ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: ২৩/১১/২০২২ ৯:৫৩ পিএম

চট্টগ্রামের পটিয়ার মজ্জারটেক এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতায় ছয়টি পণ্যবাহী ট্রাক রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ তুলে জব্দ করেছিলেন। কিন্তু এই ঘটনাকে ঘটনাকে কেন্দ্র করে পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র মিয়ানমার থেকে আমদানি করা আচার ও সুপারি কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দর থেকে সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছেন শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ। এতে করে ব্যবসায়ীদের অতিরিক্ত বন্দর চার্জের পাশাপাশি আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন আমদানি কারকেরা।

ব্যবসায়ীদের দাবি, টেকনাফ স্থলবন্দর থেকে প্রায় আড়াইশো কিলোমিটার দূরে রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ তুলে ছয়টি ট্রাকের মালামাল জব্দ করে কাস্টমস শুল্ক গোয়েন্দা। মিয়ানমার থেকে আমদানি করা পণ্য সামগ্রী প্রতিদিনের জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষকে অতিরিক্ত চার্জ গুনতে হচ্ছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের এ অতিরিক্ত চার্জের বোঝার দায়ভার কে নেবে প্রশ্নই একটাই। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মিয়ানমার থেকে আমদানি করা হিমায়িত মাছ ও আধাসহ পচনশীল পণ্য সামগ্রী টেকনাফ স্থল বন্দর দিয়ে আমদানি কমে গেছে।
স্থল বন্দর সূত্রে জানা গেছে, গত ১৩ নভেম্বর মো. কামাল হোসেন রাজস্ব কর্মকর্তা (চ দ) কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত সার্কেল টেকনাফ স্বাক্ষরিত
মহাব্যবস্থাপক ইউনাইটেড ল্যান্ড পোর্ট টেকনাফ লিমিটেডকে Pickle, Plum Pickle নামীয় পণ্যচালান ছাড় না করণ!
টেকনাফ স্থল বন্দর স্টেশন নিয়ে Pickle (আচার) এবং Plum Pickle (বরই আচার) বর্ণনার পরসমূহের বিষয়ে অত্র দপ্তরের গোপন সংবাদ রয়েছে। এ বিষয়ে কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে অনুসন্ধান ও বিশ্লেষণ কার্যক্রম চলমান। তাই রাজস্ব সুরক্ষার স্বার্থে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত Pickle এবং Plum Pickle কোনো পণচালাन ছাড় না করার জন্য অনুরোধ করা হইল।
এদিকে, এই নির্দেশনা পাওয়ার পর থেকে গত ১৫ নভেম্বর থেকে ২২ শে নভেম্বর পর্যন্ত মিয়ানমার থেকে আমদানি করা সুপারি ও আচার দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে করে বন্দরের হাউজে মালামাল স্তূপে পরিণত হয়েছে। অন্যদিকে, সরবরাহ বন্ধ রাখায় প্রতিবস্তায় দৈনিক চার্জ গুনতে হচ্ছে। এতে করে বেকায় পড়েছেন ব্যবসায়ীরা।
নাম প্রকাশ না করা সত্ত্বে কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, যেসব ট্রাক চট্টগ্রামের পটিয়ায় জব্দ করা হয়েছে তার মধ্যে দুটি টেকনাফ স্থলবন্দর থেকে ছেড়ে গেলেও আরও চারটি ট্রাকের বিষয়ে কোনো ধরনের নিশ্চিত না হয়ে টেকনাফ বন্দরের ওপর চালানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। শুল্ক ফাঁকে দিয়ে থাকলে জব্দ করা আমদানি কারক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। ওই বিষয়কে কেন্দ্র করে মিয়ানমার থেকে আমদানি করা আচার ও সুপারি সরবরাহ বন্ধ করা হয়েছে। এতে করে হিমায়িত মাছ-আদাসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য সামগ্রী আমদানি কমিয়ে দিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কাস্টমস কর্মকর্তা বলেন, কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করে ব্যবসায়ীরা পণ্য আমদানি করা আসছে। মিয়ানমার থেকে আনা সুপারি ও আচারের ঘোষণা পত্রের মাধ্যমে রাজস্ব আদায়ের পর স্থল বন্দরের গেইট পাস নিয়ে পণ্যবাহী ট্রাক চট্টগ্রাম-ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। বন্দর এলাকার পাঁচ কিলোমিটারের বাহিরে চলে গেলে এখানে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের করার কিছু থাকে না। এ সড়কপথে যাবার সময় তিনটি বিজিবি ও একটি কাস্টমসের তল্লাশি চৌকি রয়েছে এসব কিভাবে পাড় হলেন।
অভিযোগ রয়েছে, উখিয়ার পালংখালী, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু ও লামার বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে মিয়ানমার থেকে ওইসব পণ্য বাংলাদেশে পাচার হয়ে আসছে। সেসব পণ্য ট্রাক ভর্তি করে চট্টগ্রাম -ঢাকা নেওয়া হলে সেসব পণ্য টেকনাফ স্থলবন্দর থেকে গেছে বলে প্রচারের কোনো সুযোগ নেই।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে টেকনাফ শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তা মোঃ কামাল হোসেন বলেন, সম্প্রতি রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগকে কেন্দ্র করে টেকনাফ বন্দর কর্তৃপক্ষকে ওইসব পণ্য সরবরাহ বন্ধ রাখা জন্য একটি চিঠি দেওয়া হয়েছিল।

