
সিলেট: ত্রাণ না পাওয়ার কথা টেলিভিশনে বলায় এক ব্যক্তিকে প্রকাশ্যে কান টেনে ধরে হাত জোড় করে ক্ষমা চাওয়ানো হয়েছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগের এক নেতা ওই ব্যক্তির কান টেনে ধরেন। সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার দাউদপুর ইউনিয়ন পরিষদে গত বৃহস্পতিবার এ ঘটনা ঘটে।
কান ধরে ক্ষমা চাওয়া ওই ব্যক্তি দাউদপুর ইউপির ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ইনাতআলীপুর গ্রামের লুৎফুর রহমান ওরফে লকুস মিয়া। তার কান ধরে মাফ চাওয়ার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় তোলপাড়। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে ওই আওয়ামী লীগ নেতার শাস্তি দাবি করেছেন অনেকে। সেই সাথে ওই ঘটনায় জড়িত অন্যদের শাস্তির দাবিও উঠেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
দাউদপুর ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার দুপুরে বন্যাকবলিত এলাকাবাসীদের নিয়ে একটি সুধী সমাবেশের আয়োজন করা হয়। ওই সমাবেশে দক্ষিণ সুরমা উপজেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তাও উপস্থিত ছিলেন।
ওই দিন একটি বেসরকারি টেলিভিশনের সাংবাদিককে লুৎফুর রহমান ত্রাণ পাননি বলে অভিযোগ করেন। এ কারণে ওয়ার্ড সদস্যসহ স্থানীয় লোকজন সুধী সমাবেশে লুৎফুরকে হাজির করেন।
পরে দেখা যায়, ইউনিয়ন পরিষদের ত্রাণ নেওয়ার তালিকায় তার নাম আছে। এ নিয়ে সমাবেশে লুৎফুরকে নিয়ে টানাহেঁচড়া শুরু হয়। একপর্যায়ে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আবদুল বাছিত ওরফে বাবুল তার কান টেনে ধরেন। এ সময় লুৎফুর হাত জোড় করে সবার সামনে ক্ষমা চান।
এ বিষয়ে রোববার দাউদপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি এইচ এম খলিল বলেন, ছবিটি আসলে ভুল বার্তা দিয়ে প্রচার করা হয়েছে। ত্রাণ পেয়েও ত্রাণ না পাওয়ার অভিযোগ শুনে সমাবেশে উপস্থিত সবাই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তখন এ পরিস্থিতিতে লুৎফুরকে তার আত্মীয়রা সমাবেশে হাজির করেন। তিনি হাত জোড় করে মাফ চাওয়ার পর পরিস্থিতি শান্ত হয়।
কান ধরা প্রসঙ্গে খলিল বলেন, এ কাজ ব্যক্তিগতভাবে করা। যিনি কান টেনে ধরেছিলেন, তিনি লুৎফুরের এলাকার মানুষ।
লুৎফুরের কান টেনে ধরা আবদুল বাছিত বাবুল বলেন, ‘আফনারা সত্য ঘটনা খোঁজ নিয়া দেখউকা, আমি তারে বাঁচাইবার লাগি হালকাভাবে কান ধরছি। লুৎফুরের এই নিয়া কোনো অভিযোগ নাই।’
তবে, ওই দিন সমাবেশে উপস্থিত প্রত্যক্ষদর্শী অনেকে জানিয়েছেন, লুৎফুরকে জোর করে সমাবেশে হাজির করা হয়। টানাহেঁচড়া করে কান ধরাতে বাধ্য করা হয়। এ সময় উপজেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা শফিকুর রহমান ঘটনা প্রত্যক্ষ করে দ্রুত সমাবেশস্থল ত্যাগ করেন।
অবশ্য ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা শফিকুর রহমান দাবি করেন, তিনি এ ঘটনাটি পরে শুনেছেন। ঘটনা ঘটার আগে তিনি সেখান থেকে চলে গেছেন।
দক্ষিণ সুরমা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাহেদ মোস্তফা বিকেলে বলেন, ‘প্রথম কথা হচ্ছে, যেভাবে তাকে কান ধরা হয়েছে, মাফ চাওয়ানো হয়েছে, সেটা অন্যায় হয়েছে। আমি সমর্থন করি না।’
ইউএনও আরও জানান, অভিযোগ পেলে প্রশাসন এ বিষয়টি তদন্ত করে দেখবে।
পাঠকের মতামত