ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: ৩১/০৭/২০২৫ ৯:২৫ পিএম , আপডেট: ৩১/০৭/২০২৫ ৯:৪২ পিএম

অর্থ সংকটে বন্ধ হওয়ার একদিনের মাথায় ফের সচল হলো কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আধুনিক সেবা সম্বলিত ইনসেনটিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ)। বিনাবেতনে চিকিৎসা সেবা দেওয়া সংশ্লিষ্টরা সেবা সচল রাখতে অস্বীকৃতি জানানোর পর বুধবার (৩০ জুলাই) বন্ধ হয়ে যায় হাসপাতালের এ সেবা। বুধ-বৃহস্পতিবার সারাদিন কোনো রোগী ভর্তি নেওয়া হয়নি আইসিইউতে। তবে কর্তৃপক্ষের তড়িত সিদ্ধান্তে তিনজন চিকিৎসক পদায়ন করায় আইসিইউটি ফের সচল হয়।

হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগের ইনচার্জ ডা. কফিল উদ্দিন জানান, বিনাবেতনে ৯ মাস ধরে কর্মরত ছিলেন ৫ চিকিৎসক ও ৬ কর্মচারী। এভাবে বেতন ছাড়া পরিবার চালাতে পারছিলেন না তারা। ফলে, চিকিৎসকরা ডিউটি করবেন না বলে জানিয়ে দেন। এতে সেবা বন্ধ হয়ে যায়।

আরও পড়ুন::  বন্ধ হয়ে গেছে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আইসিইউ

পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে তিন ডাক্তার পদায়ন করে। বৃহস্পতিবার দুজন যোগ দিয়েছেন। আগামী সপ্তাহে অপরজন কাজে যোগ দেবেন। আপাতত আইসিইউ সচল করা সম্ভব হয়েছে।

তবে, বিষয়টি জানতে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মং টিংয়ের মোবাইলে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

তথ্যমতে, হাসপাতালটিতে সরকারি মঞ্জুরি হওয়া পদ রয়েছে ৩২৮টি। এর মধ্যে ৭৬টি শূন্য পদ বিদ্যমান। জরুরি বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ৫০০ থেকে এক হাজার রোগী আসেন। মাত্র তিনজন চিকিৎসক এখানে সেবা দেন। ন্যূনতম সেবা চালু রাখতে হলে জরুরি বিভাগে অন্তত ১২ জন চিকিৎসক দরকার। এছাড়া ২৫০ শয্যার হলেও হাসপাতালের ইনডোরে গড়ে প্রতিদিন ৭০০-৮০০ রোগী ভর্তি থাকেন।

কক্সবাজার সিভিল সার্জন ও সদর হাসপাতাল কার্যালয় সূত্র জানায়, বিশ্বব্যাংকের ‘স্বাস্থ্য ও জেন্ডার সাপোর্ট প্রকল্প (এইচজিএফপি), স্বাস্থ্য ও লিঙ্গ সহায়তা প্রকল্পের (এইচজিএস) অধীনে রোহিঙ্গা সংকটে স্থানীয়দের জন্য বিশ্বব্যাংকের বরাদ্দ অর্থে আন্তর্জাতিক ও দেশি বিভিন্ন এনজিও জেলাব্যাপী হাসপাতাল ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সহায়তা দিয়ে আসছে ২০১৯ সালের শুরু থেকে। এতে কক্সবাজার স্বাস্থ্য বিভাগে সরকারিভাবে নিয়োগ করা জনবল ছাড়াও কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসক-কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলিয়ে ১৯৯ জন পদায়ন করা হয়েছিল। যাদের মাধ্যমে হাসপাতালের আইসিইউ, সিসিইউ, জরুরি প্রসূতি এবং শিশু সুরক্ষা সেবা কার্যক্রম বাড়ানো হয়। কিন্তু প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয় ২০২৪ সালের জুন মাসে। ওই সময় বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশের পর সরকারি প্রচেষ্টায় প্রকল্পের মেয়াদ ৩ মাস বাড়িয়ে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়।

সূত্রমতে, এরপর তা আর এগুইনি। ফলে বিশাল সংখ্যক জনবল বিনাবেতনে সেবা দিয়ে আসছিল। কিন্তু প্রকল্পের মেয়াদ আর বাড়ছে না এবং বিনাবেতনে কাজ করে সংসারের চাকা সচল রাখা যাচ্ছে না দেখে হাসপাতাল ত্যাগ করতে বাধ্য হন অনেকে। এরপরই মূলত বন্ধ হয়ে যায় বিশেষায়িত এসব সেবা।

মূলত বিশেষায়িত বিভাগসমূহ এনজিও’র ওপর নির্ভরশীল। আইসিইউ ও সিসিইউসহ কয়েকটি বিভাগ সরকারি ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা সদর হাসপাতালের অধীনে নয়। ২০২৪ এর জুন মাসে এসে এনজিও প্রকল্প বন্ধ হয়ে যায়। পরে তিনমাস বাড়ানো হলেও সেপ্টেম্বর বন্ধ হয়ে যায়। এরপরও টেনেটুনে চলে, কিন্তু পরে অনেকেই চাকরি ছেড়ে চলে যান। তাই চিকিৎসক ও কর্মচারীর অভাবে সিসিইউ বিভাগ চলতি বছরের ৮ মে বন্ধ হয়ে যায়।

এ বিষয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রচেষ্টায় বিশেষায়িত বিভাগটির জন্য সরকারিভাবে দুজন চিকিৎসক পদায়ন করে ১৩ মে থেকে ফের সচল হয়। পূর্বে সেবা প্রদানকারীদের মাঝে দুজন চিকিৎসক আবারও বিনাবেতনে সেবাদানে সম্মতি দিয়ে কাজে যোগ দেন। এতে স্বস্তি ফিরেছিল পর্যটন জেলায়।

ওই সময়, আইসিইউ বিভাগও যে কোনো মুহূর্তে বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। এটি সচল রাখতে প্রকল্পটি দ্রুত অনুমোদন দেওয়া জরুরি বলে মত দিয়েছিলেন সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু প্রকল্প চালু না হওয়ায় গত বুধবার আইসিইউ সেবাটি বন্ধ হয়ে যায়। একদিন পর ফের সচল করা সম্ভব হয়।

পাঠকের মতামত

পলিথিন মজুত বা বিক্রি করলে আইনগত ব্যবস্থা: র‍্যাবের হুঁশিয়ারি

পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার রোধে মাসব্যাপী জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম শুরু করেছে র‍্যাব-১৫ কক্সবাজার ব্যাটালিয়ন। এই কার্যক্রমের অংশ ...