প্রকাশিত: ৩০/১১/২০১৬ ৯:১৬ এএম

ডেস্ক রিপোর্ট ::

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনা অভিযানের নামে রোহিঙ্গাদের ওপর অমানবিক নির্যাতন, অত্যাচার, হত্যা ও বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগের ঘটনা দিন দিন বাড়ছে বলে অভিযোগ করেছেন সেখান থেকে আসা রোহিঙ্গারা। এ অবস্থায় কক্সবাজারের টেকনাফ-উখিয়া সীমান্ত এলাকা দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। বিজিবির নানা ব্যবস্থা সত্ত্বেও সীমান্ত এলাকায় দালালদের তৎপরতা বেড়ে গেছে বলে জানা গেছে। বাংলাদেশে প্রবেশের বিনিময়ে প্রত্যেক রোহিঙ্গা নাগরিক দালালকে দুই হাজার থেকে দুই হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত পরিশোধ করছে। শুধু গতকালই অন্তত আরও দুই হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে বলে অনুপ্রবেশকারী কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।

এরই মধ্যে গত সোমবার রাত থেকে গতকাল মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত দুই সীমান্ত উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা ৩৭ রোহিঙ্গা এবং রোহিঙ্গাদের বহনকারী সাতটি নৌকা মিয়ানমারে ফেরত দিয়েছে। ফলে দেখা যায়, রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ও তাদের ফেরতের পরিমাণ দুটিই বেড়েছে।

টেকনাফের লেদা রোহিঙ্গা বস্তির সভাপতি দুদু মিয়া আমাদের সময়কে বলেন, মিয়ারমারে সেনাদের অভিযানের নামে নারী, পুরুষ ও শিশুদের অত্যাচার, খুন ও বাসাবাড়িতে অগ্নিসংযোগে ঘটনায় গতকাল সকাল পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে প্রায় এক হাজার ২০০ মিয়ানমার রোহিঙ্গা নাগরিক অনুপ্রবেশ করেছে। এর মধ্যে প্রায় ৩০০ জন লেদা রোহিঙ্গা বস্তিতে আশ্রয় নিয়েছেন। বাকিরা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে আশ্রয় নিয়েছেন। গতকাল সকালে মিয়ানমারের মংডু এলাকার চালিপাড়া থেকে অনুপ্রবেশকারী আলী আহমদ এ প্রতিবেদককে জানান, রাতের আঁধারে অন্তত দুই থেকে তিন হাজার রোহিঙ্গা টেকনাফে অনুপ্রবেশ করেছে। তবে গতকাল ঠিক কতজন রোহিঙ্গা টেকনাফ ও উখিয়ায় অনুপ্রবেশ করেছে, তার সঠিক কোনো তথ্য সংশ্লিষ্ট কেউই বলতে পারেননি।

গতকাল তিনটি নৌকায় করে নাফ নদীর মোচনি পয়েন্ট দিয়ে আসা শতাধিক রোহিঙ্গা শিশু, নারী ও পুরুষ অনুপ্রবেশ করে। তারা সবাই লেদা বস্তিতে অবস্থান নিয়েছেন বলে জানান অনুপ্রবেশকারী আনোয়ারা বেগম, জুলেখা বেগম ও নূর কামাল।

জুলেখা বেগম জানান, গত ১৯ দিন ধরে তিনি মিয়ানমার সীমান্তে লুকিয়ে ছিলেন। পরিবারের ৯ সদস্যের মধ্যে তিনজনের কোনো খোঁজ না পেয়ে গতকাল টেকনাফের ঝিমংখালী এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেন। তারা জানান, এপারে আসার অপেক্ষায় সীমান্ত এলাকায় হাজার হাজার রোহিঙ্গা জড়ো হচ্ছে নতুন করে।

রোহিঙ্গা বস্তিতে আসা চালিপাড়ার বাসিন্দা আলী আহমদ জানান, অত্যাচারের মাত্রা দিন দিন বাড়ছে রাখাইন রাজ্যে। নারীদের ধর্ষণ, শিশুদের আগুনে নিক্ষেপ ও পুরুষদের গুলি এবং গলা কেটে হত্যা করা হচ্ছে। নাফ নদীতে অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় প্রচুর ভাসমান নৌকা রয়েছে।

সরেজমিন টেকনাফের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মিয়ানমারে বিভিন্ন গ্রামে সেনাবাহিনীর হামলা পর গতকাল সবচেয়ে বেশি রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা লেদা ক্যাম্পের পাশাপাশি টেকনাফের হ্নীলার দমদমিয়া, মোচনি, লেচুয়াপ্রাং, ফুলের ডেইল, জাদিমুরা, নাটমোরাপাড়া, আলীখালী, রঙ্গিখালী, নয়াপাড়া, সিকদারপাড়া, কানজরপাড়া, মিনাবাজার, ঝিমংখালী ও উলবনিয়া এলাকার আত্মীয়স্বজনদের বাসাবাড়ির পাশাপাশি ভাড়া বাসাতে অবস্থান করছেন।

অন্যদিকে গত সোমবার রাত ১০টা থেকে গতকাল সকাল ৭টা পর্যন্ত দুই সীমান্ত উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা ৩৭ রোহিঙ্গা এবং ছয়টি নৌকায় থাকা রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরত যেতে বাধ্য করেছেন।

উখিয়া সীমান্তের দায়িত্বে থাকা কক্সবাজার ৩৪ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ইমরান উল্লাহ সরকার বলেন, আজ সকাল পর্যন্ত উখিয়ার পালংখালী ও রেজুখাল এলাকা দিয়ে অনুপ্রবেশের সময় ১৩ শিশু, ১৪ নারী, ১০ পুরুষসহ ৩৭ জন রোহিঙ্গাকে আটক করে নিজ দেশে ফিরতে বাধ্য করা হয়। তিনি বলেন, অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে বিজিবির তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।

টেকনাফ ২ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল আবুজার আল জাহিদ জানান, সোমবার রাত ১০টা থেকে আজ সকাল ৬টা পর্যন্ত টেকনাফের ঝিমংখালী, মোচনি, লেদা ও দমদমিয়া সীমান্ত এলাকা দিয়ে ছয়টি নৌকায় করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের চেষ্টা করে। প্রতিটিতে ১৮-২০ জন ছিল। সব কটি নৌকাকে মিয়ানমারের ফেরত যেতে বাধ্য করা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, ৬৩ কিলোমিটার জলপথে বিজিবির একার পক্ষে শতভাগ নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব নয়। কিছু কিছু এলাকা দিয়ে রাতের আঁধারে বিজিবির সদস্যদের চোখে ফাঁকি দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করছে বলে শুনেছি।

নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত দিয়েও ঢুকছেন রোহিঙ্গারা

ঘুমধুম সীমান্ত থেকে ফিরে বান্দরবান প্রতিনিধি আলাউদ্দিন শাহরিয়ার জানান, নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিনই নানা কৌশলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ফাঁকি দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকছেন রোহিঙ্গারা। সীমান্ত অঞ্চলে অবৈধ অনুপ্রবেশে রোহিঙ্গাদের উদ্বুদ্ধ করছে দালালচক্র এবং অনুপ্রবেশকারী আত্মীয়স্বজনরা।

 

জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয়সূত্র জানায়, মিয়ানমারের সঙ্গে বান্দরবান জেলার প্রায় ১৮৮ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকা রয়েছে। সীমান্তের ঘুমধুম, তুমব্রু, বাইশফাঁড়ি, আশারতলী সীমান্তসহ বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে প্রতিদিনই কাঁটাতারের বেড়া পেরিয়ে বিচ্ছিন্নভাবে অনুপ্রবেশ করছেন রোহিঙ্গারা। যদিও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে নিরাপত্তাব্যবস্থা বাড়িয়েছে বিজিবি। অনুপ্রবেশকারীদের আটক করে পুশব্যাকও করছে বিজিবি।

পাঠকের মতামত

কক্সবাজারে বায়ুবিদ্যুৎকেন্দ্র চালু, দৈনিক উৎপাদন ৩০ মেগাওয়াট

কক্সবাজার সদর উপজেলার বাঁকখালী নদীর খুরুশকুল উপকূলে বায়ুবিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হয়েছেছবি: প্রথম আলো কক্সবাজার সদর উপজেলার ...

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে টার্গেট কিলিং!

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে চলছে ‘টার্গেট কিলিং’। ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তার, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ কর্মকাণ্ড ...

জান্নাতুলকে খুনের কথা আদালতে স্বীকার করলেন কক্সবাজারের রেজা

রাজধানীর পান্থপথে আবাসিক হোটেলে চিকিৎসক জান্নাতুল নাঈম সিদ্দিকা হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন ...

খাদ্য সংকটে সেন্টমার্টিন

হেলাল উদ্দিন সাগর :: বৈরী আবহাওয়ার কারণে গত এক সপ্তাহ ধরে দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন ...