাজে লাগবে।
দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, বাংলাদেশে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে রোহিঙ্গাদের আঙুলের ছাপ সংরক্ষণসহ অন্যান্য তথ্য নিয়ে পরিচয়পত্র দেওয়া হবে। এ ছাড়া আগে থেকেই যেসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থান করছে, তাদেরও একইভাবে বায়োমেট্রিক পরিচয়পত্র দেওয়া হবে। এরপর আশ্রয় নেওয়া সব রোহিঙ্গার তথ্য নিয়ে একটি ডাটাবেজ তৈরি করবে সরকার।

পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নির্যাতিত রোহিঙ্গারা প্রাণের ভয়ে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আসছে। এমন নাজুক পরিস্থিতিতে তাদের যাতে কেউ প্রলোভন দেখিয়ে আইন-শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজে ব্যবহার করতে না পারে, সে ব্যাপারেও সতর্ক দৃষ্টি থাকা জরুরি।
দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, চলমান রোহিঙ্গা ইস্যুতে কক্সবাজারের স্থানীয় প্রশাসনের কোন বিভাগের কী কী সরঞ্জাম ও অর্থ প্রয়োজন তা নির্ণয় করতে চাহিদাপত্র পাঠাতে বলা হয়েছে। এরই মধ্যে কয়েকটি বিভাগ তাদের চাহিদাপত্র ঢাকায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।

এদিকে গতকাল সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমের কক্ষে এক অনির্ধারিত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় সিদ্ধান্ত হয়, রোহিঙ্গাদের জন্য বরাদ্দ করা জমিতে স্থাপনা নির্মাণ করে দেবে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)। তাদের খাদ্য সহায়তা দেবে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডবি্লউএফপি)। এ ছাড়া দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় রোহিঙ্গাদের আবাসন, খাদ্যসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনায় থাকবে। শরণার্থী ক্যাম্প নিয়মিত পরিদর্শন করবেন ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা। ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব শাহ কামাল, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব ফরিদ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিব ইশতিয়াক আহমেদ, ভূমি সচিব ড. মজিবুর রহমান হাওলাদার, শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার আবুল কালাম আজাদ, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন প্রমুখ।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সভায় আরও সিদ্ধান্ত হয়_ কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত ক্যাম্প, বালুখালী অনিবন্ধিত ক্যাম্প, টেকনাফের নয়াপাড়া নিবন্ধিত ক্যাম্প, লেদা অনিবন্ধিত ক্যাম্প এবং শ্যামলাপুর অনিবন্ধিত ক্যাম্পের আয়তনও বাড়ানো হবে। এসব ক্যাম্পে পর্যাপ্ত আনসার নিয়োগ করা হবে। যে কোনো জরুরি প্রয়োজনে পুলিশ, র‌্যাব ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা দেবে।

এ ব্যাপারে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শাহ কামাল সমকালকে বলেন, রোহিঙ্গাদের বিষয়টি মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা হচ্ছে। শরণার্থীদের জন্য যা কিছু করণীয় তার সবই আমরা করছি।
কক্সবাজারে বিজিবির ৪৪ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মনজুর আহসান খান সমকালকে বলেন, মিয়ানমার থেকে এখনও রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে ঢুকছে। তাদের মধ্যে অনেকে আহতাবস্থায় আসছে। তবে ঢালাওভাবে যাতে রোহিঙ্গাদের প্রবেশ ঘটতে না পারে, সেদিকে লক্ষ্য রাখা হচ্ছে।

এদিকে সার্বিক পরিস্থিতি দেখতে আগামীকাল বৃহস্পতিবার রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো পরিদর্শনে যাচ্ছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া এবং একই মন্ত্রণালয়ের সচিব শাহ কামালসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা সমকালকে জানান, আপাতত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া হলেও ধীরে ধীরে তাদের পুশব্যাক করার উদ্যোগ নেবে সরকার। একই সঙ্গে রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়াতে কূটনৈতিক উদ্যোগ নেওয়া হবে।
মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের দাবি, রাখাইনে গত ২৫ আগস্ট রাতে সেনাবাহিনী ও পুলিশের ৩০টি ক্যাম্পে হামলা চালায় আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) নামে একটি বিদ্রোহী সংগঠন। এরপর মিয়ানমারের সেনাবাহিনী অভিযানের নামে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালায়।

পাঠকের মতামত

তেল ছাড়ায় চলবে বাজাজ বাইক!

শীঘ্রই প্রথম সিএনজি মোটরসাইকেল চালু করার প্রস্তুতি নিচ্ছে বাজাজ। বাইকটি বাজারে আসলে তেল খরচ নিয়ে ...

টেলিটকের ৪৮ লক্ষ গ্রাহকের সমস্যা দূর করার জন্য যাদুকরি পদক্ষেপ : পলক

ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহম্মেদ পলক বলেছেন, জীবন কানক্টেভিটি হবে বিটিসিএলর লাইফ ...