প্রকাশিত: ১৩/০৭/২০১৮ ৭:৩৭ পিএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ১২:৪৭ এএম

ডেস্ক রিপোর্ট- ৩৫ বছর বয়সের ব্যক্তিটির মৃত্যু সম্পর্কিত সত্য নির্ভর করছে কার কাছে আপনি জানতে চাইছেন: পুলিশ বলছে, তিনি ছিলেন মাদক সম্রাট। অভিযানকালে বন্দুকযুদ্ধে তিনি মারা গেছেন।

কিন্তু কামরুল ইসলামের পরিবার বলছে, তিনি ছিলেন একজন বাবা, ১০ বছর আগে ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছিলেন। তার মৃত্যু আসলে খুন।

কামরুলের শ্যালিকা সাথী বেগম বলেন, আমরা মনে করি, সব অপরাধী ও মাদক ব্যবসায়ীকে শাস্তি দেয়া উচি। কিন্তু আমরা আমার ভগ্নিপতির মতো যারা সবকিছু পেছনে ফেলে এসেছেন, তাদের নিহত হতে দেখতে চাই না।

বাংলাদেশে বাড়বাড়ন্ত মাদক ব্যবসা দমনের জন্য ৩ মে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে পরিচালিত অভিযানের প্রথম দুই মাসে যে ১৩৮ জন নিহত হয়েছেন, কামরুল তাদের একজন। মাদববিরোধী অভিযানে ১৬ হাজার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, দণ্ডিত হয়েছে চার হাজার। এই অভিযান নিয়ে মানবাধিকার অ্যাক্টিভিস্টদের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।

সরকার এসব উদ্বেগ উড়িয়ে দিয়েছে। তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, এসব অভিযানে হত্যাকাণ্ড প্রধান এজেন্ডা নয়। তিনি বলেন, অভিযানের সময় সন্দেহভাজনরা সহিংস হয়ে ওঠলেই মৃত্যুর ঘটনা ঘটে, কর্তৃপক্ষ প্রতিটি মৃত্যু তদন্ত করছে।

তিনি বলেন, আইনের গণ্ডির মধ্যেই সরকার কাজ করছে।

তবে মৃত্যু ও গ্রেফতারের সংখ্যা পর্যবেক্ষণের আওতায় এসেছে। রাজধানী ঢাকার একটি এলাকায় মে মাসের শেষ দিকে র‌্যাব অভিযান চালিয়ে দুই ঘণ্টায় ১৫৩ জনকে গ্রেফতার করে। পর দিন তাদের অর্ধেকের বেশি দণ্ডিত হয়। আটকদের মধ্যে নাপিত, দর্জি ও ছাত্র ছিল। অনেকে বিছানায় বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। এক মাস পর কর্মকর্তারা আবার সেখানে কুকুর, একে-৪৭ রাইফেল নিয়ে ফিরে আসে। এবার ৫১ জনকে গ্রেফতার করা হয়, সাজা পায় ১৮ জন।

বিরোধী দলের সদস্যরা অভিযোগ করছে, হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকার চলতি বছরের সাধারণ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিরোধীদের টার্গেট করতে দমন অভিযান হিসেবে ব্যবহার করছে একে।

বিরোধী বিএনপির বিশেষ সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, মাদকবিরোধী অভিযানের সময় তার দলের অন্তত ১০ কর্মী নিহত হয়েছে। মাদক অভিযোগ থেকে রক্ষা পেতে তার দলের কর্মীদের এলাকা থেকে সরে যেতে বলা হয়েছে।

তিনি বলেন, আমাদের অনেক কর্মী তাদের এলাকায় বসবাস করতে পারছে না। সরকার বিএনপির অভিযোগ ভিত্তিহীন হিসেবে উড়িয়ে দিয়ে বলেছে, অভিযানটি অরাজনৈতিক এবং কয়েকটি সংস্থার গোয়েন্দাদের সূত্রের ভিত্তিতে হচ্ছে।

