ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: ২৩/০৩/২০২৩ ৯:৫২ এএম

জাপানের সুপরিচিত মোটরসাইকেল ব্র্যান্ড ইয়ামাহার ‘এফজেডএস–ভার্সন থ্রি’ মডেলের একটি মোটরসাইকেলের দাম গত বছর জানুয়ারিতে বাংলাদেশে ছিল ২ লাখ ৪০ হাজার ৫০০ টাকা। সেই মোটরসাইকেল এখন বিক্রি হচ্ছে ২ লাখ ৬২ হাজার ৫০০ টাকায়। মানে হলো, মোটামুটি এক বছরের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ২২ হাজার টাকা বা ৯ শতাংশের মতো।

বাংলাদেশে ইয়ামাহা ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেলের পরিবেশক ও ইয়ামাহার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে কারখানা করা প্রতিষ্ঠান এসিআই মোটরস বলছে, দাম বাড়ার কারণ ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, বিশ্ববাজারে কাঁচামালের দাম ও পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়া।

শুধু ইয়ামাহা নয়, সব ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেলের দামই বেড়েছে। ছয়টি কোম্পানির ছয়টি উচ্চ সিসির (ইঞ্জিনক্ষমতা) মোটরসাইকেলের ২০২২ সালের দর বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত বছর মে থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত দাম বেড়েছে ৬ থেকে ১৫ শতাংশ। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সার্বিকভাবে গত বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ব্র্যান্ড ও মডেলভেদে মূল্যবৃদ্ধির হার ১০ থেকে ১৫ শতাংশ। প্রশ্ন হলো, মোটরসাইকেলের দাম কি আরও বাড়বে?

উত্তরে কর্মকর্তারা বলছেন, দাম বাড়ার আশঙ্কাই বেশি। কারণ হলো, ডলারের দাম বেড়েছে ২৫ শতাংশের মতো, যা মোটরসাইকেলের যন্ত্রাংশ আমদানিতে সরাসরি প্রভাব ফেলেছে। ওদিকে দেশে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বেড়েছে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় পরিবহন খরচ বেড়েছে। সবকিছুর প্রভাব মোটরসাইকেলের দামের ওপর পড়বে।

কয়েকটি কোম্পানির কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কেউ কেউ আমদানি করা নতুন চালানে বাড়তি ব্যয় হওয়ায় দাম বাড়াবে। সেটা পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগেই। কেউ কেউ অবশ্য পুরোনো মজুতে কিছু মূল্যছাড় দিয়ে বাজার ধরার চেষ্টা করবে।

দাম বাড়ার আরেকটি কারণ জানালেন এসিআই মোটরসের নির্বাহী পরিচালক সুব্রত রঞ্জন দাস। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আটটি যন্ত্রাংশে এত দিন বিশেষ শুল্ক ছাড় পাওয়া যেত। নতুন চালানের ক্ষেত্রে সেটা পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে খরচ বেশি পড়ছে। তিনি বলেন, ডলারের দাম, কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি, পরিবহন খরচ বৃদ্ধি ও অন্যান্য কারণে ব্যয় যতটা বেড়েছে, ক্রেতাদের কথা চিন্তা করে ততটা দাম বাড়ানো হয়নি। কিন্তু কোম্পানিগুলো এখন লোকসানের পর্যায়ে চলে গেছে। ফলে আরও কিছুটা মূল্য সমন্বয় ছাড়া উপায় নেই।

মোটরসাইকেল বিপণনকারী কোম্পানিগুলোর নিজস্ব বাজার জরিপ অনুযায়ী, ২০২২ সালে দেশে ৫ লাখ ৯০ হাজারের মতো মোটরসাইকেল বিক্রি হয়েছে, যা আগের বছরের সমান। এ খাতে কোনো প্রবৃদ্ধি হয়নি। সাধারণত মোটরসাইকেল বিক্রিতে দুই অঙ্কের প্রবৃদ্ধি হয়। কোম্পানিগুলো বলছে, বিক্রিতে ভাটার টান লাগার কারণ দাম বেড়ে যাওয়া এবং মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়া। এ কারণে তারা ব্যয় অনুযায়ী দাম বাড়ায়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের মে মাসে ডলারের দাম ছিল ৮৬ টাকার আশপাশে। এখন তা ১০৫ টাকা ছাড়িয়েছে। অবশ্য মোটরসাইকেল কোম্পানিগুলো বলছে, তাদের ডলার কিনতে হয় ১০৮ টাকার আশপাশের দরে। এ ক্ষেত্রে ডলারের মূল্যবৃদ্ধির হার ২৫ শতাংশের বেশি। ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় মোটরসাইকেলের যন্ত্রাংশের ওপর শুল্ক–করও বেশি দিতে হচ্ছে। কারণ হলো, শুল্ক–কর নির্ধারিত হয় শতাংশের ভিত্তিতে।

মোটরসাইকেল খাতের কোম্পানিগুলোর দুই সংগঠন বাংলাদেশ মোটরসাইকেল অ্যাসেম্বলার্স ও ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএএমএ) এবং মোটরসাইকেল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (এমএমইএবি) হিসাব অনুযায়ী, ২০১৮ সালের পর থেকে দেশে মোটরসাইকেল উৎপাদনে ৯টির মতো কারখানা স্থাপিত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে জাপানের হোন্ডা, ইয়ামাহা ও সুজুকি এবং ভারতের উত্তরা মোটরস, টিভিএস অটো ও হিরোর মতো প্রতিষ্ঠান। দেশীয় ব্র্যান্ড হিসেবে রয়েছে রানার অটোমোবাইলস। এসব প্রতিষ্ঠান মোটরসাইকেলের বেশির ভাগ যন্ত্রাংশ আমদানি করে। কিছু দেশে তৈরি হয়। দেশে গ্যাস–বিদ্যুতের দাম বাড়লে এসব প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন খরচও বাড়ে।

দেশে গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে তিন দফায় বিদ্যুতের দাম ১৫ শতাংশ বাড়ানো হয়। গত জানুয়ারি মাসে বাড়ানো হয় গ্যাসের দাম। ওই সময় বড় ও মাঝারি শিল্পে গ্যাসের দর বাড়ানো হয়েছিল ১৫০ শতাংশের বেশি। পাশাপাশি ব্যাপকভাবে বেড়েছে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) দাম। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, মোটরসাইকেল কারখানায় বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ লাগে। আবার গ্যাসও প্রয়োজন হয়। কোনো কোনো কারখানা গ্যাস–সংযোগ না পেয়ে উচ্চ দামের এলপিজি দিয়ে চলছে।

জানতে চাইলে জাপানের সুপরিচিত হোন্ডা ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল উৎপাদনকারী বাংলাদেশ হোন্ডা প্রাইভেট লিমিটেডের (বিএইচএল) প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা (সিএফও) শাহ মোহাম্মদ আশিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, দেশে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে যে চাপ তৈরি হয়েছে, তাতে মোটরসাইকেল কোম্পানিগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত। যেভাবে ডলারের দাম বেড়েছে, অন্যান্য ব্যয় বেড়েছে, সে অনুপাতে দেশে মোটরসাইকেলের দাম বাড়ানো হয়নি। এতে কোম্পানিগুলো লোকসান দিচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশে মাসে গড়ে ৫০ হাজার মোটরসাইকেল বিক্রি হয়। সেটা এখন ৩৫ হাজারের আশপাশে নেমেছে। বিক্রি কমে যাওয়ার প্রবণতা শুরু হয়েছে গত জুলাই থেকে। মোটরসাইকেল বিক্রির ক্ষেত্রে পবিত্র রমজান মাস ও ঈদুল ফিতর একটি বড় সময়। এ সময় অনেকেই মোটরসাইকেল কেনেন। আবার অনেকে দাম কমার অপেক্ষায় রয়েছেন।

জানতে চাইলে একটি মোটরসাইকেল উৎপাদন ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানের বিপণন বিভাগের প্রধান প্রথম আলোকে বলেন, যাঁরা অপেক্ষা করবেন, তাঁদের বেশি দাম দিতে হবে। কারণ, বাজার একটু চাঙা হলেই কোম্পানিগুলো দাম বাড়াবে। কেউ লোকসান দিয়ে ব্যবসা করবে না। তিনি বলেন, ডলারের দাম আরও বাড়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। ব্যাংকঋণের সুদহার বাড়ানোরও আলোচনা হচ্ছে। এসব মোটরসাইকেলের দামের ওপর প্রভাব ফেলবে। সুত্র: প্রথম আলো

পাঠকের মতামত

রোহিঙ্গাদের জন্য ইউএনডিপির বড় তহবিল গঠনে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান

রোহিঙ্গাদের সহায়তায় বড় আকারের আন্তর্জাতিক তহবিল গঠনের উদ্যোগ নিতে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) প্রতি আহ্বান ...

রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে একীভূত করার প্রস্তাব ঢাকার প্রত্যাখ্যান

বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের স্থায়ীভাবে বসবাসে সব ধরনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। একইসাথে ...