ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: ০৭/০২/২০২৪ ১২:২৮ পিএম

দ্য গ্র্যান্ড আন্দামান হোটেলটির অবস্থান একটি দ্বীপে। থাথাই কুন নামের ১ হাজার ৮০০ একরের এই দ্বীপ থেকে মিয়ানমার এবং থাইল্যান্ডের মূল ভূমি খুব কাছে। এত কাছে যে কেউ চাইলে সাঁতার কেটেই যেকোনো একটি দেশে চলে যেতে পারে। তবে দ্বীপটি মিয়ানমারের জলসীমায় অবস্থিত এবং দেশটির তানিনথারি অঞ্চলের অন্তর্গত।

অবস্থানগত কারণেই দ্য গ্র্যান্ড আন্দামান হোটেলে থাইল্যান্ডের বিপুলসংখ্যক মানুষ জুয়া খেলতে যান। এ জন্য তাঁদের কোনো ভিসাও লাগে না। বিখ্যাত এই ক্যাসিনো রিসোর্টে আরও অনেক দেশের মানুষই ভিসা ছাড়া নিরাপদে জুয়া খেলার জন্য যান।

পাঁচ তারকা এই রিসোর্টে জুয়া খেলার সব ব্যবস্থা ছাড়াও আছে বেশ কিছু গেমিং রুম, স্পা ব্যবস্থা, কারাওকে লাউঞ্জ এবং বিউটি স্যালন। হোটেলটি এত বিশাল এবং এর কার্যক্রম এত বিস্তৃত যে বিভিন্ন দেশের দেড় হাজারের বেশি মানুষ এখানে চাকরি করেন।

আজ মঙ্গলবার মিয়ানমারের গণমাধ্যম ইরাবতী জানিয়েছে, চলতি মাসেই বন্ধ হয়ে গেছে দ্য গ্র্যান্ড আন্দামান হোটেল। শুধু তা-ই নয়, লাপাত্তা হয়ে গেছেন হোটেলটির মালিক উ কিয়াও লুইন। কারণ, তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে থাইল্যান্ডে।

মূলত ‘কফুক’ নামে অনলাইনে অর্থ পাচারকারী একটি চক্রের বিরুদ্ধে একটি কঠোর অভিযান শুরু করেছে থাইল্যান্ডের ডিপার্টমেন্ট অব স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন (ডিএসআই)। অভিযোগ রয়েছে, কফুক নেটওয়ার্কটির নাটের গুরু দ্য গ্র্যান্ড আন্দামান হোটেলের মালিক উ কিয়াও লুইন। হোটেলটিকে কেন্দ্র করেই এই নেটওয়ার্কের কার্যক্রম পরিচালিত হয়।

কফুক নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে ক্র্যাকডাউনের অংশ হিসেবে থাইল্যান্ডের ব্যাংকক ও হোটেলটির কাছাকাছি দেশটির উপকূলীয় শহর র‍্যানংয়ে অন্তত ২৭টি আস্তানায় অভিযান চালিয়েছে ডিএসআই। থাইল্যান্ডের র‍্যানং শহরেও একটি বাড়ি আছে দুই দেশের নাগরিকত্ব থাকা উ কিয়াও লুইনের। সেই বাড়িতেও অভিযান চালানো হয়েছে।

ইরাবতী জানিয়েছে, অবৈধ অনলাইন জুয়া, লাইসেন্সবিহীন জ্বালানি রপ্তানি, কর ফাঁকি এবং অবৈধ অর্থ উপার্জনের জন্য কফুক নেটওয়ার্কের ১৮ ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে ডিএসআই। তাঁদের ধরতে গিয়ে যে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে তাতে বিলাসবহুল গাড়ি, সোনার গয়না এবং বিলাসবহুল ব্র্যান্ডের অসংখ্য পণ্য জব্দ করা হয়েছে।

ডিএসআই-এর ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল উথানা প্রেদাম থাইল্যান্ডের গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, অভিযানে ১৮ জন সন্দেহভাজনের মধ্যে ৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রেদাম বলেন, ‘মূল অপরাধী হোটেল মালিককে এখনো গ্রেপ্তার করা যায়নি। তবে তাঁর একজন সহকারী ও স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’

উ কিয়াও লুইনকে মিয়ানমারের নাগরিক আখ্যা দিয়ে প্রেদাম বলেন, ‘সম্ভবত সে মিয়ানমারে পালিয়ে গেছে।’

জানা গেছে, হোটেলের কাছাকাছি মিয়ানমারের উপকূলীয় শহর কাওথাউংয়ের জ্বালানি বাজারে উ কিয়াউ লুইনের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। তিনি র‍্যানং থেকে এই জ্বালানি আমদানি করেন। অতীতে কাওথাউং শহরে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য একটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রও স্থাপন করেছিলেন তিনি। পাশাপাশি রাবার উৎপাদন, চিংড়ি প্রজনন এবং মাছ ধরাসহ আরও অনেক ব্যবসায় তাঁর সম্পৃক্ততা রয়েছে।

স্থানীয়রা আশঙ্কা করছেন, উ কিয়াও লুইনের ওপর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কাওথাউংয়ের জ্বালানি বাজারে প্রভাব ফেলতে পারে।

পাঠকের মতামত