শেখ হাসিনা ২০০৯ সাল থেকে ক্ষমতায় রয়েছেন। সমালোচকেরা বলছেন, সরকার ক্রমবর্ধমান হারে স্বৈরতান্ত্রিক হয়ে ওঠছে। নিরপেক্ষ পরিবেশ না থাকার অভিযোগ তুলে ২০১৪ সালে সর্বশেষ নির্বাচন বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট বয়কট করে। ফলে অর্ধেক আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন হয়। এই নির্বাচন বাংলাদেশে ও আন্তর্জাতিকভাবে সমালোচিত হয়। বিরোধী নেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে একটি দুর্নীতির মামলায় কারাগারে রাখা হয়েছে।

সর্বশেষ মাদকবিরোধী অভিযান বিচার-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের আরেকটি ফ্রন্ট হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে বলে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশ কিভাবে অভিযান চালাচ্ছে, তা পুনঃবিবেচনা করার জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

জাতিসংঘ মানবাধিকারবিষয়ক হাই কমিশনার জিয়াদ রাদ আল-হোসাইন এক বিবৃতিতে বলেছেন, বিপুলসংখ্যক লোক নিহত হওয়ায় আমি খুবই উদ্বিগ্ন।

বাংলাদেশে শুরুতে মাদকবিরোধী অভিযান ছিল ব্যাপক জনপ্রিয়। অনেকে বিশ্বাস করত, মাদক ব্যবসায় সমাপ্তি টানা জন্য কঠোর অবস্থান গ্রহণ জরুরি। কিন্তু গত ১ জুন ডেইলি স্টার পত্রিকার ওয়েবসাইটে ওডিও রেকর্ডিং প্রকাশিত হওয়ার পর সরকারি ভাষ্য নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তোলেন।

টেকনাফ শহরের ওয়ার্ড কাউন্সিলর একরামুল হকের রেকর্ডিং তুলে ধরে তার স্ত্রী বলেন, গুলি করার সময় তিনি তার স্বামীর সাথে ফোনে ছিলেন। তিনি বলেন, তিনি তার ফোনে কথোপকথন রেকর্ড করেছিলেন। কোনো বন্দুকযুদ্ধ শোনা যায়নি, বরং লোকজন বন্দুকের গুলির শব্দের আগে কথা বলছে বলে শোনা গেছে।

একরামুল হকের পরিবার সদস্যরা মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছেন। তারা বলছেন, এ নিয়ে কথা বলে কোনো লাভ হবে বলে তারা মনে করছেন না। তার স্ত্রী আয়েশা বেগম ইতোপূর্বে এক সংবাদ সম্মেলনে ডেইলি স্টারকে বলেন, ‌সবকিছুই ছিল পুরোপুরি সাজানো, … পরিকল্পিত খুন।

র‌্যাবের মুখপাত্র মুফতি মোহাম্মদ খান অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেন, একরামুলের নামটি কয়েকটি সংস্থার তালিকায় ছিল। তিনি ছিলেন সুপরিচিত মাদক ব্যবসায়ী।

বাংলাদেশে মাদক ব্যাপকভাবে উদ্বেগের বিষয় হয় ২০১৩ সালে। ওই সময় ঐশী রহমান নামের এক মাদকাসক্ত কিশোরী তার মা-বাবাকে হত্যা করেছিল। তারা তাকে ইয়াবা গ্রহণ থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করেছিল। তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, অনেক প্রস্তুতি গ্রহণ করার পর মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করা হয়।

কয়েকটি দৈনিকে খবর প্রকাশ করে, গত কয়েক সপ্তাহে বন্দুকযুদ্ধে মাদক কারবারিদের নিহত হওয়ার ঘটনা কমে এসেছে। তবে সরকার বলছে, বাংলাদেশ থেকে মাদক নির্মূলের অভিযান চলবে।

শেখ হাসিনা জুনে সংসদে বলেছেন, মাদক দেশ, জাতি ও পরিবারকে ধ্বংস করে। আমরা অভিযান অব্যাহত রাখব, কে কী বলল, তা কোনো ব্যাপার নয়।

পাঠকের মতামত

পবিত্র ঈদুল ফিতর আজ

‘ঈদ এসেছে দুনিয়াতে শিরনি বেহেশতী/দুষমনে আজ গলায় গলায় পাতালো ভাই দোস্তি’- জাতীয় কবি কাজী নজরুল ...