
উখিয়া নিউজ ডেস্ক:
মধ্য নভেম্বরে শুরু হতে যাওয়া প্রতীক্ষিত প্রত্যাবাসনের প্রথম ব্যাচে মিয়ানমারের সম্মতি পাওয়া ৪৮৫ পরিবারের ২ হাজার ২৬০ জন রোহিঙ্গা রাখাইনে ফিরছেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার সফররত ডেনমার্কের উন্নয়ন সহায়তা বিষয়ক মন্ত্রী উলা টরনেস এবং ডব্লিউএফপি’র নির্বাহী পরিচালক বিসলের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এ তথ্য প্রকাশ করেন। চীনের মধ্যস্থতায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া দ্রুততর করার চেষ্টায় রয়েছে বাংলাদেশ। গত মঙ্গলবার ঢাকায় বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যকার জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে মধ্য নভেম্বরে রোহিঙ্গাদের প্রথম ব্যাচ পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু সেই সময় জানানো হয়নি প্রথম ব্যাচে কত রোহিঙ্গা ফিরছেন? গতকাল ডেনিশ মন্ত্রী এবং ডব্লিউএফবি’র প্রধান নির্বাহী প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার সরকারি বাসভবনে দেখা করতে যান। সেখানে সরকার প্রধান প্রত্যাবাসনের দ্বিপক্ষীয় আয়োজনের বিস্তারিত তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম এ নিয়ে গণমাধ্যমকে ব্রিফ করেন। জানান, ডেনিশ মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রসঙ্গটিও উঠে আসে।
প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার বিস্তারিত তুলে ধরেছেন প্রধানমন্ত্রী:
ডেনিশ মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মিয়ানমার তার নাগরিকদের ফেরত নিতে সম্মত হওয়ায় রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া খুব শিগগিরই শুরু হচ্ছে। প্রথম পর্যায়ে ৪৮৫টি পরিবারের ২ হাজার ২৬০ জন রোহিঙ্গা নিজ দেশে ফিরে যাবেন। শেখ হাসিনা প্রত্যাবাসনের পরও রোহিঙ্গাদের জন্য সহায়তা অব্যাহত রাখতে ডেনিশ সরকার এবং ডব্লিউএফপি-এর প্রতি অনুরোধ জানান। প্রধানমন্ত্রী মিয়ানমারের বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের জন্য অস্থায়ী আশ্রয়, স্বাস্থ্যসেবা এবং শিক্ষার জন্য তার সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরেন। বলেন, ক্যাম্পে প্রায় ১ হাজার ৬শ’টি স্কুল নির্মাণ করা হয় এবং তাতে ছেলে-মেয়েদের পাঠদানের জন্য শিক্ষিত রোহিঙ্গাদের নিয়োগ করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতে ডেনিশ মন্ত্রী ও ডব্লিউএফপির নির্বাহী উভয়ে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন এবং এ দেশে তাদের অবস্থানকালে বাংলাদেশকে সহায়তা অব্যাহত রাখার আশ্বাস পুনর্ব্যক্ত করেন। বিপুলসংখ্যক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় এবং তাদের জন্য খাদ্য ও স্বাস্থ্যসেবা এবং শিশু সন্তানদের শিক্ষার ব্যবস্থা করায় বাংলাদেশ সরকারের প্রশংসা করেন।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন, তাদের অভিনন্দন জানিয়ে ডেনিশ মন্ত্রী বলেন, ‘বিপুলসংখ্যক জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দেয়া বাস্তবিকভাবেই একটি বিরাট চ্যালেঞ্জ।’ ডেনিশ মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী ভাসানচরের উন্নয়ন এবং রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের বিষয়েও কথা বলেন। শেখ হাসিনা বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিষয়টি মাথায় রেখে তার সরকার বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের জন্য ভাসানচর নামক এলাকায় ‘ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র’ নির্মাণের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তারা সেখানে নিরাপদ ও ভালো অবস্থায় বসবাস করতে পারবে। ওই আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণের জন্য বাংলাদেশ নৌবাহিনী এবং প্রায় ৭ হাজার শ্রমিক কাজ করছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের পর ওইসব আশ্রয় কেন্দ্র দেশের মানুষের জন্য ব্যবহার করা হবে। প্রধানমন্ত্রী কক্সবাজারে ব্যাপকসংখ্যক রোহিঙ্গার আশ্রয়দানের ফলে স্থানীয় জনগণের দুর্ভোগের কথা তুলে ধরে বলেন, মিয়ানমারের নাগরিকরা স্থানীয় অধিবাসীদের চাষাবাদের জমি ব্যবহার করায় সরকার স্থানীয় জনগণকে বিভিন্নভাবে সাহায্য করেছে। এ সংকটে বাংলাদেশকে অব্যাহত সমর্থন এবং তাদের (রোহিঙ্গা) মানবিক সহায়তা প্রদান করায় প্রধানমন্ত্রী ডেনমার্ক সরকারকে ধন্যবাদ জানান। তিনি এই সংকটে টেকসই সমাধানে অব্যাহত মনোযোগ দেয়ায় ডব্লিউএফপিকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
পাঠকের মতামত