প্রকাশিত: ০২/০৫/২০১৭ ৬:১২ পিএম

হাফেজ মুহাম্মদ কাশেম, টেকনাফ::
পুলিশী হয়রানীর প্রতিবাদে বিক্ষুদ্ধ জনতা খারাংখালীতে টেকনাফ-কক্সবাজার প্রধান সড়কে খুঁটি ফেলে ও টায়ার পুড়ে সড়ক অবরোধ সৃষ্টি করে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। এতে টেকনাফ-কক্সবাজার প্রধান সড়কে সকাল ৮টা থেকে ৩ ঘন্টা ব্যাপী যানবাহন চলাচল বন্দ থাকে। কতিপয় সুবিধাভোগী সোর্স নামধারী দালালদের ইন্দনে থানা পুলিশের একটি দল বিকাশ ব্যবসায়ী ও মুদি দোকানদার সহোদরের বসত-বাড়িতে ইয়াবা বিরোধী অভিযানের নামে নগদ টাকা ও মহিলাদের ব্যবহৃত স্বর্ণালংকারসহ আটকের প্রতিবাদে খারাংখালী স্টেশনে বিক্ষুদ্ধ জনসাধারণ প্রধান সড়কে খুঁটি ফেলে ও টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়। এতে দূরপাল্লার যাত্রীরা চরম ভোগান্তিতে পড়ার খবর পেয়ে টেকনাফ মডেল থানার ওসি ও বিজিবি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পরিস্থিতি আপাততঃ শান্ত করে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করেন। কিন্তু আটক ব্যবসায়ীদের মুক্তি না হওয়ায় এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। এ ঘটনার সুষ্ঠু সমাধান না হলে আগামীতে বড় ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার আশংকা রয়েছে। জানা যায় ২ মে ভোর রাত ৩টার দিকে টেকনাফের হোয়াইক্যং খারাংখালীতে স্থানীয় কতিপয় চিহ্নিত দালালদের ইন্দনে টেকনাফ মডেল থানার একদল পুলিশ পূর্ব মহেশখালীয়া পাড়ার ঠান্ডা মিয়ার পুত্র বিকাশ ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম (৪০) প্রকাশ ভূলুর বাড়িতে ইয়াবা বিরোধী অভিযানে গিয়ে তল্লাশী চালিয়ে বিকাশ ব্যবসার ১০ লক্ষ টাকাসহ আটক করে। এরপর আটক ব্যক্তির বড় ভাই মুদি দোকানদার আবুল কাশেম প্রকাশ কাছিম সওদাগরের বাড়িতে গিয়ে তল্লাশী চালিয়ে মহিলাদের ব্যবহৃত ৩ ভরি ওজনের স্বর্ণালংকার ও নগদ ৪২ হাজার টাকা নিয়ে আটক করে নিয়ে যায় বলে গৃহবধু হালিমা আক্তার দাবী করেন। দালালের ইন্দনে পুলিশের এই ঘটনার পর স্থানীয় জনসাধারণ ক্ষুদ্ধ হয়ে খারাংখালী ষ্টেশনে টেকনাফ-কক্সবাজার প্রধান সড়কে বৈদ্যুতিক খুঁটি ফেলে গাছপালা কেটে এবং টায়ার জ্বালিয়ে প্রায় ৩ ঘন্টা ব্যাপী অবরোধ সৃষ্টি করে। আতংকে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা দোকান-পাট বন্ধ করে নিরাপদ স্থানে চলে যান। এ ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছলে বিক্ষুদ্ধ জনতা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ ও ধাওয়া করে। তখন পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ফাঁকা গুলি বর্ষণ করে। পরে খবর পেয়ে টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের উপাধিনায়ক মেজর আবু রাসেল ছিদ্দিকী ও ওসি মাঈন উদ্দিন খাঁনের নেতৃত্বে অতিরিক্ত পুলিশ-বিজিবি ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি শান্ত করে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক করে দেন। এরপর স্থানীয় ব্যবসায়ী, জনপ্রতিনিধি ও জনতার সাথে আলাপকালে ভূক্তভোগী পরিবারের লোকজন পুলিশী অভিযানের বর্ণনা দেন। এ ঘটনার সুষ্ঠু সমাধান এবং প্রধান সড়কে ব্যারিকেড সৃষ্টি করে জনদূর্ভোগ সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে আশ্বস্থ করেন ওসি মাঈন উদ্দিন। স্থানীয় মেম্বার জাহেদ হোছাইন বলেন ঘটনার রাত থেকে আমি এলাকার বাইরে রয়েছি। স্থানীয় লোকজন হতে জানতে পারি বিকাশ ও মুদি দোকানদারকে টাকা এবং স্বর্ণালংকারসহ আটক করে নিয়ে যায়। সকালে বিক্ষুদ্ধ জনতা সড়ক অবরোধ সৃষ্টি করার বিষয়টি জানতে পেরে নিষেধ করার পরও জনতা মানেনি। হোয়াইক্যং ইউপি চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মাওঃ নুর আহমদ আনোয়ারী বলেন পুলিশ ও দালালদের যোগসাজশে দীর্ঘ দিনের এই জাতীয় কর্মকান্ড সম্পর্কে একাধিকবার আইন-শৃংখলা সভায় বলা হলেও কোন পদক্ষেপ না থাকায় এ জাতীয় ঘটনার সুত্রপাত। পুলিশ ইয়াবা বিরোধী অভিযানের নামে নিরীহ দুই ব্যবসায়ীদের আটকের জের ধরে জ্বালাও-পোড়াও এবং অবরোধের সৃষ্টি হয়েছে। এঘটনায় জড়িত পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আহবান জানাচ্ছি। অন্যথায় আগামীতে আরো বড় ধরনের সহিংস ঘটনার সুত্রপাত হতে পারে। টেকনাফ মডেল থানার ওসি মোঃ মাঈন উদ্দিন খান সাংবাদিকদের বলেন পুলিশ ২ জন ইয়াবা ব্যবসায়ী আটকের জের ধরে অপর ইয়াবা ব্যবসায়ীরা মিলে সড়ক অবরোধ করেছিল। খবর পেয়ে পুলিশ-বিজিবির বিশেষ টহলদল ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে স্বভাবিক করেন। এলাকার লোকজন জানান ইয়াবা ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন অপরাধীদের নিকট থেকে সুবিধা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে স্থানীয় আব্দুর রহিম ও হাকিম উদ্দিন মিন্টুর যোগসাজশে গত ১ মাসে বিভিন্ন অপরাধী ধরে কোটি টাকার বাণিজ্য করেছে। ২৯ এপ্রিল স্থানীয় মহেশখালীয়া পাড়ার বাছু মিয়ার পুত্র আমির হোছনকে পুলিশ আটক করে। পরে দালালের মধ্যস্থতায় ১০ লক্ষ ৫০ হাজার টাকায় ছেড়ে দেন বলে আমির হোছন দাবী করেন। দুই সপ্তাহ আগে জাফর আলীর পুত্র ইসমাঈলকে আটক করে ৩ লক্ষ টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেন। ৩ সপ্তাহ আগে মৃত মীর কাশেমের পুত্র মোহাম্মদ আলমকে আটক করে ১১ লক্ষ টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তাঁর ভাই জানান। আসল অপরাধীদের টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়া এবং টাকা দিতে না পারলে ইয়াবা দিয়ে চালান দেওয়ার ঘটনাও ঘটছে। এতে মানুষ ক্ষোভে ফুঁসছে। সাধারণ মানুষ ক্ষুদ্ধ হয়ে সড়ক অবরোধ, জ্বালাও-পোড়াওর মত ঘটনার আশ্রয় নিয়েছে বলে মন্তব্য করেন এলাকাবাসী। উল্লেখ্য, পুলিশের এ ধরণের ঘটনা নিয়ে টেকনাফ উপজেলা আইনশৃংখলা বিষয়ক প্রত্যেক সভায় আলোচনা হয়ে থাকে। ইউপি চেয়ারম্যানগণ বিশেষতঃ হ্নীলা ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব এইচকে আনোয়ার জোরালো প্রতিবাদ করেন। –

পাঠকের মতামত

কক্সবাজারে স্বাস্থ্য বিভাগের নিয়োগ, পরীক্ষায় অনুপস্থিত থেকেও উত্তীর্ণ!

কক্সবাজারে স্বাস্থ্য সহকারীসহ বিভিন্ন পদে নিয়োগ পরীক্ষাকে ঘিরে গুরুতর অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। পরীক্ষা ...

দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা যশোরে ৮.৮ ডিগ্রি, টেকনাফে সর্বোচ্চ ৩১

শীতের তীব্রতা বাড়ায় দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে হাড়কাঁপানো ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় যশোরে দেশের ...

১৩ রোহিঙ্গার জন্মনিবন্ধন জালিয়াতি, ইউপি উদ্যোক্তার স্বামী কারাগারে

নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে চেয়ারম্যান ও সদস্যদের ভুয়া সিল–স্বাক্ষর ব্যবহার করে ১৩ জন রোহিঙ্গা নাগরিকের জন্মনিবন্ধন তৈরির ...