প্রকাশিত: ০৩/০২/২০১৮ ৮:২৯ এএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ৭:১০ এএম

উখিয়া নিউজ ডটকম::
বালুখালী ও কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে বসবাস করছে প্রায় ছয় লাখ রোহিঙ্গা। এদের মধ্যে কমপক্ষে এক লাখ শরণার্থী আগামী বর্ষা মৌসুমে ভুমিধস ও বন্যার মারাত্নক ঝুঁকিতে আছে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর।

জাতিসংঘের মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূত ইয়াংহি লি পাহাড়ের খাদে বসবাসকারী প্রায় ছয় লাখ রোহিঙ্গার পাহাড়ধসে বিপন্ন হবার আশঙ্কা “গুরুতর ভাবনার বিষয়” বলে মন্তব্য করার একদিন পর ইউএনএইচসিআর এই বিবৃতি দিলো।

শুক্রবার দেওয়া এই বিবৃতিতে ইউএনএইচসিআর–এর জেনেভা অফিসের মুখপাত্র আন্দ্রেজ মাহেসিস বলেন, বর্ষা মৌসুমে কমপক্ষে ৮৫ হাজার রোহিঙ্গা বসতবাড়ি হারাতে পারে।

গত বছর ২৫ আগস্ট শুরু হওয়া রোহিঙ্গাদের ঢল সামলাতে কক্সবাজার জেলার উখিয়া উপজেলার কুতুপালং, বালুখালী এলাকার ঘন বন উজাড় করে পাহাড়ে নির্মাণ করা হয় হাজার হাজার ঘর। ঘরগুলো পলিথিন ও বাঁশ দিয়ে তৈরি করা।

তিনি বলেন, প্রাথমিক বিশ্লেষণে দেখা যায় যে, পাঁচ লক্ষ উনসত্তর হাজার মানুষ বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবির কুতুপালং ‍ও বালুখালীতে বসবাস করছে। এদের মধ্যে কমপক্ষে এক লাখ রোহিঙ্গা পাহাড় ধস ও বন্যায় মারাত্নক ঝুঁকিতে রয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহায়তায় ইউএনএইচসিআর, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা, রিচ এবং এশিয়ান ডিজাসটার প্রিপেয়ার্ডনেস সেন্টার যৌথভাবে এই ঝুঁকি বিশ্লেষণ করেছে। বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ক্যাম্পের এক–তৃতীয়াংশ বসতি বন্যায় প্লাবিত হতে পারে।

ফলে পাহাড়ের ঢালে বসবাস করা ৮৫ হাজারের বেশি শরণার্থী ঘরবাড়ি হারাতে পারে। আরো প্রায় ২৩ হাজার শরণার্থী ভূমি ধসের বিপদে রয়েছে।

বর্ষা মৌসুমে রোহিঙ্গাদের জন্য নির্মাণ করা পায়খানা, গোসলখানা, নলকূপ এবং স্বাস্থ্য কেন্দ্র প্লাবিত হওয়ার আশংকা রয়েছে।

বিশ্লেষণে বলা হয়, শরণার্থী শিবিরে প্রবেশের রাস্তাগুলো যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়তে পারে। এর ফলে, জরুরি ত্রাণ সহায়তা পৌঁছানো সম্ভব হবে না।

একই সাথে ছোঁয়াচে রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটতে পারে।

‘দুর্যোগের ওপর আরেক দুর্যোগ’

শরণার্থী ত্রাণ ও পুনর্বাসন কমিশনারের কার্যালয়ের তথ্যানুসারে, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে ২৫ আগস্টের পর পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে তিন হাজার একর পাহাড়ি বনভূমি ইজারা নিয়েছে ত্রাণ মন্ত্রণালয়। পুরো অঞ্চলে এখন আর একটি গাছও নেই। ‍

তাছাড়া, রোহিঙ্গারা ব্যক্তি মালিকানাধীন ভূমির ওপর ক্যাম্প গড়ে তুলেছে। সেই হিসাব নেই সরকারের কাছে।

বর্ষা মৌসুমের ঝুঁকি সম্পর্কে উখিয়ায় শরণার্থী শিবিরে কর্মরত পরিবেশবিদ ফয়সাল বেনারকে বলেন, “ইউএনএইচসিআর এর সতর্কবাণী সঠিক। বালুখালী, কুতুপালং, মধুরছড়া ও লাম্বারশিয়া এলাকার ঘন পাহাড়ি বনাঞ্চল কেটে সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে হাজার হাজার বাড়ি।”

তিনি বলেন, এখন সেখানে একটি গাছও নেই, পশুপাখিরও অস্তিত্ব নেই। এই স্থানগুলো এখন নেহায়েত মাটির ঢিবি।

রান্নার জ্বালানী হিসেবে গাছের পাশাপাশি পাহাড় খুঁড়ে গাছের শেকড় তুলে নেওয়া হয়েছে। আবার শরণার্থী শিবিরে পৌঁছানোর জন্য পাহাড় কেটে রাস্তা করা হয়েছে।

“গাছ মাটিকে ধরে রাখে। বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পানি গাছের ওপর পড়ে। ফলে ভূমিক্ষয় হয় না। এখন যেহেতু পাহাড়ে কোনও গাছ নেই, সেহেতু পানি সরাসরি মাটির ওপর পড়বে। এর ফলে মাটি দুর্বল হয়ে পাহাড় ধস ও ভুমিধস হতে পারে,” বলেন ফয়সাল।

তিনি বলেন, বসতিগুলো এতই ঘিঞ্জি যে, একটি বড় মাটির চাক ধসে পড়লে নীচে অবস্থিত কমপক্ষে তিন স্তরের বসতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

ফয়সাল আরও বলেন, গত ৩১ জানুয়ারি সামান্য দমকা বাতাসে বালুখালী ‍ও কুতুপালং শিবিরে অনেক বসতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কারণ, এগুলো প্লাস্টিক ও বাঁশ দিয়ে নির্মাণ করা। মোটামুটি ঝড়ে এগুলোর অধিকাংশই উড়ে যাবে।

বালুখারীর বাসিন্দা আব্দুস সাদিক (২৫) বেনারকে বলেন, সামান্য বাতাস হলেই তার ঘর নড়বড় হয়ে যায়।

তিনি বলেন, “জানি না বর্ষায় কতগুলো ঘর টিকবে। তবে, বার্মার মিলিটারি ও মগদের হাতে মরার চাইতে এখানে দুর্ভোগে মরা অনেক ভালো।”

জানুয়ারির ১৮ থেকে ২৪ তারিখ বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেন জাতিসংঘের বিশেষ দূত ইয়াংহি লি। সফর শেষে ফিরে গিয়ে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনার বরাত দিয়ে তিনি বৃহস্পতিবার দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলে সাংবাদিকদের বলেন, “এটা নিশ্চিত যে রোহিঙ্গারা সহসাই বাংলাদেশ থেকে যাচ্ছে না।”

একদিকে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার বিলম্ব অন্যদিকে সামনের বর্ষা মৌসুমে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা দিতে বাংলাদেশের প্রস্তুতিহীনতার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “এটা রোহিঙ্গাদের জন্য হবে এক দুর্যোগের ওপর আরেক দুর্যোগ।”

“মাত্র এক দিনের বৃষ্টিপাতে ভূমিধস ও বন্যায় অসংখ্য বসতি ধ্বংস হয়ে যেতে পারে, এমনকি হতাহতের ঘটনাও ঘটতে পারে,” বলেন লি।

দুর্যোগ মোকাবেলায় ‘কিছু ব্যবস্থা’

বিবৃতিতে ইউএনএইচসিআর বলেছে, বাংলাদেশে আসছে বর্ষা মৌসুমে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রতিকূল অবস্থা থেকে রক্ষা করতে তারা বাংলাদেশ সরকার ও অংশীদার প্রতিষ্ঠানসমূহ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

সংস্থার মতে, আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে পাহাড়ের খাড়া অংশগুলোকে সমান করার কাজ শুরু হবে।

এ ছাড়া আগাম সতর্কবার্তা প্রচার করার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এর মাধ্যমে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা আসন্ন বর্ষা মৌসুমে কী কী সমস্যার মধ্যে পড়তে পারে সে সম্পর্কে বার্তা পৌঁছানো সম্ভব হবে।

আন্দ্রেজ মাহেসিস বলেন, বাংলাদেশ সরকারও বর্ষা মৌসুমে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সমস্যাগুলো নিয়ে ভাবছে। ওই সব সমস্যা সমাধানে জাতিসংঘ ও মানবিক সাহায্য প্রদান করা প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বয়ে জরুরি প্রস্ততি গ্রুপ গঠন করেছে। এই গ্রুপ সকল প্রয়োজনীয় প্রস্ততির সমন্বয় করবে বলে বিবৃতিতে জানানো হয়।

বাংলাদেশে প্রতিবছর বর্ষাকাল শুরু হয় এপ্রিলের মাঝামাঝি এবং তা চলে অক্টোবর পর্যন্ত।

“বর্ষা মৌসুমে তাঁদের রক্ষা করতে কিছু ব্যবস্থা আমরা গ্রহণ করব,” বেনারকে বলেন শরণার্থী ত্রাণ ও পুনর্বাসন কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম।

পাঠকের মতামত

সিভিল সার্জন কার্যালয়ে স্বাস্থ্য সহকারী পরীক্ষায় প্রক্সি দিতে গিয়ে আটক ১

চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ে স্বাস্থ্য সহকারী নিয়োগের লিখিত পরীক্ষায় প্রক্সি দিয়ে উত্তীর্ণ হলেও মৌখিকে ধরা ...

গহীন পাহাড়ে কঠোর প্রশিক্ষণ, যা বললেন কুকি চিনের আকিম বম

বান্দরবানে পাহাড়ি সশস্ত্র সংগঠন কুকি–চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সামরিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নারী শাখার বান্দরবান সদর ও ...

নাইক্ষ‌্যংছড়ি উপজেলা নির্বাচন বর্জনে জেলা বিএনপির লিফলেট বিতরণ

বান্দরবান জেলার আসন্ন নাইক্ষ‌্যংছড়ি উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জনে বান্দরবান জেলা বিএনপির দিনব‌্যাপি লিফলেট বিতরণ করা ...

নাইক্ষ‍্যংছড়ির গহিন অরণ্যে অভিযান, ৮টি আগ্নেয়াস্ত্রসহ বিপুল সরঞ্জাম উদ্ধার

বান্দরবানের নাইক্ষ‍্যংছড়ির গহিন অরণ্যে দুর্বৃত্তদের আস্তানায় হানা দিয়ে ৮টি আগ্নেয়াস্ত্র ও বিপুল অস্ত্র তৈরির সরঞ্জাম ...