প্রকাশিত: ২১/০৪/২০১৭ ১০:৫৩ পিএম

নিউজ ডেস্ক ::
ভারতের জম্মুতে অবস্থিত রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরগুলোতে দিন কয়েক আগে গিয়েছিলেন শ্রীনগরে বিবিসি হিন্দির সংবাদদাতা রিয়াজ মাসরুর, সেখান থেকে ফিরে তাঁর বিশেষ প্রতিবেদন।
ভারতে বসবাসরত রোহিঙ্গা মুসলমানদের মধ্যে হাজার ছয়েক বাস করেন ভারত-শাসিত জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যে।তবে মূলত জম্মু অঞ্চলেই বিভিন্ন বসতি গড়ে তুলেছেন তাঁরা।কেউ কাজ করেন রাজমিস্ত্রির, কেউ আপেল বা কমলা বাগানে।দুশ্চিন্তা এঁদের সবসময়ের সঙ্গী থেকেছে, কিন্তু এখন তার সঙ্গে যোগ হছে মৃত্যুভয়।জম্মুর নরওয়াল এলাকায় দু’টি আর ভগবতী নগরে একটি শরণার্থী শিবিরে বসবাসকারী রোহিঙ্গা পরিবারগুলোর পুরুষরা যেমন যেতে পারছেন না কাজে, তেমনই নারীরা রোজকার প্রয়োজনের জন্য দোকানে যেতেও ভয় পাচ্ছেন।জম্মু অঞ্চলের কিছু হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক নেতা আর কয়েকটি ব্যবসায়িক সংগঠন অভিযোগ তুলেছে যে রোহিঙ্গারা জম্মু দখল করে নিচ্ছে। এ নিয়ে যে প্রচারাভিযান চলছে, তাতে বলা হচ্ছে যে জম্মু-কাশ্মীরের মানুষদের জন্য যেসব বিশেষ অধিকার আর সুযোগ-সুবিধা রয়েছে, সেগুলোর ফায়দা নিচ্ছেন রোহিঙ্গা মুসলমানরা।কিছুদিন আগে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরগুলোর সামনে কিছু লোক ত্রিশূল আর তলোয়ার নিয়ে মিছিল করে হুমকি দিয়ে এসেছে যেন জম্মু ছেড়ে রোহিঙ্গারা চলে যান।গত বছর নভেম্বর থেকে সেখানে রোহিঙ্গা বিরোধী আন্দোলন শুরু হয়েছে। এরপর থেকে শরণার্থী শিবিরগুলোতে চারবার আগুন লেগেছে। যথেষ্ট সন্দেহজনক ওই অগ্নিকান্ডগুলোতে মৃত্যু হয়েছে পাঁচজন রোহিঙ্গা শরণার্থীর, আর বহু ঘর আগুনে ধ্বংস হয়ে গেছে।সর্বশেষ অগ্নিকান্ডটি ঘটেছে গত শুক্রবার।দশ ঘরের ওই ভগবতী নগর শিবিরের সাতটি ঘরই আগুনে পুড়ে গেছে। ওই শিবিরে ১৯টি রোহিঙ্গা মুসলমান পরিবার বসবাস করে।ওই শিবিরেই থাকেন নূর ইসলাম। তাঁর কথায়, “বৃহস্পতিবারই ক্যাম্পের আশপাশে বেশ কয়েকজন অচেনা লোককে ঘোরাঘুরি করতে দেখেছিলাম। তবে গুরুত্ব দিইনি খুব একটা। কে জানে ওরা কারা! কিন্তু এখন সত্যিই ভয় করতে শুরু করেছে আমাদের। এরকম ঘটনা তো এই প্রথম হল না! কোথায় যাব আমরা?”কিছুটা দূরের নরওয়াল শিবিরে ৭১টি রোহিঙ্গা পরিবারের বাস।মুহাম্মদ ইয়াসিন ওই শিবিরেরই বাসিন্দা।”আমরা দিনমজুরের কাজ করি। কাজের জন্য বহু দূরে যেতে হয়। কিন্তু গত কিছুদিন যাবত কেউ কাজে বেরচ্ছে না। কী করে যাব? যদি কেউ মেরে দেয়! মনে হচ্ছে নিজেদের ঘরেই কেউ যেন আমাদের বন্দী করে রেখেছে,” বলছিলেন মি. ইয়াসিন।নরওয়াল শিবিরেরই আরেক বাসিন্দা আবদুল শুকুর আর তাঁর মেয়ে খুব আতঙ্কে রয়েছেন।তাঁরা বলছিলেন, “আমরা কি এখানে চিরকালের জন্য থাকতে এসেছি? আমরা তো আশ্রয় নিয়েছি এখানে। নিজের দেশে আমাদের মেরে ফেলা হচ্ছে। দেশের পরিস্থিতি শান্ত হলেই তো আমরা ফিরে যাব!”রাজ্যে ক্ষমতাসীন বিজেপি-পিডিপি সরকারের প্রধান মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি বলছেন রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিষয়ে তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।যদিও বিজেপি-র স্থানীয় নেতা ও বিধানসভার স্পিকার কবিন্দর গুপ্তা বলছেন, “পশ্চিম পাকিস্তান থেকে কয়েক দশক আগে যেসব হিন্দু পরিবার এখানে চলে এসেছিল, তারা এখনও নাগরিকত্ব পায় নি। কিন্তু রোহিঙ্গা মুসলমানদের এখানে রেশন কার্ড হয়ে গেছে, সরকারি নথিও হয়েছে। সেজন্যই কিছু মানুষের মধ্যে দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে। তবুও আমরা চাই মানবিকতার সঙ্গে বিষয়টা সমাধান করা হোক।”রোহিঙ্গা মুসলমানদের জাতিসংঘ শরণার্থী পরিচয়পত্র দিয়েছে। কিন্তু এই ‘রোহিঙ্গা হঠাও’ অভিযানের ফলে তাঁরা এখন প্রাণের ভয় পেতে শুরু করেছেন।তাদের ভয় পাওয়াটা অবশ্য অমূলক নয়।সম্প্রতি খবর বেরিয়েছিল জম্মুর ব্যবসায়িক সংগঠন ‘জম্মু চেম্বার অব কমার্স’-এর সভাপতি রাকেশ গুপ্তা রীতিমতো সংবাদ সম্মেলন করে এমন ঘোষণা দেন যে রোহিঙ্গা মুসলমানদের এক এক করে খুঁজে বের করে মেরে ফেলার সময় এসেছে।তবে মি. গুপ্তা বিবিসিকে জানিয়েছেন, “এটা সংবাদমাধ্যমের ভুল। আমি বলেছিলাম এই সমস্যাগুলোকে খুঁজে বের করে খতম করে দেওয়া হবে। কোনও মানুষকে মারার কথা বলিনি।”তবে মি. গুপ্তার এই ‘সংশোধিত’ বক্তব্য জম্মুর সংবাদমাধ্যমে খুঁজে পাওয়া যায়নি।

পাঠকের মতামত

জাতিসংঘে প্রেসিডেন্ট পদে লড়বে বাংলাদেশ, প্রতিদ্বন্দ্বী ফিলিস্তিন

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮১তম অধিবেশনের প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে বাংলাদেশ। এবারের নির্বাচনে বাংলাদেশের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ...

জাতিসংঘে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব বিপুল ভোটে পাস

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে হামাসমুক্ত স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একটি প্রস্তাব বিপুল ভোটে পাস হয়েছে। ...

বিমান ছিনতাই করেছিলেন নেপালের নতুন প্রধানমন্ত্রী সুশীলা কার্কির স্বামী

নেপালের অন্তর্বর্তী সরকারের নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন দেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কি। দুর্নীতির ...