
সরওয়ার আলম শাহীন, উখিয়া নিউজ ডটকম::
মিয়ানমার সীমান্ত গেট খুৃলে দিয়েছে,মিয়ানমারে ফিরে যাচ্ছে রোহিঙ্গারা, এক হাজার রোহিঙ্গা মিয়ানমার ফিরে গেছে, এ সমস্ত খবর আন্তর্জাতিক মিডিয়াসহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে ফলাও করে প্রকাশিত হলেও বাস্তবতা ভিন্ন। এদেশে আসা রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরে যাচ্ছেনা বরং বাংলাদেশ সীমান্ত পেরিয়ে বিজিবি সহ আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর ছোখ ফাঁকি দিয়ে প্রতিদিনই বাংলাদেশ অনুপ্রবেশ করে দেশের গড়ে উঠা বিভিন্ন বস্তিতে আশ্রয় নিচ্ছে রোহিঙ্গারা। সরজমিন কুতুপালং ও বালুখালী রোহিঙ্গা বস্তি এলাকা ও তার আশেপাশে চিত্র প্রত্যক্ষ করে এমনটিই দেখা গেছে।
রবিবার দুপুর ১২ টায় দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়ক লাগোয়া বালুখালী রোহিঙ্গা বস্তির একটু পরে দেখা গেছে রাস্তার পাশে রোহিঙ্গাদের সারি সারি লাইন। কেউ রয়েছে সাহায্যের অপক্ষোয় আবার কেউ রয়েছে কুতুপালং ও বালুখালী রেহিঙ্গা বস্তিতে ঢোকার অপেক্ষায়। এ সময় মিয়ানমার খিয়ারী পাড়ার বাসিন্ধা নুরুল হক (৪২) বলেন,গত শুত্রুবার তারা স্ব-পরিবারে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে এখানে অবস্থান নিয়েছে। এখনো হাতে কোন টাকা পয়সা নেই,তাই রাস্তায় যদি কারো কোন সাহায্য পাই তবে বালুখালী বস্তিতে গিয়ে ঝুপড়ি ঘর তৈরী করতে পারবো। তার পাশে থাকা একই এলাকার রহিমা বেগম (৩৮০ বলেন,মিয়ানমার সেনাবাহিনী তার স্বামীকে ধরে নিয়ে গেছে সপ্তাহ দুয়েক আগে। সে থেকে তার কোন খবর নেই।তাই শুত্রুবার বালুখালী সীমান্ত দিয়ে ৪ ছেলে মেয়ে সহ এদেশে পালিয়ে এসেছে। সম্প্রতিক আসা রোহিঙ্গাদের ভাষ্য অনুয়ায়ী রোহিঙ্গাদের উপর এখনো নির্যাতন চলছে,যা মিডিয়ায় আসছেনা।তাদের মতে, প্রকাশ্যে নির্যাতনের মাত্রা কমেছে মাত্র। নিরবে রাতের আধাঁরে ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে পুরুষ ও যুবকদের। এতে আংকিত রোহিঙ্গারা এখনো দলে দলে বাংলাদেশে ছুটে আসছে।বালুখালী বস্তিতে গিয়ে দেখা গেছে এখনো সরকারী বনভুমির পাহাড় কেটে রোহিঙ্গাদের জন্য পজিশন তৈরী করা হচ্ছে বিত্রিুর জন্য। মিয়মিত বাঁশ,পলিথিন মজুত করা হচ্ছে আশেপাশের এলাকায়।একটি পাহাড়ের উপর গিয়ে দেখা গেছে ঝুপড়ি নির্মানের জন্য পাহাড়ের মাঠি পরিস্কার করছে মনোয়ারা বেগম (৩৪) নামের এক রোহিঙ্গা। জানতে চাইলে সে জানায়,গত বৃহস্পতিবার তারা একসঙ্গে ৪০ পরিবার মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশ সীমান্ত পেরিয়ে বালুখালী রোহিঙ্গা বস্তিতে এসেছে। সে জানায়, তার স্বামীকে ১০/১২ পূর্বে রাতের আধারে মিয়ানমারের রাখাইনা তুলে নিয়ে গেছে। তাই আংকিত হয়ে অন্যন্যদের বাংলাদেশে চলে এসেছি।মিয়ানমারের পরিস্থিতির ব্যাপারে কথা হয় গত শনিবার সদ্য বালুখালী বস্তিতে প্রবেশ করা মিয়ানমার গৌজবিল গ্রামের আলী হোসেন (৪৫) এর সাথে। সে জানান, মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মাত্রা কমেছে কিন্ত রাতের আধারে যুবক ও পুরুষদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে রাখাইন বাহিনীর লোকেরা। আতংকিত রোহিঙ্গা তাই বাংলাদেশকেই নিরাপদ মনে করে বাংলাদেশে ছুটে আসেছে। প্রতিদিন ভোরে বালুখালী ও কুতুপালং রোহিঙ্গা বস্তিতে এক,শ করে পরিবার ঢুকছে। তার মতে, মিয়ানমারে রোহিঙ্গারা ফিরে যাচ্ছে,মিয়ানমার সীমান্ত গেট খুলে দিয়েছে এসব কথা মিথ্যা বানোয়াট বরং মিয়ানমারের হার্জা হাজার রোহিঙ্গা এখনো বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। স্থানীয় জনগনের মতে, ঠেঙ্গারচর বিরোধী একটি সিন্ডিকেট রোহিঙ্গাদের কক্সবাজার থেকে ঠেঙ্গারচর নিয়ে যাওয়া ঠেকাতে তৎপরতা চালাচ্ছে। রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরে যাচ্ছে,এসব কথা প্রচার তাদের ষড়যন্ত্রের অংশবিশেষ। তারা আন্তজার্তিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষন করতে চায় এভাবে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরে যাচ্ছে,তাহলে ঠেঙ্গারচর নিয়ে গিয়ে লাভ কি? সুসাশনের জন্য নাগরিক সুজনের সভাপতি নুর মোহাম্মদ সিকদার বলেন, ঠেঙ্গার চর বিরোধী একটি প্রভাবশালী মহল মোটা অংকের মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছে। রোহিঙ্গাদের নিয়ে মিথ্যা তথ্য সরবরাহ তাদের মিশনের অংশ বিশেষ। তিনি রোহিঙ্গাদের দ্রুত ঠেঙ্গারচর নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য সরকারের নিকট জোর দাবী জানান। স্থানীয় পালংখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন,রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরে গেলে প্রতিদিন রাস্তায় রাস্তায় এতো রোহিঙ্গা কেন? এসব ভাসমান নিয়ন্ত্রনহীন রোহিঙ্গাদের কারনে এলাকার আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে বলেও তিনি জানান।
পাঠকের মতামত