প্রকাশিত: ২২/১০/২০১৮ ৬:০১ পিএম
ফাইল ছবি

ডেস্ক রিপোর্ট::
টেলিভিশনের টকশোতে সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টিকে অশালীন ভাষায় ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের আক্রমণের নিন্দা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেছেন, ‘এভাবে কোনো নারীকে অশালীন ভাষাষ গালাগাল জঘন্য ও ন্যাক্কারজনক। তার বিরুদ্ধে মামলা হলে সরকার ব্যবস্থা নেবে।’

সোমবার বিকেলে সরকারি বাসভবন গণভবনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর সম্প্রতি সৌদি আরব সফর নিয়ে এই সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে মাসুদা ভাট্টিকে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের বলা ‘চরিত্রহীন’ প্রসঙ্গে একাধিক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন।

জবাবে প্রধানমন্ত্রীও এই ইস্যুতে সাংবাদিক ও নারী সংগঠনের ভূমিকার কড়া সমালোচনা করেন। এ সময় তিনিও মইনুল হোসেনের ‘চরিত্রের’ ফিরিস্তি তুলে ধরেন।

মুক্তিযুদ্ধকালীন ও পরবর্তী সময়ে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের বিতর্কিত নানা ভূমিকার বর্ণনা দেন এবং প্রধানমন্ত্রীর ভাণ্ডারে আরো যেসব তথ্য আছে, তা পরে জানানোর কথা বলেন।

সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনারাই গিয়ে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে জিজ্ঞাসা করেন, তিনি কীভাবে একজন নারীকে এমন ন্যাক্কারজনক ও জঘন্য কথা বলতে পারলেন?’

এ সময় তিনি নারীদের পরামর্শ দেন, ‘মইনুল হোসেন দুটি মামলায় জামিন নিয়েছেন। আপনার তার বিরুদ্ধে আরো মামলা করেন, আমরা ব্যবস্থা নেব। আপনারাও তো প্রতিবাদ করতে পারেন? নারী সংগঠনগুলো, তোমরা প্রতিবাদ করছ না কেন?’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কী করবে? বিচার বিভাগ স্বাধীন। আমরা সেখানে কোনো হস্তক্ষেপ করি না। মামলা হওয়া মাত্রই মইনুল হোসেন উচ্চ আদালতে গিয়ে বসে থাকলেন, তাকে ৫ মাসের জামিনও দেয়া হলো। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতো বিচারালয়ে গিয়ে হামলা কিংবা কাউকে গ্রেফতার করে আনতে পারে না।’

এরপরই তিনি বলেন, ‘কেবল দুটি মামলায় জামিন হয়েছে। নারীরা বসে বসে কী করছেন? দুটি মামলায় জামিন হয়েছে, তার বিরুদ্ধে আরো মামলা হতে পারে। মামলা করেন, আমরা যা করার তা করব।’

মইনুল হোসেনকে পাকিস্তানি হানাদারদের ‘দালাল’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যে লোক কটূক্তি করলেন, তার বাচনভঙ্গি ও এটিচুড খারাপ। একাত্তরে তিনি হানাদারদের দালালি করতেন। সিরাজুলকে তুলে নিয়েছিল, এজন্য তিনিও কম দায়ী নন। জাতির পিতার আত্মস্বীকৃত খুনিদের নিয়ে তিনি রাজনৈতিক দলও গঠন করেছিল। তার কাছ থেকে জাতি ভাল ও ভদ্র ব্যবহার কীভাবে আশা করে?’

তিনি দাবি করেন, ‘ইত্তেফাকেও তিনি মার্ডার করেন। নিজে মার্ডার করে আপন ভাই আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে ফাঁসানোর চেষ্টা করেছিলেন। উনার গুণের শেষ নাই। উনি গেসিলেন ব্যারিস্টারি করতে, মানিক কাকা (তোফাজ্জল হোসেন মাকিন মিয়া) পাঠালেন। ব্যারিস্টারি পাস করে আসার পর তিনি সাহেব হয়ে গেলেন। আগে পান্তা ভাত খেতেন, এখন কাকার ছেলে স্বাভাবিক খাবার খেতে পারেন না। সাহেবি খাবার খেতে হবে, ইংরেজি খাবার। এজন্য আলাদা বাবুর্চি রাখতে হবে। সেই সময় ১০০ টাকা দিয়ে ইংরেজি খাবারের জন্য বাবুর্চি রাখা হয়েছিল তার জন্য।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘ইংরেজদের এই সাহেবি খাবারই খাওয়া শিকলেন মইনুল, কথা বলা, ভদ্রতার কিছুই শেখেন নাই। তার সম্পর্কে আরো অনেক কিছু জানি। এখন সব বলব না। পরে বলব।’