স্থলবন্দরের কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে মালামাল বন্দর থেকে বাহির করার কোনো সুযোগ নেই। কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে পারলে কিছু টাকার জন্য কি কেহ চোর উপাধি নেবে। এটি শুধু ব্যবসায়ী হয়রানি। এরমধ্যে গতকাল মঙ্গলবার রাতে ২১০বস্তার সুপারি ভর্তির একটি ট্রাক ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে গত ১৫ থেকে ২২তারিখ পর্যন্ত আটদিনের দৈনিক ট্রাক ভাড়া দুই হাজার টাকা করে কে দেবে ?
তারা আরও বলেন, ওইদিন কক্সবাজার থেকে সিলেটগামী একটি আচারের ট্রাক জব্দ করা হয়েছিল। ওই গাড়ির সঙ্গে থাকা চালানে তা উল্লেখ থাকলেও ট্রাকটি জব্দ করে টেকনাফ স্থলবন্দর থেকে ছেড়ে গেছে বলে দাবি করেছে শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ। অথচ ওই ট্রাকটি সেপ্টেম্বর মাসের শুঁটকি নিয়ে স্থলবন্দর থেকে ছেড়ে গিয়েছিল। অদ্যবদি স্থলবন্দরের ভিতরে ঢুকেনি ট্রাকটি। বাহিরে কোন পণ্য নিয়ে যদি ট্রাক জব্দ করা হলে সেগুলো কি টেকনাফ স্থলবন্দরের পন্যতে পরিণত হবে।

অনুসন্ধানের জানা গেছে, গত ১৩ নভেম্বর বিকেলে টেকনাফ স্থলবন্দর থেকে একটি আচার ও একটি সুপারি ভর্তির দুটি ট্রাক টেকনাফ স্থলবন্দর থেকে ছেড়ে যায়। এরমধ্যে ১৪ তারিখ রাতে চট্টগ্রামের পটিয়ার মজ্জারটেক এলাকায় ছয়টি পণ্যবাহী ট্রাক রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ তুলে জব্দ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে এর মধ্যে একটি ট্রাক গত সেপ্টেম্বর মাসে শুটকি ভর্তি করে স্থল বন্দর থেকে ছেড়ে গিয়েছিল।

টেকনাফ স্থল বন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এহতেশামুল হক বাহাদুর বলেন, শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের একটি চিঠির প্রেক্ষিতে গত আটদিন ধরে বন্দর থেকে সারাদেশে আচার ও সুপারির সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে করে ব্যবসায়ীদের অতিরিক্ত চার্জের গুনতে হবে। এর দায়ভার নেবে কে ?

ইউনাইটেড ল্যান্ড পোর্ট লিমিটেড টেকনাফের পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানের মহাব্যবস্থাপক (হিসাব) মোঃ জসিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, শুল্ক গোয়েন্দা নির্দেশনায় গত ১৫ নভেম্বর থেকে আজ ২৩ নভেম্বর দুপুর পর্যন্ত ও সুপারি সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে মিয়ানমার থেকে আশা আচার ও সুপারিগুলো টেকনাফ স্থলবন্দরের গোডাউনে জমা রাখা হয়েছে। এসব পণ্যের প্রতিটনে (প্রথম ১০দিন) দৈনিক ১৭ দশমিক ৫০টাকা করে চার্জ আদায় করা হবে।

পাঠকের মতামত