
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ শাহজাহান বলেছেন, ৫ আগষ্ট গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য তারুণ্যের শক্তিসহ গোটা জাতি আজ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। ন্যায়ভিত্তিক নিরাপদ বাংলাদেশ গড়তে দাঁড়িপাল্লাকে ‘হ্যাঁ’ বলুন।দুর্নীতি, লুটপাট ও সন্ত্রাসমুক্ত নতুন ধারার বাংলাদেশ গঠনে সৎ, নির্লোভ ও মেধাবী নেতৃত্ব দিয়ে জাতীয় সংসদকে নতুনভাবে সাজাতে হবে। জামায়াতে ইসলামী সে লক্ষ্যেই এবারের জাতীয় নির্বাচনে গণমানুষের ভালোবাসাসহ ব্যপক সমর্থন আশা করছে। এরই প্রেক্ষিতে দেশব্যাপী দাঁড়িপাল্লার যে গণজোয়ার উঠেছে তারই ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রাম-১৪ আসনেও বিজয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়লে বিপুল ভোটে দাঁড়িপাল্লার বিজয় হবে, ইনশাআল্লাহ।
২৬ অক্টোবর (সোমবার) সন্ধ্যা ৬.০০ টায় নগরীর সাফা আর্কেড ক্লাবে চট্টগ্রাম-১৪ আসনের শহরে অবস্থানরত জনশক্তিদের নিয়ে অনুষ্ঠিত নির্বাচনী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আসন পরিচালক ও জেলা জামায়াতের সাংগঠনিক সেক্রেটারি মাওলানা নুরুল হোসাইন এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত নির্বাচনী সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন আইআইইউসি’র ভাইস চ্যান্সেলর ও চন্দনাইশের কৃতি সন্তান প্রাণিবিজ্ঞানী প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আলী আজাদী, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও অঞ্চল টীম সদস্য জনাব জাফর সাদেক, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগরী আমীর পরিবেশবিজ্ঞানী মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আমীর আনোয়ারুল আলম চৌধুরী, বিশিষ্ট চক্ষু বিশেষজ্ঞ ও জামায়াতের মনোনীত এমপি প্রার্থী ডাঃ মোঃ শাহাদাৎ হোসেন।
চন্দনাইশ উপজেলার সেক্রেটারি আহসান সাদেক পারভেজ ও উত্তর সাতকানিয়া থানার সেক্রেটারি মুহাম্মদ ইলিয়াছের যৌথ সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন জেলা সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মাওলানা বদরুল হক, জেলা এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মুহাম্মদ জাকারিয়া, শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদ সদস্য শহীদুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদ সদস্য ও জেলা সভাপতি আসিফুল্লাহ মুহাম্মদ আরমান, জেলা জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা কামাল উদ্দীন, সাবেক কর্মপরিষদ সদস্য মুহাম্মদ সাইফুদ্দীন, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন চট্টগ্রাম মহানগরীর সেক্রেটারি আবু তালেব চৌধুরী, এ্যাপেলো ইম্পেরিয়াল হাসপাতালের নিউরোলজি সিনিয়র কনসালটেন্ট ডাঃ নাজিম উদ্দীন, ইন্ডাস্ট্রিয়াল এন্ড বিজনেস ফোরামের জেলা সভাপতি ও সাতকানিয়া উপজেলার সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ইব্রাহীম চৌধুরী, যুব বিভাগের জেলা সেক্রেটারি শাহাদাত হোসাইন, জেলা শুরা সদস্য ডাঃ আবদুল জলিল, মাওলানা আইয়ুব আলী, চন্দনাইশ উপজেলার আমীর মাওলানা কুতুব উদ্দীন, উত্তর সাতকানিয়া থানার আমীর মাষ্টার সিরাজুল ইসলাম, কেরানীহাট শাখার আমীর মুহাম্মদ নাছির উদ্দীন, সাবেক ছাত্রনেতা নাছেরুল্লাহ খান, সাবেক ছাত্রনেতা হারুনুর রশিদ, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা শিবিরের অর্থ সম্পাদক মোকাম্মেল হোসেন, সাইয়েদ আল মাহমুদ, প্রবাসী ব্যবসায়ী নুর মোহাম্মদ, অধ্যাপক আযম খান, মাহফুজুল ইসলাম, শওকত হোসাইন সহ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
