প্রকাশিত: ০৮/০৮/২০১৮ ৮:০৯ এএম , আপডেট: ১৬/০৮/২০১৮ ১১:৩৯ পিএম

উখিয়া নিউজ ডটকম :
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গারা মিথ্যা অভিযোগ এনে এবার দোষারোপ করছে এনজিওদের। বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রিত রোহিঙ্গা রোগীদের এনজিও কর্মীরা চিকিৎসা সেবায় অনিয়ম করছে বলে অভিযোগ করছে তারা। অথচ সরকারী মেডিকেল টিম ছাড়াও রাতদিন রোহিঙ্গাদের চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত রয়েছে একাধিক এনজিও সংস্থার ডাক্তার ও কর্মীরা। রোহিঙ্গা রোগীদের জন্য যথেষ্ট ওষুধ স্টক রয়েছে। রোগ অনুপাতে তাদের পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে। তবে ফ্রি পাওয়া ওষুধগুলো নগদ টাকায় রোহিঙ্গারা বাইরে বিক্রি করে দিচ্ছে বলে জানা গেছে।
সূত্রে জানা গেছে, কুতুপালং ক্যাম্পে এক রোহিঙ্গার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ডাক্তাররা রোহিঙ্গাদের প্রতি মনোযোগ দিচ্ছেনা বলে দাবী করে রোহিঙ্গারা জানায়, ডাক্তারদের কাছ থেকে কোনরুপ সাঁড়া পাওয়া যাচ্ছেনা। ক্যাম্পে রোহিঙ্গারা বর্তমানে চিকিৎসা সঙ্কটের মধ্যে দিনাতিপাত করছে। বিভিন্ন এনজিও সংস্থার লোকজন রোহিঙ্গাদের চিকিৎসার নাম করে ফান্ড সংগ্রহ করলেও তা রোহিঙ্গাদের সাহায্যার্থে ব্যয় করছেনা। অনেক রোহিঙ্গা নিজের টাকা খরচ করে বাইরে প্রাইভেট ডাক্তার দেখাচ্ছে ও ওষুধ কিনছে। অপরদিকে স্থানীয় অধিবাসিরা জানান, বিভিন্ন মেডিকেল সেন্টার থেকে ফ্রি নিয়ে যাওয়া ওষুধগুলো নগদ টাকায় বাইরে বিক্রি করে দিচ্ছে রোহিঙ্গারা। আশ্রিত ক্যাম্পের বিভিন্ন ব্লকে গিয়ে এক শ্রেণীর ওষুধ ক্রেতা দালাল স্বল্পদামে কিনে নিয়ে আসছে ওসব ওষুধ। একজন ওষুধ ক্রেতা জানান, কোথাও (আশ্রিত কক্ষে) ওষুধ জমা হলে মুঠোফোনে ডাক দেয়া হয়। সেখানে গিয়ে নিয়ে আসি ওসব ওষুধ। বিভিন্ন প্রকারের ওষুধ বিক্রির নগদ টাকা পেয়ে বেজায় খুশি রোহিঙ্গা নারীরা।
স্থানীয়রা বলেন, রোহিঙ্গাদের যতক্ষণ ভাল খাবার, অতিরিক্ত ত্রাণ ও নগদ টাকা দেয়া যায়, তাতে যথেষ্ট খুশি রোহিঙ্গারা। নিজেদের স্বার্থের ব্যত্যয় ঘটলেই তারা ক্ষেপে যায়। এ পর্যন্ত কখনও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে দেখা যায়নি তাদের। গত বছরের সেপ্টেম্বরে রোহিঙ্গা স্রোত অনুপ্রবেশের পর রোহিঙ্গাদের সেবা দিতে কক্সবাজার ছাড়াও বাইরের জেলা থেকেও সরকার চিকিৎসক এনেছে। মিয়ানমার থেকে সঙ্গে করে নিয়ে আসা মরণব্যাধী এইডস, ডিপথেরিয়াসহ নানা চোয়াচে রোগ শনাক্ত করে ওসব রোহিঙ্গা রোগীকে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হচ্ছে। সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা গেছে, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রতিটি মেডিকেল সেন্টারে নিরলসভাবে রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশুদের চিকিৎসা দিচ্ছে স্বস্ব কেন্দ্রের চিকিৎসকরা। রোহিঙ্গাদের চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছেন ডাক্তার-নার্সগণ। তারপরও রোহিঙ্গাদের মূখে কৃতজ্ঞতাবোধ নেই বলে জানিয়েছেন চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা। তিনি বলেন, হাম, যক্ষা ও ডিপথেরিয়ার মত সংক্রামক ব্যাধির টিকা রাখাইন রাজ্যে নেয়নি রোহিঙ্গারা। এ কারণেই রোহিঙ্গাদের মাধ্যমে ডিপথেরিয়া রোগটি ফিরে এসেছে উখিয়া টেকনাফে। তবে সরকার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে ভ্যাকসিনের আওতায় এনে ওই রোগের ভ্যাকসিন দিয়ে চলেছে।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দায়িত্বপালনকারী একজন চিকিৎসক বলেন, সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কোন ধরণের ফাঁকি না দিয়ে দায়িত্ব পালন করে থাকি। রোহিঙ্গাদের রোগের বিষয়ে, ওষুধ খাওয়ার নিয়ম বুঝিয়ে দিতে মাথার ঘাম পায়ে পড়ার মত অবস্থা হয়। মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে রোহিঙ্গাদের চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে নিয়মিত। এমনকি বন্ধের দিনেও ক্যাম্পের বিভিন্ন মেডিকেল সেন্টার খোলা থাকে। ওই সেন্টারে দায়িত্বরত ডাক্তার যদি কোন রোগীর বিষয়ে আরও উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন বলে মনে করেন, তাকে (রোগী) কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে বিশেষ ব্যবস্থায় ফ্রি চিকিৎসা পেতে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। ওই রোগীর খোঁজখবরও রাখা হয়ে থাকে। এরপরও রোহিঙ্গারা বলে থাকে চিকিৎসা পায়না। তিনি বলেন, কতদিনে যে এ আপদ দেশ থেকে চলে যাবে-এ অপেক্ষায় রয়েছি।
অভিযোগ পাওয়া গেছে, রোগী না হওয়া সত্বেও রোহিঙ্গারা মেডিকেল সেন্টারে গিয়ে মিথ্যা রোগের কথা বলে ওষুধ এনে বিক্রি করে দিচ্ছে পল্লী চিকিৎসকদের কাছে। টেকনাফ ও উখিয়ার আশ্রিত ক্যাম্পে ওষুধের দোকান খুলে বসেছে মিয়ানমারের ডাক্তার খ্যাত অনভিজ্ঞ বহু রোহিঙ্গা। তারা কিছু কিছু রোহিঙ্গাকে মিথ্যা রোগের কথা বলে মেডিকেল সেন্টারে পাঠাচ্ছে। তারা বিভিন্ন প্রকারের ওষুধ এনে বিক্রি করে দিচ্ছে ওসব ভূয়া ডাক্তারের চেম্বারে। স্বঘোষিত রোহিঙ্গা চিকিৎসকরা স্বল্পমূল্যে কিনে ওসব ওষুধ ফের বিক্রি করে চলেছে বিভিন্ন ফার্মেসীতে। এভাবে ত্রাণ সামগ্রী ও ওষুধ বিক্রি করে টুপাইস কামাই করছে রোহিঙ্গারা। সরকার ও এনজিও সংস্থার চিকিৎসকরা রোহিঙ্গাদের চিকিৎসা সেবায় রাতদিন কষ্ট করে চললেও সুনাম করছেনা রোহিঙ্গারা।
এদিকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এইচআইভি বা এইডস রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৪৫জনে। ওই ২৪৫ জন আক্রান্তের মধ্যে নারী ১২৪, পুরুষ ৮৪, ছেলে শিশু ১৯ ও কন্যাশিশু ১৭ জন।
আক্রান্তদের মধ্যে ইতোপূর্বে দুইজন মৃত্যুবরন করেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন চিকিৎসক বলেন, রোহিঙ্গা শিবিরে প্রতিনিয়ত এইডস রোগী পাওয়া যাচ্ছে। বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া ১১লক্ষাধিক রোহিঙ্গার মধ্যে এইচআইভি বা এইডস নিয়ে বসবাসকারী রোহিঙ্গার সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি। এইচআইভি বা এইডস রোগীর শনাক্ত হওয়া রোহিঙ্গাদের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় তেমন সমস্যা হচ্ছে না। বিশেষ ব্যবস্থায় তাদের চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

পাঠকের মতামত

উখিয়াবাসীর স্বপ্ন পূরণ করতে চাই – জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরীর বিবৃতি

গণমাধ্যমে প্রকাশিত একটি সংবাদের প্রেক্ষাপটে নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে বিবৃতি দিয়েছেন উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ...