প্রকাশিত: ২৬/০৮/২০১৮ ৭:৪৬ এএম

উখিয়া নিউজ ডটকম::
মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ বাংলাদেশে নিরাপত্তা শঙ্কা তৈরি করেছে বলে মনে করে যুক্তরাষ্ট্র। গত জুলাইয়ে প্রকাশিত বিনিয়োগ পরিবেশ প্রতিবেদনে এমন পর্যবেক্ষণ দিয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর।

প্রতি বছরই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগ পরিবেশ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ব্যুরো অব ইকোনমিক অ্যান্ড বিজনেস অ্যাফেয়ার্স। তাদের ‘ইনভেস্টমেন্ট ক্লাইমেট স্টেটমেন্ট-২০১৮’ শীর্ষক সর্বশেষ প্রতিবেদনটি প্রকাশ পেয়েছে গত ১৯ জুলাই।

প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপে, চলতি বছর বাংলাদেশে বিনিয়োগ নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের পর্যালোচনায় নতুন বিষয় হিসেবে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর অনুপ্রবেশের ঘটনাটি উঠে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালের আগস্টে শুরু হয়ে এ পর্যন্ত প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ ঘটেছে বাংলাদেশে। এ ঘটনা দেশটিতে নিরাপত্তা শঙ্কা সৃষ্টি করেছে।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ২০১৫ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত ধারাবাহিক সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে বাংলাদেশে। ২০১৬ সালের ১ জুলাই ঘটেছে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলার ঘটনা। এসব সন্ত্রাসী হামলার প্রভাবে মার্কিন দূতাবাসের কর্মীসহ বহু বিদেশী নাগরিকের ওপর নিরাপত্তা-সংক্রান্ত বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। এমন পরিস্থিতিতে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে দেশটিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার আশা রয়েছে।

তবে চলতি বছর নির্বাচন ও সাম্প্রতিক রোহিঙ্গা ইস্যু বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিবেশে কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না বলে মনে করছেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিআইডিএ) নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী এম আমিনুল ইসলাম। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, সরকার বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। সরকারি এ তত্পরতার প্রতিফলন নিকট ভবিষ্যতে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের ডুয়িং বিজনেস রিপোর্টে দেখা যাবে। এরই মধ্যে ব্যবসার পরিবেশ সহজ করার কাজে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। আগামী পাঁচ বছরে ডুয়িং বিজনেস রিপোর্টে বাংলাদেশকে ৯৯তম অবস্থানে নিয়ে আসার পরিকল্পনা রয়েছে। সে লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার। তবে কোনো পরিবর্তনই একদিনে আসে না বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশের বিদেশী বিনিয়োগ মোট দেশজ উৎপাদনের মাত্র ১ শতাংশ উল্লেখ করে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এশিয়ায় সর্বনিম্ন বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণকারীদের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার কৃষি, বস্ত্র ও পোশাক, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, লাইট ম্যানুফ্যাকচারিং, জ্বালানি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং অবকাঠামো খাতে বিদেশী বিনিয়োগ খুঁজছে। শিল্পনীতির আওতায় বাংলাদেশে বিনিয়োগ প্রণোদনা রয়েছে। বিদেশী ও স্থানীয় ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগকারীদের জন্য রফতানিভিত্তিক প্রবৃদ্ধির কৌশল অবলম্বনের আহ্বানও দেশটির সরকারের পক্ষ থেকে রয়েছে।

নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিতসহ বিনিয়োগ বাধা দূর করতে বাংলাদেশের গ্রহণ করা পদক্ষেপগুলোর ক্রমবর্ধমান অগ্রগতির স্বীকৃতি দিয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এ প্রতিবেদন। তবে অপ্রতুল অবকাঠামো, সীমিত অর্থায়ন কৌশল, আমলাতান্ত্রিক বিলম্ব ও দুর্নীতি বাংলাদেশে বিদেশী বিনিয়োগকে বাধাগ্রস্ত করছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, ব্যবসার পরিবেশ উন্নয়নে নতুন সরকারি পরিকল্পনা প্রকাশ করলেও এখন পর্যন্ত কোনো বাস্তবায়ন দেখা যায়নি। ব্যবসার চুক্তি কার্যকর ও বিরোধ নিরসন প্রক্রিয়াটিতে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি পদ্ধতি প্রচলনে ধীরগতি এবং স্থবির বিচার প্রক্রিয়া।

বাংলাদেশে শ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং কারখানা নিরাপত্তা সমস্যা দূর করতে আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড ও সম্প্রদায়ের অব্যাহত চাপ বজায় আছে জানিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতায় কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তায় বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হলেও রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলগুলোয় শ্রম অধিকার সুরক্ষায় স্বাধীন সংঘ গঠন ও দরকষাকষি নিশ্চিতে কিছু জটিল কাজ বাকি রয়েছে।

মার্কিন সরকারি দপ্তরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মেধাস্বত্ব সুরক্ষা এবং নকল পণ্য প্রতিরোধে বাংলাদেশ সরকারের সামর্থ্য সীমিত। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নীতিমালা প্রণয়ন প্রক্রিয়া চলমান আছে। এছাড়া বাংলাদেশের আর্থিক খাত ব্যাংকের ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল। পুঁজিবাজার এখনো উন্নয়নের পথে রয়েছে।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের বিনিয়োগ পরিবেশ নিয়ে পর্যালোচনায় যেসব বিষয় বিবেচনায় নেয়, তার মধ্যে প্রথমেই আছে বিদেশী বিনিয়োগ উন্মুক্ততা। এছাড়া অন্য বিষয়গুলো হলো দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ এবং কর-সংক্রান্ত চুক্তি, আইনি কাঠামো, শিল্পনীতি, মেধাস্বত্ব সুরক্ষা, আর্থিক খাত, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান, দায়িত্বশীল ব্যবসা পরিচালনা, দুর্নীতি, রাজনৈতিক এবং নিরাপত্তা পরিবেশ, শ্রমনীতি ও চর্চা এবং বিনিয়োগ ঝুঁকি নিরসনমূলক কর্মসূচিগুলো।

তবে গত বছরের প্রতিবেদনে উল্লেখ থাকলেও এবারের প্রতিবেদনে মার্কিন বাজারে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধা (জিএসপি) ফিরে পেতে বাংলাদেশের ওপর দেশটির আরোপিত কর্মসূচিগুলোর কোনো উল্লেখ নেই।

পাঠকের মতামত

সিভিল সার্জন কার্যালয়ে স্বাস্থ্য সহকারী পরীক্ষায় প্রক্সি দিতে গিয়ে আটক ১

চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ে স্বাস্থ্য সহকারী নিয়োগের লিখিত পরীক্ষায় প্রক্সি দিয়ে উত্তীর্ণ হলেও মৌখিকে ধরা ...

গহীন পাহাড়ে কঠোর প্রশিক্ষণ, যা বললেন কুকি চিনের আকিম বম

বান্দরবানে পাহাড়ি সশস্ত্র সংগঠন কুকি–চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সামরিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নারী শাখার বান্দরবান সদর ও ...

নাইক্ষ‌্যংছড়ি উপজেলা নির্বাচন বর্জনে জেলা বিএনপির লিফলেট বিতরণ

বান্দরবান জেলার আসন্ন নাইক্ষ‌্যংছড়ি উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জনে বান্দরবান জেলা বিএনপির দিনব‌্যাপি লিফলেট বিতরণ করা ...

নাইক্ষ‍্যংছড়ির গহিন অরণ্যে অভিযান, ৮টি আগ্নেয়াস্ত্রসহ বিপুল সরঞ্জাম উদ্ধার

বান্দরবানের নাইক্ষ‍্যংছড়ির গহিন অরণ্যে দুর্বৃত্তদের আস্তানায় হানা দিয়ে ৮টি আগ্নেয়াস্ত্র ও বিপুল অস্ত্র তৈরির সরঞ্জাম ...