প্রধান অতিথি আরও বলেন, সকল জনশক্তি নিজ নিজ কেন্দ্রের দায়িত্ব নিয়ে কাজ শুরু করে দিলে কোন ভোটার বাদ যাবে না। সকল ভোটারের সাথে সাক্ষাত করে দাঁড়িপাল্লার ম্যাসেজ পৌঁছিয়ে দিতে হবে। সকল ভোট কেন্দ্রকে টার্গেট করে গণহারে দাঁড়িপাল্লা ঝুলিয়ে দিয়ে গণজোয়ার অব্যাহত রাখতে হবে। আমাদের টার্গেট নির্ধারণ করে প্রতি ভোটারের দ্বারে দ্বারে পৌঁছাতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ইসলামী কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার জন্য রাসুলুল্লাহ যেভাবে দিনরাত পরিশ্রম করেছেন। ঠিক তেমনিভাবে সকল জনশক্তিকে দিনরাত পরিশ্রম করে দাঁড়িপাল্লার বিজয় নিশ্চিত করতে হবে। জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতৃবৃন্দের শাহাদাতের বিনিময়ে আজ সারা বাংলাদেশে ইসলামের গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। ইতিমধ্যে ডাকসু, জাকসু, রাকসু, চাকসু সব নির্বাচনে ইসলামের শক্তির বিজয়ে তা প্রমাণ করে দিয়েছে, আগামীর বাংলাদেশ ইসলামের বাংলাদেশ। আজকের গণজাগরণ ইসলামের বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে কড়াঘাত করছে। ইনশাআল্লাহ আগামী সংসদ নির্বাচনে বিপুল ভোটে দাঁড়িপাল্লার বিজয় হবে।
কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আরও বলেন, দেশের জনগণ শুধু ক্ষমতার পালাবদল চায় না। ৫ আগষ্টের পর দেশে একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন লক্ষণীয়। জনগণ মূলতঃ একটি শোষণমুক্ত সমাজ বিনির্মাণ করতে চায়। তাই আগামীতে ইসলামী শক্তির বিজয় কোন দল বা গোষ্ঠী ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না, ইনশাআল্লাহ।
তিনি পাঁচ দফা দাবী নিয়ে তিনি বলেন, গণভোট জনগণের বড় অংশের প্রত্যাশা। গণভোটের মাধ্যমে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি বা মর্যাদা দিতে হবে। কিন্তু বড় দল হয়ে গণভোটে ভয় পায়। গণভোটে কেন ভয় পাচ্ছে, তা জনগণ বুঝতে পেরেছে। মুলা ঝুলিয়ে জনগণকে আর কোন প্রতারণা করা যাবে না। জনগণ একটি বিরাট পরিবর্তনের আশা নিয়ে জামায়াতের পক্ষে দাঁড়িয়েছে। ইনশাআল্লাহ আল্লাহ বিজয় দিতে চাইলে কোন পরাশক্তি এবিজয় ঠেকাতে পারবে না। আল্লাহ আমাদের ত্যাগকে কবুল করে ইসলামের বিজয় দান করবেন।
প্রানিবিজ্ঞানী প্রফেসর ড. আলী আজাদী বলেন, আল্লাহ তাআলা ৫ আগষ্ট আমাদের জন্য নিয়ামত দিয়ে পাঠিয়েছেন। আল্লাহ কখন কাকে বিজয় দান করবেন তা কেউ বলতে পারে না। তাই অতীতের ন্যায় আল্লাহর ভয় নিয়ে জনগণের সেবাই নিয়োজিত থাকতে হবে। আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করে মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারলে, মানুষকে আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠার কাজে সম্পৃক্ত করালে আমাদের বিজয় হবে, ইনশাআল্লাহ।
বিশেষ অতিথি বক্তব্যে জাফর সাদেক বলেন, আওয়ামী ফ্যাসিস্ট বিদায়ের পর নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে জনগণ বদ্ধপরিকর। অতীতের কোন সরকার থেকে শোষণমুক্ত ছিলো না। তাই জনগণ ইসলামী শক্তিকে বিজয় করতে চায়। জামায়াতের দাঁড়িপাল্লার পক্ষে সারাদেশে গণজোয়ার উঠেছে। চট্টগ্রাম-১৪ তথা শঙ্খ নদীর দু’কূলেও যেভাবে জোয়ার দেখা যাচ্ছে। দাঁড়িপাল্লার বিজয় নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ময়দানে ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা পালন করতে হবে।
বিশেষ অতিথি বক্তব্যে নগর আমীর বলেন, ডিজিটাল দুনিয়ায় বুদ্ধিবৃত্তিক উপায়ে সকল সামাজিক মাধ্যমকে কাজে লাগাতে হবে। বিজয় নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত শারিরীক পরিশ্রমে কোন বিরতি দেয়া যাবে না। ময়দানে নিয়মিত সময় দিয়ে ভোটারের সমস্যা পূরণে চেষ্টা করতে হবে। নির্বাচনের জন্য খরচ কার কাছ থেকে পাবো তা চিন্তা না করে নিজের অর্থ, সময়, শ্রম দেয়ার পাশাপাশি আল্লাহর কাছে শেষ রাতে হাত তুলে দোয়া করে সাহায্য চাইতে হবে। তাহলেই দাঁড়িপাল্লার বিজয় নিশ্চিত করতে হবে, ইনশাআল্লাহ। তিনি আরও বলেন, প্রেসিডেন্ট শাহাবুদ্দীন খুনি হাসিনার পদত্যাগ নিয়ে টালবাহানা করে গুরুতর অপরাধ করেও কিভাবে ক্ষমতায় বসে থাকে তার আওয়াজ তুলতে হবে। আর অনুপ চেটিয়াকে যেভাবে ভারত ফেরত নিয়েছিল, ঠিক তেমনিভাবে শেখ হাসিনাকেও বাংলাদেশে ফেরত এনে বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
বিশেষ অতিথি বক্তব্যে জেলা আমীর বলেন, আপনাদের আশা আকাংখা প্রতিফলন ঘটাতে নির্বাচনী ময়দানে ঝাপিয়ে পড়তে হবে। শহীদদের রক্ত কখনো বৃথা যেতে পারে না। শহীদের রক্তস্নাত চন্দনাইশ ও সাতকানিয়ার এ ময়দানে সকল ভোটারদের কাছে আমাদের আমীরে জামায়াতের ম্যাসেজ নিয়ে পৌঁছতে হবে। চট্টগ্রাম শহরে নিয়মিত গণসংযোগের মাধ্যমে ডাঃ শাহাদাৎ হোসেন এর দাঁড়িপাল্লার বিজয় নিশ্চিত করতে হবে। আগামী সংসদ নির্বাচনে বিজয়ের মাধ্যমে শহীদদের রক্তের প্রতিশোধ নেয়া হবে। এ বিজয়ের মাধ্যমে এলাকার মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চায়। গরীব দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চায়। স্বপ্ন বাস্তবায়নে ডাঃ শাহাদাৎ ভাইকে বিজয়ের উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি।
বিশেষ অতিথি বক্তব্যে ডাঃ শাহাদাৎ হোসেন বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে আমরা অনেক ছাত্র জনতাকে হারিয়েছি। কিন্তু যে লক্ষ্যে তাদের এ ত্যাগ, তা কি আমরা অর্জন করতে পেরেছি? তাই আগামীতেও ফ্যাসিবাদ নির্মূলে সৎ নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সৎ লোকের শাসন নিশ্চিত করলেই দূর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠন করা সম্ভব। তিনি আরও বলেন, আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে বিগত ২৮ বছর ধরে চন্দনাইশের মানুষ ও সমাজের ছোট ছোট সেবা করে আসছি। এখন জামায়াতে ইসলামীর মাধ্যমে বৃহত্তর পরিসরে সেবা দেয়ার সুযোগ দিয়েছেন। ইনশাআল্লাহ আগামী দিনে চন্দনাইশ সাতকানিয়ার সকল মানুষের সেবা নিশ্চিত করতে নিজেকে উৎসর্গ করছি। আপনারা আমাকে কথা দিয়ে, পরামর্শ দিয়ে সর্বোপরি সাধারণ জনগণের ভোট চেয়ে সেবা করার সুযোগ দান করবেন এই প্রত্যাশা রাখছি। বিজয় আমাদের হবে, ইনশাআল্লাহ।
জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মাওলানা বদরুল হক বলেন, চট্টগ্রাম-১৪ এর পাশেই ঐতিহ্যবাহী সাতকানিয়া লোহাগাড়া। বারবার বিজয়ী লোহাগাড়া- সাতকানিয়ার সকল অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সকল ভোটারদের মন জয় করে চন্দনাইশেও দাঁড়িপাল্লার বিজয় নিশ্চিত করা হবে, ইনশাআল্লাহ।
শিবিরের জেলা সভাপতি আসিফুল্লাহ আরমান বলেন, ১৯৮৯ সালে দোহাজারীর দুই শহীদের রক্ত দিয়ে বীজ বুনেছিলাম। আজ তা ফুলে ফলে সুশোভিত হয়ে বিজয়ের দ্বারপান্তে এসে পৌঁছেছে। তাই আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে চন্দনাইশ ও সাতকানিয়ার সকল জনশক্তি তাদের পরিবার, আত্মীয় স্বজন ও সমাজের ভোটারদের কাছে পৌঁছাতে পারি, তবে আমাদের দাঁড়িপাল্লার বিজয় নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
সভাপতির বক্তব্যে নুরুল হোসাইন বলেন, হাজারো ব্যস্ততার মাঝে নির্বাচনের জন্য সময় দিয়ে গণজোয়ারকে বিজয়ে পরিণত করতে আপনাদের ঐকান্তিক সহযোগিতা কামনা করছি। আশা করি আগামী নির্বাচনে বিজয়ের মাধ্যমে ইতিবাচক প্রতিফলন ঘটবে ইনশাআল্লাহ।

পাঠকের মতামত