ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: ২৮/০৬/২০২৩ ৯:২৯ পিএম

পবিত্র হজ পালনের উদ্দেশে সৌদি আরবে আসা ২৬ লাখ হাজি আজ বুধবার (১০ জিলহজ) পশু কোরবানি করেছেন। এদিন তাঁরা প্রতীকী শয়তানের উদ্দেশে পাথরও নিক্ষেপ করেছেন। বুধবার ফজরের নামাজ আদায়ের পর সূর্যোদয়ের আগে কিছু সময় মুজদালিফায় অবস্থান করেন হজযাত্রীরা। এরপর তাঁদের কেউ ট্রেনে, কেউ গাড়িতে, কেউ পায়ে হেঁটে মুজদালিফা থেকে মিনায় রওয়ানা দেন। সেখানে মিনার জামারায় (শয়তানের উদ্দেশে পাথর ছোঁড়ার স্থান) বড় শয়তানের উদ্দেশে প্রতীকী সাতটি পাথর নিক্ষেপ শেষে পশু কোরবানি করেন তাঁরা। পরে রাসুল্লাহর (সা.) আদর্শ অনুসরণে মাথা মুণ্ডনের পর গোসল করেন হাজিরা।

এরপর হাজিরা পবিত্র হজের প্রথম রুকন সেলাইবিহীন ইহরাম খুলে স্বাভাবিক পোশাক পরিধান করেন। ইহরামের আগে পুরুষেরা শরীরের নিচের অংশে আড়াই হাত বহরের আড়াই গজের এক টুকরা কাপড় আর গায়ে জড়িয়ে নেওয়ার জন্য একই বহরের তিন গজের এক টুকরো সাদা রংয়ের সেলাইবিহীন কাপড় এবং নারীরা পর্দায় আচ্ছাদিত কাপড় পরেন। গত দু’দিনের মতো বুধবারও হাজিরা প্রায় সারাক্ষণ জিকিরে মশগুল ছিলেন। মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা ও রহমত চেয়ে অঝোরে কান্নাকাটি করেছেন।

হাজিরা এর আগে ধর্মীয় আবেগ ও অনুভূতির মধ্য দিয়ে ৯ জিলহজ সূর্যাস্ত যাওয়ার কিছু সময় পরে মাগরিবের নামাজ আদায় না করেই আরাফাত ময়দান থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে মুজদালিফার উদ্দেশে রওয়ানা দেন। মুজদালিফায় গিয়ে এশার নামাজের সময় একসঙ্গে মাগরিব ও এশার নামাজ আদায়ের পর তাঁরা সেখানেই খোলা আকাশের নিচে বিস্তীর্ণ খোলা মাঠে রাত যাপন করেন। রাতে প্রতীকী শয়তানের উদ্দেশে নিক্ষেপের জন্য সেখান থেকে সংগ্রহ করেন ৭০টি পাথর।

ইসলাম ধর্মের পঞ্চস্তম্ভের মধ্যে অন্যতম স্তম্ভ পবিত্র হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে গত ৮ জিলহজ। সৌদি আরবে তাঁবুর শহর হিসেবে খ্যাত মিনায় অবস্থানের মধ্য দিয়ে হজ পালনের পাঁচ দিনব্যাপী এই আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের ২৬ লাখের বেশি ধর্মপ্রান মুসলমান এই আনুষ্ঠানিকতায় অংশ নিচ্ছেন। আর্থিক ও শারীরিকভাবে সামর্থ্যবান প্রতিটি মুসলিম নারী ও পুরুষের জন্য সারাজীবনে কমপক্ষে একবার হজ পালন করা ফরজ, অর্থাৎ অবশ্যই পালনীয়।

এদিকে পশু কোরবানি দেওয়ার পর হাজিরা হজের তৃতীয় অর্থাৎ শেষ রুকন আদায়ের জন্য মক্কায় গিয়ে সুবহে সাদিকের পর থেকে পবিত্র কাবা শরীফ তাওয়াফ করবেন। কাবা শরীফের সামনের দুই পাহাড় সাফা ও মারওয়ায় সাতবার ‘সাঈ’ (দৌঁড়ানো) করবেন। সেখান থেকে তাঁরা আবার ফিরে যাবেন মিনায়, নিজেদের তাঁবুতে। হজযাত্রীরা ১১ জিলহজ আবার মিনার জামারায় গিয়ে জোহরের নামাজের পর থেকে পর্যায়ক্রমে ছোট, মধ্যম ও বড় শয়তানকে সাতটি করে ২১টি পাথর নিক্ষেপ করবেন। একইভাবে ১২ জিলহজ আবারও ছোট, মধ্যম ও বড় শয়তানকে ২১টি পাথর নিক্ষেপের পর সল্পব্দ্যার আগে তাঁরা মিনা ত্যাগ করবেন।

১০ জিলহজ থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত যে কোনো সময়ে কাবা শরীফকে ফরজ তাওয়াফের মধ্য দিয়ে শেষ হবে পবিত্র হজের আনুষ্ঠানিকতা। এর আগ পর্যন্ত হজযাত্রীদের মুখে উচ্চারিত হবে ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা, ওয়ান নি’মাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাক’ ধ্বনি। অর্থাৎ ‘আমি উপস্থিত হয়েছি হে আল্লাহ। আমি উপস্থিত হয়েছি তোমার সমীপে। তোমার কোনো শরিক নেই। পুনরায় আমি উপস্থিত হয়েছি। নিশ্চয়ই সব প্রশংসা ও সকল নিয়ামত শুধু তোমারই জন্য। সব সাম্রাজ্যও তোমার এবং তোমার কোনো শরিক নেই।’

পাঠকের মতামত