ব্যারিস্টার মইনুল জামায়াতের লোক দাবি করে তিনি বলেন, ‘ছাত্রশিবিরের অনুষ্ঠানে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন গিয়েছিলেন, এর ভিডিওতো আছেই। জামায়াত তিনি সমর্থন করেন না, সেটা কীভাবে বলবেন? আমি তো বললাম, শিবিরের অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেছেন, তাদের আপনজন বলেছেন। এতেই প্রমাণ হয় তিনি জামায়াত, এর চেয়ে প্রমাণ আর কী লাগবে?’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই লোকটিই এখন খুনি, দুর্নীতিবাজ, মানি লন্ডারিংয়ে জড়িত, জঙ্গিবাদ সৃষ্টিকারী, অগ্নি সন্ত্রাসীদের সঙ্গে জোট করেছেন। বর্তমানে সর্বক্ষেত্রে বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনতা ভোগ করছেন। রাজনীতি করার স্বাধীনতা রয়েছে, জোট গঠনেরও। আমরা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে স্বাগত জানাই।’

একই সঙ্গে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, ‘জোট করেছেন, নির্বাচনে আসেন অসুবিধা নাই। কিন্তু, এই জোটের নামে অরাজকতা সৃষ্টি করা হলে কোনো ছাড় দেয়া হবে না।’

সৌদি বাদশা ও দুটি পবিত্র মসজিদের খাদেম সালমান বিন আব্দুল আজিজ আল সৌদের আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী গত ১৬ থেকে ১৯ অক্টোবর সৌদি আরবে সরকারি সফর করেন।

এ সফরে প্রধানমন্ত্রী রিয়াদের রাজপ্রাসাদে সৌদি বাদশার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং তার সম্মানে আয়োজিত এক মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন।

প্রধানমন্ত্রী সৌদি যুবরাজ, উপ-প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোহাম্মাদ বিন সালমান বিন আব্দুল আজিজের সঙ্গে এক বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।

তিনি কাউন্সিল অব সৌদি চেম্বার ও রিয়াদ চেম্বার অব কমার্সের নেতৃবৃন্দের সঙ্গেও বৈঠক করেন। উক্ত বৈঠকে ঢাকা ও রিয়াদের মধ্যে শিল্প ও বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতা সংক্রান্ত পাঁচটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়।

প্রধানমন্ত্রী রিয়াদে ডিপ্লোমেটিক কোয়ার্টার্সে বাংলাদেশ চ্যান্সেরি বিল্ডিং-এর উদ্বোধন করেন এবং তিনি জেদ্দায় বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল-এ চ্যান্সেরি বিল্ডিংয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

শেখ হাসিনা মক্কা শরীফে পবিত্র ওমরাহ পালন এবং মদীনায় মসজিদে নববীতে মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর পবিত্র রওজা শরীফ জিয়ারত করেন।

পাঠকের মতামত

মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির আশা বাংলাদেশ-গাম্বিয়ার

রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে করা মামলার দ্রুত নিষ্পত্তিতে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে বাংলাদেশ ও গাম্বিয়া। ...

কারামুক্ত হলেন মামুনুল হক

হেফাজতে ইসলামের সাবেক কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক কারামুক্ত হয়েছেন। শুক্রবার (৩ মে) সকাল ...

সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী উখিয়ায় হবে উন্মুক্ত কারাগার, শিগগির নির্মাণ শুরু

উন্নত দেশের ন্যায় বাংলাদেশে উন্মুক্ত কারাগার নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ...